
ফরিদপুর প্রতিনিধি : ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় বিএনপির দুইপক্ষের একটি মারামারির ঘটনায় উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকসহ ৬ নেতার বিরুদ্ধে হওয়া মামলার প্রতিবাদে ওসির বিরুদ্ধে মানববন্ধনের প্রস্তুতিকালে এজাহারভুক্ত চার বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শনিবার (৪ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১০টার দিকে আলফাডাঙ্গা পৌরসদরের কলেজ রোডের চুয়াল্লিশের মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এর আগে শুক্রবার দিবাগত রাতে ছাত্রদল নেতা বনি আমিন বাদি হয়ে তাকে ও উপজেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য এ কে এম উজ্বল হোসেনকে মারধর করার অভিযোগ এনে ৬জনের নাম উল্লেখসহ ৩০-৩৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মামলার প্রতিবাদে ওই সময় চুয়াল্লিশের মোড় এলাকায় একপক্ষের বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেন। ঘটনাস্থলে ব্যানার পৌঁছানোর আগেই আলফাডাঙ্গা ওসির নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল থেকে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খোশবুর রহমান ওরফে খোকনসহ চার নেতাকে আটক করে। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি দেখে জড়ো হওয়া বিএনপির অন্য নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়।
গ্রেপ্তারকৃত অন্য নেতাকর্মীরা হলেন, উপজেলা যুবদলের কর্মী রমজান মোল্লা ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আরব আলী। এরা গতকাল শুক্রবার রাতে দায়ের করা মামলার এজাহারভুক্ত আসমি। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আলফাডাঙ্গা পৌর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলামকে। এ মামলায় উপজেলা বিএনপির সদ্য সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খোশবুর রহমান খোকন ১ নম্বর আসামী।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আলফাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহজালাল আলম বলেন, গত শুক্রবার রাতে হামলায় মামলার আসামি উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খোশবুর রহমান খোকনসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের অন্যান্য নেতাকর্মীরা। তারা আজ একটি মানবন্ধন করার কর্মসূচি দিয়েছিল। এ সময় এজাহারভুক্ত তিন আসামিসহ ৪জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এলাকায় আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মামলায় উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খোশবুর রহমান খোকন (৫০) ছাড়াও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম দাউদ (৪৪), উপজেলা যুবদল নেতা রমজান মোল্যা (৩৩), উপজেলা তাঁতি দলের সাধারণ সম্পাদক মো. সালাউদ্দিন (৩০), পৌর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক মো. কাইয়ুম সিকদার (৪৫) ও আলফাডাঙ্গা পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আরব আলী (৩৫)।
এলাকা ও বিএনপি নেতাকর্মীদের কথা বলে জানা যায়, ফরিদপুর জেলার মধুখালী, বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা নিয়ে ফরিদপুর-১ আসন গঠিত। তিনটি উপজেলায় বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের এক অংশের নেতৃত্ব দেন, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসিরুল ইসলাম। অপর অংশের নেতৃত্ব দেন, বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শামসুদ্দিন ঝুনু মিয়া (ভিপি ঝুনু)। এরা দু’জনেই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-১ মধুখালী,বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলা) আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। শামসুদ্দিন মিয়া’র পক্ষে আলফাডাঙ্গায় নেতৃত্ব দেন খোশবুর রহমান খোকন।
সম্প্রতি বিএনপির একাংশের নেতা খোশবুর রহমানের বিরুদ্ধে ফেসবুকে আওয়ামী লীগ নেতার সাথে আগে তোলা বিভিন্ন ছবি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করে খন্দকার নাসিরুলের পক্ষের লোকজন। এই বিষয়কে কেন্দ্র করে নাসিরুল পক্ষের বোয়ালমারী উপজেলা সাবেক ছাত্রদল নেতা বনি আমিনের ওপর শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আলফাডাঙ্গা উপজেলা সদর বাজারে খোশবুর রহমান খোকনের লোকজন হামলা চালায়। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে নাসিরুলের আরেক সমর্থক উপজেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য একেএম উজ্জ্বলের ওপরও হামলা চালানো হয়। এতে তারা আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। এ ঘটনায় শুক্রবার দিবাগত রাতে ছাত্রদল নেতা বনি আমিন বাদি হয়ে তাকে ও উপজেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য এ কে এম উজ্বল হোসেনকে মারধর করার অভিযোগ এনে ৬জনের নাম উল্লেখসহ ৩০-৩৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন।




