sliderস্থানিয়

পরিবেশ রক্ষায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ: মানিকগঞ্জে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মাধ্যমে শিশুদের মাঝে ‘সবুজ বিপ্লব’

নিজস্ব প্রতিবেদক: জলবায়ুর ভারসাম্য রক্ষা, দূষণমুক্ত পরিবেশ গঠন এবং আগামী প্রজন্মের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে মানিকগঞ্জে একঝাঁক সচেতন তরুণের উদ্যোগে পালিত হচ্ছে এক ব্যতিক্রমী বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ কর্মসূচি।

চলমান ‘প্রজেক্ট গ্রিন’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলার নবগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গিলন্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়।

জানা গেছে, ‘প্রজেক্ট গ্রিন’ নামে এ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিটি এক ব্যতিক্রমী উপায়ে আয়োজিত হচ্ছে। শিশুদের কাছে বৃক্ষরোপণকে একটি আকর্ষণীয় খেলার মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা গাছকে কেবল একটি উপহার নয়, বরং নিজেদের একটি অর্জন হিসেবে গ্রহণ করে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ওই দিন শিক্ষার্থীরা কুইজ ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। বিজয়ীদের হাতে আম, কাঁঠাল, লেবু, পেয়ারা, গাব, নারকেল, সুপারি, কৃষ্ণচূড়াসহ প্রায় ২০ প্রজাতির ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা তুলে দেওয়া হয়। বিতরণ শেষে নদীতীরবর্তী বিভিন্ন অঞ্চলে ভাঙন রোধে বৃক্ষরোপণ করা হয়।

এই উদ্যোগের প্রধান সমন্বয়কারী মুশফিকুর রহমান নিবির বলেন,“পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণ অত্যন্ত জরুরি। ‘প্রজেক্ট গ্রিন’-এর মাধ্যমে আমরা মানিকগঞ্জ থেকে শুরু করে পুরো বাংলাদেশ জুড়ে একটি সবুজ বিপ্লব গড়ে তুলতে চাই, যেখানে প্রায় ৫০ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীকে সচেতন করা সম্ভব হবে। আমাদের বিশ্বাস, এই ছোট ছোট পদক্ষেপগুলোই বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন এবং SDGs অর্জনে বড় অবদান রাখবে।”

অনুষ্ঠানে সার্বিক দিকনির্দেশনা দেন মো. মাসুম ইসলাম। তিনি বলেন, “আমাদের এই কর্মসূচি শুধুমাত্র গাছ বিতরণ নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মনে পরিবেশের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তোলার একটি আন্দোলন। আমাদের টিমের প্রতিটি সদস্যের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। তরুণদের নেতৃত্ব ও প্রচেষ্টাই প্রমাণ করে, আমরা পরিবর্তন আনতে পারি।” এ সময় টিমের অন্যান্য সদস্য অনিক আহমেদ, আয়েশা মোস্তাফিজ, মিথিলা আক্তার, রাকিবুল ইসলাম, আল-রাফি এবং রাব্বি হাসান উপস্থিত ছিলেন।

অনিক আহমেদ বলেন, “শিশুদের চোখে-মুখে যে উচ্ছ্বাস দেখেছি, তা আমাদের উৎসাহিত করেছে। কুইজ ও খেলার মাধ্যমে গাছ উপহার দেওয়ায় তারা গাছের গুরুত্ব আরও ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে।”

আয়েশা মোস্তাফিজ বলেন, “গাছ লাগানোর মতো একটি সহজ কাজ দিয়ে আমরা শিশুদের হৃদয়ে পরিবেশের প্রতি আজীবনের ভালোবাসা তৈরি করতে চেয়েছি। এই আন্দোলনের মাধ্যমে নারীরাও সমানভাবে পরিবেশ রক্ষার কাজে যুক্ত হতে পারে।”

মিথিলা আক্তার বলেন, “গাছ বিতরণের পর আমরা ফলোআপ করব, যাতে শিশুরা গাছগুলোকে যত্ন করে বড় করে তুলতে পারে। এটি কেবল একটি ইভেন্ট নয়, বরং একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতির অংশ।”

রাকিবুল ইসলাম বলেন, “আমাদের টিমের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই এই আয়োজনকে সফল করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, যখন তরুণরা এক হয়, তখন পরিবেশের মতো জটিল সমস্যার সমাধানও সম্ভব।”

আল-রাফি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন দৃশ্যমান। আমরা গাছ বিতরণের সময় শিশুদের জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে সহজভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছি।”

রাব্বি হাসান বলেন, “স্থানীয় মানুষ ও স্কুলের শিক্ষকদের থেকে আমরা যে সহযোগিতা পেয়েছি, তা আমাদের নতুন করে কাজ করার প্রেরণা দিয়েছে। এই উদ্যোগ সবার কাছে একটি ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিয়েছে।”

বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার সাব-এডিটর (অনলাইন) খাব্বাব হোসেন ত্বহা। এছাড়াও, বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক-মন্ডলী ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন।

খাব্বাব হোসেন ত্বহা বলেন, “দেশের তরুণরা যখন পরিবেশ রক্ষার মতো এমন মহৎ উদ্যোগে এগিয়ে আসে, তখন তা আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণার এক নতুন বার্তা দেয়। জলবায়ু পরিবর্তনের এই কঠিন সময়ে তাদের এই কর্মতৎপরতা পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। প্রতিটি গাছ কেবল একটি চারা নয়, বরং আমাদের সবুজ ভবিষ্যতের জন্য একটি দৃঢ় অঙ্গীকার। তারা যে শুধু বৃক্ষরোপণ করছে তা-ই নয়, বরং পরিবেশ দূষণ রোধ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণেও সচেতনতা তৈরি করছে। গণমাধ্যম হিসেবে আমাদের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে এই ধরনের ইতিবাচক কাজগুলোকে দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে তুলে ধরা, যাতে এই সবুজ আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং একটি টেকসই বাংলাদেশ গড়ার পথে আমরা আরও এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারি।”

‘প্রজেক্ট গ্রিন’-এর আয়োজকরা জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে মানিকগঞ্জের ৬৫১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই কার্যক্রম পরিচালিত হবে। প্রতিটি চারা বিতরণের ৩ থেকে ৬ মাস পর গাছের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে শিশুদের উৎসাহিত করা হবে। এ ধরনের উদ্যোগ একটি টেকসই ও পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপন করবে। এই মহৎ উদ্যোগকে সফল করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন একদল তরুণ স্বেচ্ছাসেবক, যাদের প্রত্যেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী।

এসময়, প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে এই সবুজ বিপ্লবকে এগিয়ে নেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button