জ. ই. আকাশ, হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) : অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) নামের স্থানীয়ভাবে ৪০ দিনের কর্মসূচির আওতায় ২০২১-২২ অর্থবছরের দ্বিতীয় পর্যায়ের ওয়েজ কস্ট এর গৃহিত প্রকল্পের উপকার ভোগী নারী শ্রমিক দিয়ে বিয়াই বাড়ির ব্যক্তিগত রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ছকেল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) ৪০ দিনের কর্মসূচির আওতায় ২০২১-২২ অর্থবছরের দ্বিতীয় পর্যায়ের ওয়েজ কস্ট এর গৃহিত প্রকল্পের তালিকাভুক্ত ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের “মানিকনগর ডিসি রাস্তা হতে ইছামতী নদীর পাড়ে তোতা মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত এবং মান্নানের বাড়ি হতে কাশেমের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত” এই দুটি প্রকল্পের জন্য ৪৮ জন নারী শ্রমিক নিয়োগ করা হয়। উল্লেখিত প্রকল্পের পাশাপাশি ওই নারী শ্রমিক দিয়ে ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বকচর গ্রামের আজমত বিশ্বাসের বাড়ির ব্যক্তিগত রাস্তা নির্মাণের কাজ করান ওই ওয়ার্ডেরই ইউপি সদস্য মো. ছকেল বিশ্বাস।
জানা যায়, আজমত বিশ্বাসের বড় ছেলের সাথে ইউপি সদস্য ছকেল বিশ্বাসের মেয়ের বিয়ে হয়েছে। এই সম্পর্কের জের ধরেই চলতি মাসে প্রথম দিকে ৫ দিন ব্যাপী ৪০ দিনের কর্মসূচির ১৫/২০ জন নারী শ্রমিক দিয়ে আজমত বিশ্বাসের ব্যক্তিগত রাস্তা নির্মাণ করা হয়। ইউপি সদস্যের বিয়াই বাড়ির ব্যক্তিগত রাস্তা নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেশিদের মাঝে কানাঘোঁষা হলেও কেউ মুখ খুলতে সাহস পাইনি। আস্তে আস্তে ঘটনাটি পুরো ওয়ার্ডেই জানাজানি হয় এবং অনেকে মৌখিকভাবে অভিযোগও তোলেন।
সেই অভিযোগের সূত্র ধরেই গত ১৩ জুন (সোমবার) সরেজমিনে অনুসন্ধানে দেখা যায়, বকচর গ্রামে সরকারি রাস্তার সাথে আজমত বিশ্বাসের বাড়ির সংযোগ সড়কের প্রায় ১০০ ফিট দৈর্ঘ্য এবং ৭ফিট প্রস্থ রাস্তাটি মাটি ফেলে নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে এলাকাবাসীর কাছে জানতে চাইলে একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, সরকারি প্রকল্পের নারী শ্রমিক দিয়ে মেম্বার সাহেব তার বিয়াই বাড়ির রাস্তা নির্মাণ করেছেন। ওয়ার্ডে সরকারি অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ ভাঙাচোরা রাস্তা রয়েছে, সেগুলো সংস্কার না করে তিনি তার আত্নীয় বাড়ির রাস্তা নির্মাণ করেছেন।
আজমত বিশ্বাসের প্রতিবেশি রোকনের স্ত্রী সাহিদা বেগম জানান, “এই দেখেন, এই রাস্তাটি কত জায়গায় ভাঙা? এটি সরকারি রাস্তা। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন শতশত মানুষ যাতায়াত করে। এ রাস্তা মেরামত না করে সরকারি শ্রমিক দিয়ে বিয়াই বাড়ির ব্যক্তিগত রাস্তা তৈরি করে দিছে মেম্বার। অথচ এই রাস্তায় কাজ হয় না।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্যের বিয়াই উপকার ভোগী আজমত বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “হ্যাঁ, মেম্বার সাহেব আমার বিয়াই লাগে। আমার বড় ছেলের সাথে তার মেয়ের বিয়ে হয়েছে । এই রাস্তাটি তিনিই করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তার নিজস্ব জায়গা থেকেই মাটি দিয়ে এই রাস্তাটি ঠিক করে দেন। তবে রাস্তাটি আগেরই করা। কিন্তু নিচু ছিল। এছাড়া অনেক জায়গায় ভেঙ্গেও গিয়েছিল। ৮/৯ দিন আগে ৭/৮ জন নারী শ্রমিক তিন দিন কাজ করে আমার এই রাস্তাটি করে দেয়।”
আজমত বিশ্বাসের বাড়ির রাস্তা নির্মাণের ব্যাপারে এই প্রকল্পের উপকার ভোগী নারী শ্রমিক বাহিরচর গ্রামের মোতালেব শিকদারের স্ত্রী নিলুফা বেগম ও একই গ্রামের লুৎফর রহমানের স্ত্রী বিউটি বেগম এবং নারী শ্রমিকদের দলীয় সরদার মৃত আবুল হোসেনের স্ত্রী বাছিয়া বেগমের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান “মেম্বারের বিয়াই আজমত বিশ্বাসের বাড়ির রাস্তায় আমাগো দলের ৮জন টানা ৪ দিন কাজ করছে এবং এক দিন করছে ১৮ জন।”
সকাল ৭টা হতে বেলা ৩টা পর্যন্ত ওই বাড়ির রাস্তার কাজ করা হয়। এ কাজে অতিরিক্তি কোনো টাকা পয়সা পায়নি। ৪০ দিনের সরকারি প্রকল্পের কাজের অংশ হিসেবেই আজমত বিশ্বাসের বাড়ির কাজ করেছেন বলেও জানান তারা।
এই প্রকল্পের সভাপতি ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. সোনামদ্দিন মোল্লা জানান, “৪০ দিনের প্রকল্পের শ্রমিক নিয়ে ছকেল বিশ্বাসের বিয়াই বাড়ির ব্যক্তিগত রাস্তা মেরামতের বিষয়টি আমি জানিনা। কাজ করে থাকলেও আমাকে জানানো হয়নি।”
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য মো. ছকেল বিশ্বাস মুঠোফোনে সত্যতা স্বীকার করে জানান,” আমি চেয়ারম্যানের কাছে বলেই লোক নিয়ে বিয়াই বাড়ির রাস্তায় কাজ করেছি।”
রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, “বিষয়টি আমি জানতাম না। যদি মেম্বার বিয়াই বাড়ির ব্যক্তিগত রাস্তার কাজটি করে থাকে, তবে সে অন্যায় করেছে। এটা যদি বিয়াই বাড়ির ব্যক্তিগত রাস্তা না হয়ে এলাকার সকল জনগণের উপকারার্থে করত, তাহলে ঠিক ছিল। এ বিষয়ে আমি মেম্বারের সাথে কথা বলব।”
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মানিকুজ্জামান জানান, “বিষয়টি আমি জানতাম না। আপনার কাছ থেকেই শুনলাম। সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, “প্রকল্পের তালিকানুযায়ী কাজগুলো সঠিকভাবে হয়েছে কিনা তা আগে তদন্ত করে দেখা হবে। সেই সাথে প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে ব্যক্তিগত রাস্তা মেরামতের বিষয়েও খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”