sliderস্থানীয়

নাটোরের নিহত আওয়ামী লীগ কর্মী মুসার মায়ের আহাজারি থামছে না

নাটোর প্রতিনিধি : মুসার বাপ মরে গেছে পনের বছর আগে । সাত ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় সন্তান মুসা। বেটার নিজেরও আট বছরের একটা ব্যাটা (ছেলে) আছে। বড় ভাই হিসেবে সবাইকে দেখে রাখত সে। সবাইকে রেখে আমার মুসা চলে গেল। এখন আমাদেরকে কে দেখবে ? কে খাওয়াবে ? ওর বউ বেটা কিভাবে চলবে ?

অশ্রুজড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের জনসভার বিশেষ ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে নিহত আওয়ামী লীগ কর্মী মুসা সরকারের (৪৫) বৃদ্ধা মা মাজেদা বেওয়া (৭৫)।

মঙ্গলবার দুপুরে নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে তিনি এসব কথা বলেন। সোমবার সন্ধ্যায় মুসা সরকারের মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে গ্রামের বাসায় এনে স্থানীয় গোরস্থানে দাফন করা হয় । নিহতের বাড়িতে এখনো চলছে শোকের মাতম । বৃদ্ধ মা মাজেদা বেওয়া ও মুসার স্ত্রী মিনা বেগম (২৮) কেউ সান্তনা দিতে পারছেনা । পরিবারের একমাত্র উর্পাজনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছে পরিবারটি । মা মাজেদা বেগম একমাত্র নাতি তাছিন সরকারকে বুকে জড়িয়ে বিলাপ করছেন মাজেদা। কিন্তু তাছিন নীরব। কান্না করতে করতে স্তব্দ হয়ে গেছে মুসার স্ত্রী মিনা বেগম।

মুসার স্ত্রী মিনা বলেন, গত ২৯ জানুয়ারী (রবিবার)সকালে ছাতনী ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রাম থেকে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী রাজশাহীতে জনসভায় অংশগ্রহণ করতে যায় । তাছিনের বাপ বলল, জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বচক্ষে দেখার ইচ্ছা আমার অনেক দিনের । আমি নেত্রীকে দেখতে রাজশাহী যাচ্ছি । তোমরা ভালোভাবে থাইকো । তারপরে বাসে চড়ে সে রাজশাহীতে যায় । মাগরিবের নামাজের সময় ফোনে রাজশাহী থেকে সে জানায়, সে ভালো আছে। জীবনের প্রথম ট্রেনে উঠবো । ট্রেনেই নাটোর ফিরবো । এটায় ছিল তার সাথে শেষ কথা। রাত নয়টার দিকে ফোন আসে ও ট্রেনের ছাদ থ্যাকি পড়ি গিছে। সকালে খবর পাই তিনি আর নেই ।

আওয়ামী লীগ কর্মী মুসার বাড়িতে কথা হয় সেদিন বিশেষ ট্রেনের ছাদে থাকা যাত্রী একই গ্রামের রেজাউল করিম এবং সুজন নামের দুই যুবক। তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা শেষে বিশেষ ট্রেনটি নেতাকর্মীদের উপচে পরা ভীর ছিল। ট্রেনের ছাদেই তিল ধারণের জায়গা ছিল না । আমরা অনেক কষ্টে ছাদে চড়ি । বিশেষ ট্রেনটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আসলে হঠাৎ ছাদে তাদের পাশ থেকে মুসা নিচে পড়ে যান । সে সময় তাঁরা চেষ্টা করেও ট্রেনটি থামাতে পারেননি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মুসাকে মৃত ঘোষণা করেন ।

ছাতনী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক গোলাম মোস্তফা জানান, তিনিও ওই বিশেষ ট্রেনের যাত্রী ছিলেন । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জীবনে প্রথমবার স্বচক্ষে দেখে মুসা খুব আনন্দ পেয়েছিল । আওয়ামী লীগের জন্য নিবেদিত প্রাণ কর্মী ছিল সে । র্দুদিনে সুদিনে দলের যে কোন কর্মসূচিতে তিনি সব সময় প্রথম কাতারে থাকতো ।

মুসার বাসায় কথা হয় ছাতনী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা তোফাজ্জল হোসেনের সাথে । তিনি জানান, দুই ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে মুসা ছিলেন বড়। সব বোনদের বিয়ে দিয়েছে সে । পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে সবাইকে দেখে রাখার দায়িত্ব ছিল তাঁর। সে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অন্যের বাড়িতে কৃষিশ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ইচ্ছা থাকলেও কখনো দলের নেত্রীকে সরাসরি দেখতে যেতে পারেননি। বিনা খরচায় রাজশাহীতে যাতায়াতের সুযোগ পেয়ে রাজশাহীতে গিয়েছিলেন। তাঁকে হারিয়ে পুরো পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে। এখন দলের দায়িত্ব পরিবারের পাশে বিশেষ করে মুসার একমাত্র শিশু সন্তানের পাশে দাঁড়ানোর।

গ্রামবাসী জানান, মুসার পরিবারকে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান নগদ ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন এবং সব ধরণের সাহায্য- সহযোগিতার আম্বাস দিয়েছেন । আমরা প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করছি ।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button