sliderছবি ঘরস্থানীয়

হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গরুর হাল

গোলাম রাব্বানী, নওগাঁ প্রতিনিধিঃ কালের প্রবাহে হারাতে বসেছে আবহমান বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যের স্মারক গরু দিয়ে হালচাষ। মানবসভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে দেশের অন্য অঞ্চলের মত কৃষিনির্ভর জেলা নওগাঁ গ্রামীণ কৃষকের ফসল ফলানোর একমাত্র অবলম্বন ছিল গরু দিয়ে হালচাষ।

বাঙালির হাজার বছরের লালন করা ঐতিহ্য গরু দিয়ে হাল চাষ আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে। বর্তমান যন্ত্রনির্ভর যুগে কৃষকরাও ধুঁকছেন ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলারে জমি চাষাবাদে। হয়তো এই সনাতনী পদ্ধতির হালচাষ একদিন কৃষকের জীবন থেকে উঠে আসবে গল্প, কবিতা, নাটক, সিনেমায়। আধুনিক সমাজে পৌঁছে যাবে শিল্পীর চিত্রকর্মে বইয়ের প্রচ্ছদে প্রচ্ছদে।

স্থানীয় প্রবীণরা জানান, বংশ পরম্পরায় কৃষক পরিবারগুলো কামারের এক টুকরো লোহার ফাল, ছুতার বা কাঠমিস্ত্রির হাতে তৈরি কাঠের লাঙল, জোয়াল আর বাঁশের তৈরি মুটিয়া, ইঁশ, পাতার, গরুর মুখের টোনা (গোমাই) পেন্টি বা গরু শাসনে পাচুনি লাঠি, মই ব্যবহার করে জমি চাষাবাদ করত। হালচাষের জন্য বাণিজ্যিকভাবে গরু-মহিষ পালন করা হতো। মাঠ-প্রান্তরে হরহামেশাই চোখে পড়ত গরু দিয়ে হালচাষ। নিজের সামান্য জমিতে হালচাষের পাশাপাশি জীবিকার উৎস ছিল। এসব চিত্র এখন দেখা যায় না। অত্যাধুনিক যুগে গরু দিয়ে হাল চাষের দেখা মেলে মান্দা উপজেলার কুসুম্বা ইউপি’র চককানু গ্রামের ফসলি জমি চাষাবাদে।

ওই গ্রামের প্রবীণ কৃষক কামাল বলেন, তার জীবনের সিংহভাগ সময় কেটেছে হালচাষ আর গরুর পালের সঙ্গে। সেই দিনগুলো এখন অতীত স্মৃতি। গরু দিয়ে হালচাষের ঊপকারিতা সম্পর্কে বলেন, লাঙলের ফলায় জমি গভীর পর্যন্ত ওলট-পালট হয়ে নিচের পুষ্টিগুণ ওপরে চলে আসে. বায়ু সহজে চলাচলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় ও মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। প্রাকৃতিক চাষাবাদে কেঁচোসহ উপকারী কীটপতঙ্গ ধ্বংস হয় না, জমিতে ঘাস কম হয়, গরুর গোবর জমিতে পড়ে জৈব সারে ফসল ভালো হতো। স্বল্প সময়ে জমি চাষ হলেও জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে।

একই গ্রামের মোঃ নাজিম উদ্দিন মন্ডল বলেন, বুঝ-জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখেছি বাপ-দাদারা ভোরের আকাশে ভেসে আসা আযানের ধ্বনির পর পরই কাঁধে লাঙ্গল-জোয়াল, মই, গরু নিয়ে মাঠে যেত হালচাষের জন্য। সকালে বৌ ঠুনির হাতের এক থালা পান্তা, কাঁচা ও পোড়ানো শুকনো মরিচ, খাঁটি সরিষার তেল, সুটকি, আলুর ভর্তা দিয়ে পাঠালে জমির আইলে বসে আয়েস ভরে খেত। এ ঐতিহবাহী খাবারের সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে গরুর বলদ ও লাঙ্গল দিয়ে হালচাষ।

মানুষ যেভাবে দ্রুত এগিয়ে চলেছে, এতে গ্রামীণ এ ঐতিহ্য ধরে রাখা দুরূহ ব্যাপার। তবুও উপজেলার কিছু কিছু স্থানে কৃষকরা এ ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।

মান্দা উপজেলা কৃষি অফিসার বলেন, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নতুন নতুন প্রযুক্তি নিয়ে এগিয়ে চলছে দেশের কৃষি নির্ভর অর্থনীতি। কম পরিশ্রমে, স্বল্প সময়ে অধিক ফসল ফলাতে মানুষ এখন যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button