sliderউপমহাদেশশিরোনাম

জ্বলছে মনিপুর, দেখামাত্র গুলির নির্দেশ

আদিবাসী এবং অ-আদিবাসী গ্রুপগুলোর মধ্যে সহিংসতার জের ধরে উত্তপ্ত ভারতের মনিপুর রাজ্যে ‘দেখামাত্র গুলির’ নির্দেশ দিয়েছে সেখানকার বিজেপি সরকার। সহিংসতা থামাতে সৈন্যরা রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছে, কারফিউ জারি করা হয়েছে। ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা স্থানীয় মিডিয়াকে জানিয়েছে, সহিংসতা-জর্জরিত জেলাগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার লোককে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তাদেরকে বিভিন্ন স্থান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় দেয়া হয়েছে।

বুধবার আদিবাসী ঐক্য মিছিলকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হয় চূড়াচাঁদপুর জেলায়। ইতিমধ্যেই সংঘর্ষের জেরে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এতে অন্তত ১১ জন আহত হয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে দেখামাত্র গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছে মণিপুরের বিজেপি সরকার। রাজ্যজুড়ে ৫৫ কলাম সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও পাঁচ কোম্পানি র‍্যাফ উড়িয়ে আনা হয়েছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য।

বুধবার মিছিলকে কেন্দ্র করে নতুন করে ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা। বহু এলাকায় হাতাহাতি, মারধর, দোকানপাট ভাঙচুর, গাড়িতে আগুন লাগানোর মতো ঘটনা ঘটেছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের আটটি জেলায় কারফিউ জারি হয়েছে। আগামী পাঁচ দিনের জন্য সমগ্র মনিপুরে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকবে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আধাসেনা মোতায়েন করা হয়েছে রাজ্যজুড়ে। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর সাথে ফোনে কথা বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সমস্ত সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার দুপুরেই শুট অ্যাট সাইটের নির্দেশিকা জারি করে মণিপুর সরকার। সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তবেই গুলি চালানো যেতে পারে। তবে তার আগে সতর্ক করতে হবে। গুলি না চালিয়ে অন্যভাবে যদি পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায়, সেই উপায়গুলোও কাজে লাগাতে হবে। সমস্ত কিছু ব্যর্থ হলে তবে গুলি চালানো যেতে পারে বলেই নির্দেশ দিয়েছে মনিপুর প্রশাসন। রাজ্যপালের সম্মতিতে মনিপুরের রাজভবন থেকেই জারি হয়েছে নির্দেশিকা।

অ-আদিবাসী মেতাই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতি হিসেবে ঘোষণা না করার দাবিতে অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন মনিপুর (এটিএসইউএম) বিক্ষোভ সমাবেশ করার পর থেকে এই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। মেতাই সম্প্রদায় দীর্ঘ দিন ধরে তফসিলি উপজাতির স্বীকৃতির দাবি করে আসছিল। এই স্বীকৃতি পেলে তারা বনভূমিতে খামার করা, স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ পাওয়া, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বিশেষ সুযোগ লাভ, সরকারি চাকরিতে কোটা পাওয়ার মতো অধিকার পেতে পারে।

কিন্তু আদিবাসী লোকজন বলছে, মেতাই সম্প্রদায় তুলনামূলকভাবে স্বচ্ছল। তাদেরকে তফসিলি মর্যাদা দেয়াটা অন্যায় হবে।

মেতাইরা মোটামুটি হিন্দু। আর প্রতিদ্বন্দ্বী আদিবাসী কুকি ও অন্যান্য গোত্রগুলোর বেশির ভাগ লোক খ্রিস্টান। তারা আশপাশের পাহাড়গুলোতে বাস করে। রাজ্যের ৩৫ লাখ লোকের মধ্যে প্রায় ৪০ ভাগই উপজাতি।

সূত্র : আল জাজিরা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button