sliderজাতীয়শিরোনাম

মানিকগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি

২শতাধিক গ্রাম প্লাবিত:৮ শতাধিক বাড়ি-ঘর নদী গর্ভে বিলীন:শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি

আব্দুর রাজ্জাক, মানিকগঞ্জ: ঘিওর উপজেলাসহ মানিকগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি মারাতœক রুপ ধারন করেছে। পদ্মা-যমুনার পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির ফলে জেলার ঘিওর, দৌলতপুর, শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলার অন্তত দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে বিভিন্ন ইউনিয়ন। ঘিওর ও দৌলতপুর উপজেলার ১৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় কর্তৃপক্ষ ৩ দিনের ছুটি ঘোষনা করেছেন। মারাতœকভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। এছাড়া ঢাকা আরিচা মহাসড়কে শিবালয় উপজেলার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উথুলী মোড়ে বন্যার পানি প্রবেশ করায় অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন।
দৌলতপুরের সাথে বাচামারা ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগের একমাত্র রাস্তাটিও পানিতে তলিয়ে গেছে। ডুবে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলী জমি। এদিকে যমুনার পানি আরিচা পয়েন্টে রোববার ৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫৭ সে: মি: উপর দিয়ে অর্থাৎ ৯ দশমিক ৯৭ স্তরে প্রবাহিত হয়েছে।
মানিকগঞ্জে বন্যা..1


গত কয়েক দিনে থেমে থেমে বৃষ্টি এবং যমুনা, ধলেশ্বরী ও কালীগঙ্গা নদীতে বন্যার পানি বৃদ্ধির ফলে মানিকগঞ্জের ঘিওর সদর, বানিয়াজুরী, বালিয়াখোড়া, সিংজুরী, বড়টিয়া ও দৌলতপুর উপজেলার বাচামারা, বাঘুটিয়া, চরকাটারী, জিয়নপুর, খলশী,চকমিরপুর,ধামশ্বর,কলিয়া ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পরেছে। এছাড়া বোনা আমন ১ হাজার হেক্টর, রোপা আমন ৪ হেক্টর,বীজ তলা ১ হেক্টর তলিয়ে গেছে । বন্যায় প্লাবিত এলাকায় মানুষের খাদ্য, বিদ্ধ পানি, জ্বালানী লাকড়ি,গো-খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
এদিকে যমুনা, ধলেশ্বরী, কালীগঙ্গায় পানি বৃদ্ধির সাথে নদী ভাঙন ভয়াবহ রুপ ধারন করেছে। গত কয়েক দিনে বর্ষার পানি বৃদ্ধি ও নদীর করাল গ্রাসে প্রায় ৮ শতাধিক বাড়ি-ঘর, রাস্তাঘাট ও পাচুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ,আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। নদী ভাঙ্গনের শিকার এলাকার খেটে খাওয়া মানুষ ঘর বাড়ি জিনিস পত্র নৌকা যোগে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ লোক জন যমুনা নদীর চরে নিজের ভিটে মাটি হারিয়ে অন্যের জমির উপর বাড়ি ঘর জিনিস পত্র নিয়ে খোলা আকাঁশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে। গত এক মাসে যমুনার ভাঙ্গনে ঘিওরের কুশুন্ডা, জাবরা, পেঁচারকান্দা, কুস্তা, নারচী, মাইলাঘী এবং দৌলতপুর উপজেলার বাচামারা ইউনিয়নের চুয়াডাঙ্গা,বাচামারা ঘোষপাড়া, কল্যানপুর ,বাচামারা উওর খন্ড,সুবুদ্দিয়া, চরকাটারী ইউনিয়নের কাঠাল তলি, লালপুর ,চরকাটারি ডাক্তার পাড়া, বাগপাড়া, মন্ডলপাড়া, কামার পাড়া, বাঘুটিয়া ইউনিয়নের মুন্সিকান্দি,রাহাতপুর, কাশিদারামপুর, ব্রামনদী, পুড়ান পাড়া, পারুরিয়া,জিয়নপুর ইউনিয়নের বরটিয়া, লাউতারা, বৈন্যা, আমতলী,আবুডাঙ্গা, খলসী ইউনিয়নের রোহা, পাররোহা,চকমিরপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর,কালিকাবাড়ি এই ৪০ টি গ্রামের প্রায় ৮ শতাধিক পরিবারের বসত ভিটা আবাদি জমি জমা বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে । সেই সাথে বাচামারা-দৌলতপুর সড়কের বৈন্যা নামক স্থানে প্রায় ৫ শত ফুট পাকা সড়ক নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ।
মানিকগঞ্জে বন্যা
এসব গ্রামে গত কয়েক দিন যাবত নদী পানি বৃদ্ধির ফলে বাড়ি-ঘরে হাটু-কোমড় পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বাড়ির উঠানে মাচা পেতে ও কলাগাছের ভেলায় বাড়ির উঠানে অনেক গৃহবধুকে রান্না করতে দেখা গেছে। অনেকেই পার্শ্ব বর্তী নাগরপুর উপজেলার ফৈজপুর, মাইজাইল সহ চরে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া যাদের টাকা পয়সা দিকে সচ্ছল তারা নৌকা যোগে আশ্রয়ের খোজে শহরের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে।
দৌলতপুর উপজেলা চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক তোজা জানান- চুয়াডাঙ্গা,বাচামারা ঘোষপাড়া, কল্যানপুর ,বাচামারা উওর খন্ড,সুবুদ্দিয়া গ্রামের ৮ শতাধিক বাড়ি-ঘরে হাটু-কোমড় পানিতে তলিয়ে গেছে। আশ্রয় কেন্দ্রে কয়েক শত নারী-পুরুষ গরু-ছগল নৌকা যোগে উদ্ধার করে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে এছাড়া বন্যার পানিতে প্লাবিত পরিবারের বাড়িঘরের নামের তালিকা দেওয়া হয়েছে । তিনি সরকারী-বেসরকারী সংস্থাদের বন্যার্তদের পাশে এগিয়ে আসার আহবান জানান ।
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিউর রহমান জানান- বন্যায় প্লাবিত হওয়ায চরকাটারী,জিয়নপুর এই ২ ইউনিয়নে বন্যার্তদের সাহায্যর্থে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়েছি ।
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আলিমুজ্জামান মিয়া জানান, রোরো-আমন ধান এক হাজার হেক্টর, রোপার বীজতলার তিন হেক্টর ও পাঁচ হেক্টর শাকসবজি’র জমি ডুবে গেছে। এক সপ্তাহের বেশি এসব ফসল পানিতে ডুবে থাকলে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button