সিরাজুল ইসলাম,সিংগাইর (মানিকগঞ্জ)প্রতিনিধি : মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার সাহরাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নারী কেলেংকারীর অভিযোগ ওঠেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি আমলে নিয়ে শিক্ষা অফিসার সৈয়দা নার্গিস আক্তারকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, প্রায় ১ হাজার ৭০০ শিক্ষার্থীর এ বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষক একেএম নজরুল ইসলাম যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন সময় বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ায় ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ব্যাবহারিকের জন্য ২৭৬ জনের কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে ৮২ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার পাশের সনদ নিতে ১০০ টাকা করে নেয়া হয়। সেই সাথে বিভিন্ন শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষার নামে নেয়া হয় ৩০০ টাকা করে। অষ্টম শ্রেনীতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের রেজিষ্ট্রশন ফি বাবদ ৬৫ টাকার স্থলে ৩০০ টাকা করে আদায়ের নোটিশ দেয়া হয়। পরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের চাপের মুখে ১০০ টাকা করে নিতে বাধ্য হন। একইভাবে ২০২০ সালে নবম ও দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও ১২০ টাকার পরিবর্তে ৫০০ টাকা করে হাতিয়ে নেয়া হয়। এসব অনিয়মের ঘটনা প্রকাশ পাওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উত্তপ্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। এছাড়া প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বাসা ভাড়া বাবদ বিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে প্রতিমাসে বেতনের সাথে অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা করে নিলেও তিনি রাত্রী যাপন করেন বিদ্যালয় ভবনের ছাত্রীদের নামাজ পড়ার কক্ষে। তার বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারীর গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন ওই বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক। তারা জানান, ইতিপূর্বে প্রধান শিক্ষক পাশর্^বর্তী গোপালনগর গ্রামের জনৈক মাহামের বাড়িতে ভাড়া থাকাকালীন নারীসহ এলাকাবাসীর কাছে ধরা পড়েছিলেন। তখন মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে রক্ষা পান। তারা আরো জানান, করোনাকালীন সময়ে ১৯ মাসের বেতন ও বাড়ী ভাড়া উত্তোলন করলেও একদিনের জন্যও বিদ্যালয়ে আসেননি তিনি। ওই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম শিরুকে জনৈক ছাত্রীর শ্লীলতাহানীর ঘটনাটি থেকে রেহাই দেন তিনি। এ নিয়ে মামলা,বিক্ষোভ, সমাবেশ এবং মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হলেও প্রধান শিক্ষক শিরুর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ভিকটিমের পরিবারের সাথে মামলাটি নিষ্পত্তি করে দেন। ফলে, অভিযুক্ত শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম স্কুলে চাকুরীতে পুর্নবহাল হয়।
এদিকে, স্কুল মার্কেটের অর্ধ-শতাধিক দোকান ভাড়ার টাকার সঠিক হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না। প্রধান শিক্ষকের চাকুরীকালীন সময় ৭ বছরেও হয়নি কোনো অভ্যন্তরীণ বিদ্যালয় অডিট। এর আগে সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলে আবেদনকারী প্রত্যেকের কাছ থেকে পোষ্টাল অর্ডার বাবদ ১ হাজার টাকা করে নেয়া হলেও এখন পর্যন্ত কোনো নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহন করা হয়নি। স্কুল ভবন সংস্কার কাজ শেষে বিপুল পরিমাণ লাল বালু ও খোয়া বেশী হলে হঠাৎ রাতের আঁধারে সেগুলো উধাও হয়ে যায়। প্রধান শিক্ষকের কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় কাউকে কিছু না জানিয়ে স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন তিনি। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এভাবে চলতে থাকলে এক সময় ধ্বংসের চরম সীমানায় পৌঁছে যাবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক একেএম নজরুল ইসলাম আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারীর ঘটনা সম্পূর্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। সহকারি শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম শিরুর বিরুদ্ধে ছাত্রী যৌন হয়রানির মামলা মীমাংসার সাথে আমি জড়িত নন বলে দাবী করেন তিনি।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার সৈয়দা নার্গিস আক্তার বলেন, তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছি। জুন ক্লোজিং-এ ব্যস্ততার কারণে কাজ শুরু করতে পারিনি।
এ ব্যাপারে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আমিনা পারভীন বলেন, আমি এ অফিসে সদ্য যোগদান করেছি। বিষয়টি আপনাদের কাছ থেকে শুনলাম। আমি খতিয়ে দেখবো।