
নরসিংদীর যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার পর এবার আলোচনায় উঠে এসেছেন খুলনা মহিলা শ্রমিক লীগের আরেক নেত্রী সাদিয়া আক্তার মুক্তা (৩২)। স্বর্ণ চুরি চক্র গড়ে তোলা, ডাকাতিসহ নানা অপকর্মের অভিযোগে গ্রেপ্তার মুক্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া দুইটায় খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমিরুল ইসলাম তার রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত সোমবার সাদিয়া আক্তার মুক্তাকে আটক করা হয়। এসময় তার বাড়ি থেকে ১২ ভরি ৩ আনা চোরাই স্বর্ণ এবং স্বর্ণ বিক্রির ২ লাখ ৮২ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর খিলগাঁও থানাতে স্বর্ণালঙ্কার চুরির মামলা ও খুলনায় বাবু খান রোডের ব্যবসায়ী কাজী মঞ্জুরুল ইসলামের বাড়িতে ডাকাতিতে জড়িত থাকারও অভিযোগ আছে। পুলিশের দাবি, সাদিয়া স্বর্ণ চোরাই সিন্ডিকেটের হোতা।
সাদিয়া আক্তার মুক্তা খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা গুহা রেস্টুরেন্টের মালিক শুকুর আলীর স্ত্রী এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থাকেন। নিজেকে তিনি মহিলা শ্রমিক লীগের নেত্রী পরিচয় দিলেও খুলনা মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রনজিত কুমার ঘোষ দাবি করেছেন, তিনি মহানগর মহিলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি ওই পদে নেই। নানা অভিযোগে তাকে পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে যুগ্ম সম্পাদক জাহানারা বেগমকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের পদ দেয়া হয়। বর্তমানে তার কোনো পদ নেই।
এদিকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসছে সাদিয়ার নানা অপকর্ম ও বিত্তবৈভবের মালিক হওয়ার কাহিনী। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের নিশানবাড়িয়া এলাকার মৃত আলতাফ সরদার ও মৃত মোসাম্মৎ ফরিদা বেগমের দ্বিতীয় মেয়ে সাদিয়া। বাবা নগরীর সোনাডাঙ্গা থানার পাশে মুদি দোকানের ব্যবসা করতেন। প্রায় দেড় যুগ আগে ঢাকার জুরাইন এলাকার ছেলে শুকুর আলীর সঙ্গে সাদিয়ার বিয়ে হয়। এ সময় শুকুর জমির দালালি ও পরিবহনে চাকরি করতেন। রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার পর শুরু হয় সাদিয়ার উত্থান। ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার সঙ্গে গড়ে তোলেন অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। স্থানীয় আওয়ামী লীগকে এড়িয়ে প্রভাবশালী এক কেন্দ্রীয় নেতার আশির্বাদের কেন্দ্র থেকে বাগিয়ে নেন খুলনা মহানগর মহিলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক পদটি ।
ওই পদটি সাদিয়া আক্তার মুক্তা হারান গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই। । তবে নানাবিধ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩১ জুলাই তাঁকে পদ থেকে অপসারণ করে যুগ্ম সম্পাদক জাহানারা বেগমকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়। তবে দলের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে সাদিয়া সবসময় যোগাযোগ রাখতেন। এমনকি খুলনা মহানগর পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গেও তাঁর সুসম্পর্ক ছিল বলে জানা গেছে।
ক্ষমতাসীন দলে যুক্ত হওয়ার পর নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার মজিদ সরণিতে গড়ে তুলেন ‘গুহা ইন খুলনা’ রেস্টুরেন্ট। খুলনার মধ্যে একমাত্র মাটির নিচে থাকা রেস্টুরেন্টটি পরিচালনার দায়িত্ব ছিল স্বামী শুকুরের। নগরীর হরিণটানা থানার রাসেল সড়কে এই দম্পতির গড়ে তুলেছে চারতলা ভবন। নিচের ফ্ল্যাটগুলো ভাড়া দেওয়া চারতলার পুরোটা জুড়ে বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে থাকেন সাদিয়া-শুকুর দম্পতি। চলাফেরা করতেন তারা পাজেরো গাড়িতে।
গ্রেপ্তার সাদিয়া প্রসঙ্গে জানতে চাই খুলনা সদর থানার ওসি আসলাম বাহার বুলবুল বলেন, নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত সাদিয়া। গড়ে তুলেছেন স্বর্ণচুরির সিন্ডিকেট। ঢাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়ার নামে বাড়িতে ঢুকে ডাকাতি করতে গিয়ে একবার ধরা পড়েছিলেন মুক্তা ও তার স্বামী। তাদের বিরুদ্ধে এ ঘটনায় ঢাকার খিলগাঁও থানায় মামলা রয়েছে। এছাড়াও খুলনার ব্যবসায়ী কাজী মঞ্জুরুল ইসলামের বাড়িতে ডাকাতি ৫০ ভরি সোনা ও নগদ ২৯ লাখ টাকা লুটের সঙ্গে তিনি জড়িত।
ওসি জানান, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মুক্তাকে সোমবার গভীর রাতে গ্রেপ্তার করার পর হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মুক্তা ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন।
এ প্রসঙ্গে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (সাউথ) মোহাম্মদ এহসান শাহ বলেন, সাদিয়া সোনা চোরাই সিন্ডিকেটের মূল হোতা। তার বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় স্বর্ণালংকার চুরির মামলা আছে। পুলিশ চক্রটির সব সদস্যকে পাকড়াওয়ের চেষ্টা চালাচ্ছে। তার স্বামী শুকুর পলাতক। তার বিষয়েও খোঁজ নেয়া হচ্ছে। সাদিয়া দম্পতির সোর্স অব ইনকাম নিয়ে সন্দেহ আছে। এ চোরাই সিন্ডিকেটের সঙ্গে পুলিশ বা রাজনীতিবিদ কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রাথমিকভাবে সাদিয়া দীর্ঘদিন চোরাই সিন্ডিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। পূর্বপশ্চিম