ঠান্ডায় বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র

আমেরিকাজুড়ে প্রবল ঠান্ডা বিরাজ করছে। এতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে দেশটি। এরই মধ্যে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মোট সাতজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
শিকাগোতে তাপমাত্রা মাইনাস ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে গেছে, যা অ্যান্টার্কটিকার অংশের চেয়েও কম। তা ছাড়া নর্থ ডাকোটাতে তাপমাত্রা মাইনাস ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এই ঠান্ডা আবহাওয়ার শিকার হবেন অন্তত ২৫ কোটি মার্কিন নাগরিক। এর মধ্যে নয় কোটি মানুষ মাইনাস ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার চেয়েও কম ঠান্ডা আবহাওয়ার মধ্যে থাকবেন।
মিডওয়েস্ট উইসকনসিন, মিশিগান ও ইলিনয়েতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া অপেক্ষাকৃত উষ্ণ অঞ্চল আলাবামার দক্ষিণ রাজ্য ও মিসিসিপিতেও জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
এই শীতলতম আবহাওয়া ইতিহাস তৈরি করে ফেলতে পারে বলে জানিয়েছেন ইলিনয়েস ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের (এনডব্লিউএস) আবহাওয়াবিদ রিকি কাস্ত্রো।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানায়, গতকাল বুধবার মিশিগান অঙ্গরাজ্যের দুজন বাসিন্দার মরদেহ বাড়ির আশপাশেই পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, গত মঙ্গলবার উইলকনসিনের মিলওয়াকি এলাকার একটি গ্যারেজে ৫৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তির মরদেহ পাওয়া গেছে।
এনবিসি নিউজ জানায়, ইলিনয়েসের পেনকিন এলাকায় ৮২ বছর বয়সী এক ব্যক্তির মরদেহ তাঁর বাড়ির পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। এ ছাড়া গত সোমবার শিকাগোতে তুষারঝড়ে ৭৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি মারা গেছেন। উত্তর ইন্ডিয়ানাতে এক দম্পতির দুজনই বরফের রাস্তায় দুর্ঘটনায় পরে মারা যান।
ঠান্ডাকবলিত অঞ্চলগুলোতে শত শত স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। লোকজনকে গভীর শ্বাস নিতে ও বাইরে বের হওয়ার পর কথোপকথন কমাতে বলেছেন আবহাওয়াবিদরা।
মিডওয়েস্টের কৃষকরা তাঁদের গৃহপালিত পশুদের রক্ষার জন্য কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। তাঁরা তাঁদের মুরগির জন্য ইগলু বাসস্থান তৈরি করছেন।
উত্তর ডাকোটার গবাদি পশুপালক জোয়ি মায়ার্স ও স্কট বেইলি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের গবাদি পশুদের রক্ষা করার জন্য বেশ কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। হিমশীতল আবহাওয়ায় গর্ভবতী গরু অপরিণত বাছুর জন্ম দেয়। এ অবস্থায় বাছুর বেঁচে থাকতে পারে না।
এদিকে, পোষা প্রাণীদের বাড়ির ভেতরে নিয়ে রাখার জন্য সতর্ক করেছে প্রাণী অধিকার সংগঠন পেটা।
শিকাগোর দুটি প্রধান বিমানবন্দরে দেড় হাজারের বেশি ফ্লাইট বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া রেল চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
শিকাগোতে ৮০ হাজার নাগরিকের জন্য কয়েক ডজন উষ্ণতাকেন্দ্র চালু করা হয়েছে, যেন তারা ওই কেন্দ্রগুলোতে ঘুমাতে পারেন।
এদিকে চুরির ভয়ে অনেকেই ওই কেন্দ্রগুলোতে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন না। অনেকেই আবার মনে করছেন, ওই উষ্ণতা কেন্দ্রগুলোতে ঘুমানোর মতো পরিবেশ নেই।
এদিকে ইলিনয়েস রাজ্যে লিঙ্কন পার্ক চিড়িয়াখানা, ফিল্ড মিউজিয়াম ও আর্ট ইনস্টিটিউটসহ অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে।
বেশিরভাগ কফি শপ এবং অন্যান্য স্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও বন্ধ রয়েছে।বিবিসি