
মো:শাহাদাত হোসেন মনু,ঝালকাঠি: ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার উত্তরপূর্ব সীমান্তবর্তী মানকিসুন্দর গ্রামজুড়ে বিষখালী নদীর ভয়াবহ ভাঙনে প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে মানুষের বসতভিটা, কৃষিজমি ও স্মৃতিবিজড়িত ভিটেমাটি। ভাটির টানে গত কয়েকদিনের ভাঙনে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে কয়েক একর জমি। বহু বছর ধরে চলমান বিষখালীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম । অথচ এই ভাঙন রোধে নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগ।
মানকি গ্রামের হৃদয়, সোহাগ ও সজল জানান, উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের আওতাধীন মানকিসুন্দর গ্রামটি আজ বিলুপ্ত প্রায় । নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, ফসলের জমি, বিদ্যালয়সহ বহু স্থাপনা। এ গ্রামে এখন মাত্র একটি বাড়ি টিকে আছে সেটিই গ্রামের অস্তিত্বের শেষ চিহ্ন।
এ ছাড়া উপজেলার নাপিতেরহাট ফকিরবাড়ি এলাকার বহু মানুষ ইতোমধ্যে বসতভিটা হারিয়ে গৃহহীন হয়েছেন। খালেক হাওলাদার নামে এক ক্ষতিগ্রস্থ জানান, নদী ভাঙনের ফলে মানকিসুন্দর গ্রামের শত শত পরিবার এখন চরম দুর্ভোগে। অস্থায়ীভাবে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়ের বাড়ি কিংবা অন্যত্র। জীবিকার অনিশ্চয়তায় হতাশ হয়ে পড়েছেন দিনমজুর ও কৃষিজীবীরা।
ইয়াসিন মোল্লা, রাকিব ও আকাশ হাওলাদার জানান, খরস্রোতা বিষখালী নদীর ভাটির টানে প্রতিদিন ভেঙে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। গত কয়েকদিন ধরে মানকি, সুন্দর ও বাদুরতলা এলাকায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। নদী তীরের মানুষ আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন, যে কোনো মুহূর্তে ভিটেমাটি নদীগর্ভে চলে যাওয়ার শঙ্কায়। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, বারবার প্রশাসনকে জানালেও এখনো নদী রক্ষা বাঁধ বা জিও ব্যাগ ফেলার মতো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ফলে তাদের মনে হতাশা আর ক্ষোভ দুটোই বাড়ছে।
মানকিসুন্দর গ্রামের ইকবাল হোসেন নয়ন জানান, মানকিসুন্দর গ্রামের লঞ্চঘাটের রাস্তার পূর্ব পাশ হঠাৎ ভাঙন শুরু হয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে রক্ষা করা না গেলে পুরো রাস্তা ও ঘাট বিলীন হয়ে যাবে। ওই এলাকার শিপন খলিফা জানান, নদীর তীরের মাটি ইট ভাটায় কেটে নিয়ে যাওয়ায় নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মাটি কাটা বন্ধ করতে প্রশাসনের নজর দারি জরুরি।
ক্ষতিগ্রস্থরা জানান, নদীভাঙনে জমি-ঘর সব গেছে, এখন পরিবার নিয়ে কোথায় যাব বুঝতে পারছি না। সরকার যদি কিছু না করে, সামনে হয়তো পুরো মানকিসুন্দর গ্রামটাই নদীতে মিলিয়ে যাবে। স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, অবিলম্বে জরুরি ভিত্তিতে নদী রক্ষা প্রকল্প না নিলে রাজাপুরের মানকিসুন্দর অঞ্চল মানচিত্র থেকেই হারিয়ে যাবে।
ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা বলেন, “ভাঙন-কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে শিগগিরই সরকারের কাছে চাহিদা পাঠাব। আর যতদ্রæত সম্ভব জিও ব্যাগ বা বাঁধ পুনরায় নির্মাণসহ ভাঙন রোধে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করা হবে। স্থায়ী বাধ নির্মানের জন্য অনেক আগেই প্লান পাঠিয়ে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।”
রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিফাত আরা মৌরি জানান, ভাঙন কবলিত জায়গাগুলোর বিষয়ে খোজখবর নিয়ে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। মাটি কাটার বিষয়েও আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে।



