এক জোড়া স্যান্ডেল হাতে এক রোহিঙ্গা শিশু। হাজার হাজার শরণার্থীর যে ঢল, তাদের মাঝে শিশুটি দাঁড়িয়ে। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে নিজের আইফোনে তোলা এই একটি শট জসীম আহমেদকে সাঙ্ঘাতিক আলোড়িত করলো। কাকে স্যান্ডেল দেখাচ্ছে শিশুটি? পুরো বিশ্বকে?
‘এ পেয়ার অব স্যান্ডাল’ বা একজোড়া স্যান্ডেল ছবির আইডিয়াটা তখনই তার মাথায় আসে। আর চার মিনিটের এই স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবিটিই তুরস্কের এক আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবির উৎসবে পুরস্কার জিতে নিল।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতা জসীম আহমেদ ছবিটির জন্য তুরস্কের হা-কিস ইন্টারন্যাশনাল শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা পরিচালকের পুরস্কার জিতেছেন। এই উৎসবের আয়োজক ছিল তুরস্কের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং দেশটির সবচেয়ে বড় লেবার ইউনিয়ন।
‘এ পেয়ার অব স্যান্ডাল’ ছবিটি পুরোটাই ধারণ করা হয়েছে আইফোনে, এমনকি এটির এডিটিং পর্যন্ত করা হয়েছে আইফোনের আই-মুভিস অ্যাপ দিয়ে, বলছিলেন জসীম আহমেদ।
“একটা ভালো ছবি করতে গেলে যে অনেক অর্থ খরচ করতে হবে, অনেক উচ্চ মানের ক্যামেরা, যন্ত্রপাতি বা প্রযুক্তির দরকার হবে তা নয়। একটি আন্তর্জাতিক উৎসবে গিয়ে কিভাবে কেবলমাত্র মোবাইল ফোন ব্যবহার করেই ভালো ছবি করা যায়, সেটা জানার সুযোগ হয়েছিল। এবার আমি নিজেও সেই কৌশলটাই কাজে লাগিয়েছি।”
“এখন আসলে ভালো ছবি করতে গেলে টেকনোলজি বা বাজেট কোনটাই আর বাধা নয় যদি একটা ভালো আইডিয়া থাকে।”
পুরস্কার পাওয়ার পর তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা থেকেই টেলিফোনে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জসীম আহমেদ জানিয়েছেন, তার এই ছবির নেপথ্য কাহিনী।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে একটি বড় ক্যানভাসের ফিচার ফিল্ম তৈরির কাজ করছেন জসীম আহমেদ। সেটার জন্যই তিনি গত কয়েক মাস ধরে কক্সবাজার-টেকনাফ চষে বেড়াচ্ছেন।
“প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে শাহপরীর দ্বীপের দিকে যাচ্ছিলাম। শরণার্থী বোঝাই অনেক নৌকা আসছিল। অনেক শিশু এবং নারী ছিল এসব নৌকায়। তখন আইফোনে ধারণ করা একটি ভিডিও পরে ফেসবুকে দেয়ার জন্য আই মুভিস অ্যাপ দিয়ে এডিট করছিলাম। তখন এই স্যান্ডেল হাতে শিশুটির ছবিটি আমাকে খুবই স্ট্রাইক করে। বাচ্চাটি স্যান্ডেল জোড়া হাতে নিয়ে একবার উপরে তাকাচ্ছিল, একবার নিচে তাকাচ্ছিল। আমার তখন মনে হচ্ছিল, ও কি পুরো পৃথিবীকে, মানব সভ্যতাকে স্যান্ডেল দেখাচ্ছে।”
এর পরদিনই জসীম আহমেদ তার আইফোন ব্যবহার করেই ছবিটি তৈরি করতে নেমে পড়লেন। পুরো ছবিতে কেবল শরণার্থীদের ঢল, তাদের দুর্ভোগের ছবিই তুলে ধরা হয়েছে। কোন সংলাপ নেই। ইংরেজি সাবটাইটেলে বর্ণনা করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের কাহিনী।
জসীম আহমেদ এর আগে তার ‘দাগ’ চলচ্চিত্রের জন্যও আলোচনায় এসেছেন। গেল বছর এই ছবিটি পাঠানো হয়েছিল কান চলচ্চিত্র উৎসবে।বিবিসি।