sliderশিক্ষাশিরোনাম

জাপানের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ও ভর্তি প্রতিযোগিতা-তৃতীয় পর্ব

আজ জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষা ব্যবস্থার উপর সামান্য আলোচনা করব। তৎপুর্বে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুলগুলির ব্যাপারে কিছু ধারণা দিব। মাধ্যমিক স্কুলে তিন বৎসর, তারপর উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে তিন বৎসরের কোর্স শেষ করে ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ করে। স্কুলে তাদেরকে শৃঙ্খলা, শিষ্টাচার ও সামাজিক নিয়ম কানুনের উপর ব্যাপক শিক্ষা দেয়। তাদেরকে করণীয় সব শিক্ষা দিয়ে দেশের শ্রেষ্ঠ নাগরিকে পরিণত করে। কিন্তু ভাল একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ছাত্রদের ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে হয়। জাপানের প্রথম শ্রেণীর উচ্চমানের দশটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নিম্নে দেওয়া হল।
১। Kyoto university , ২। University of Tokyo, ৩। Tohuku university, ৪। Tokyo university of Technology, ৫। Kyushu university, ৬। Hokkaido university, ৭। Nagoya university, ৮। University of Tsukuba ৯। Osaka university, ১০। Keio university.
জাপানের রাজনীতিতে অবদান রেখেছে এই সকল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা মেধাবী ছাত্রগণ। তারা তাদের দেশপ্রেম ও মেধাশক্তি দিয়ে অবিরাম কাজ করে আজকের আধুনিক জাপানের রূপ দিয়েছেন। আজকের জাপান শান্তিপূর্ণ সুশৃঙ্খল অত্যাধুনিক এবং অতি সুন্দর একটি দেশ।
ছাত্রছাত্রীরা মাধ্যমিক স্কুল থেকে পাশ করে উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে যায়। কিন্তু যে সকল ছাত্রের পড়াশুনার স্কুল রেকর্ড ভাল নয়। শিক্ষকেরা তাদেরকে ভোকেশন্যাল ইন্সটিটিউটে পড়তে উপদেশ দেন। নিম্নবিত্ত ঘরগুলি থেকে সে সকল ছাত্রছাত্রী আসে। তারা ভোকেশন্যাল ইন্সটিটিউট থেকে এক বৎসরের টেকনিক্যাল কোর্স করে চাকুরিতে যোগদান করে।

কেইও বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎসব মুখর ক্যাম্পাস

অন্যান্যরা উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের পাঠ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়। কেউ দুই বৎসর কোর্সের টেকনিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়। ভাল নামকরা প্রথম শ্রেণীর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে তাদেরকে শক্ত প্রতিযোগিতার মোকাবেলা করতে হয়। সে জন্য সে সকল ছাত্রছাত্রীদের পিতামাতা তাদের সন্তানদের নাম করা প্রিপারেটরি স্কুলে পাঠায়। সে সকল স্কুলেরও শ্রেণী-বিভেদ আছে। ভালগুলিতে অনেক টাকা দিয়ে পড়াশুনা করে বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়। কিওতো এবং ‘দ্যা ইউনিভার্সিটি অব টোকিও’তে ভর্তি পরীক্ষায় মাত্র ১% ছাত্র বা ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। ‘কেইও বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রথম শ্রেণীর একটি জায়ান্ট প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। সেটাতে ভর্তি পরীক্ষায় টিকে মাত্র ২% ছাত্রছাত্রী। এ থেকে আন্দাজ করা যায় যে জাপানের বিখ্যাত দশটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে একজন ছাত্র এবং ছাত্রীকে কত কাঠখড় পোড়াতে হয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে তারা দেশের আমলা শ্রেণীর টপ্ ক্লাস চাকুরী পরীক্ষা দিয়ে সহজে টিকে যায়। অথবা দেশের বৃহৎ কোম্পানিগুলির ‘টপ বস’ হতে পারে।
ভাল ছাত্র হতে পারে তারাই – যাদের স্বাস্থ্য বেশ ভাল। ভাল স্বাস্থ্যের ছাত্ররাই অধিক মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করতে পারে। জাপানে অনেক মেডিক্যাল কলেজ আছে। ডাক্তার হতে হলে মেডিক্যাল কলেজে পড়াশুনা করতে হবে। প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণীর মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। সরকারী মেডিক্যাল কলেজে মেধাবী ছাত্ররা পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করে। সেগুলিতে পড়াশুনার খরচ কম। কিন্তু যারা সরকারী মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষাতে টিকে নি। তারা বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের শরণাপন্ন হয়। সেগুলিতে ভর্তি হতে অনেক টাকা লাগে। কমপক্ষে দুই কোটি থেকে তিন কোটি টাকা দিয়ে ভর্তি হয় এমনও দেখেছি। অমেধাবীরা ভর্তি হয় বটে, কিন্তু ভর্তি হয়ে যদি এক ক্লাসে দু’বার ফেল করে – তাকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করে দেয়। অথচ ভর্তির সময়ে যে মোটা অংকের টাকা দিয়েছে – সে টাকা ফেরত দেয় না। শুধু এখানেই শেষ নয়। তৃতীয় শ্রেণীর মেডিক্যাল থেকে পাশ করেই ডাক্তারি প্র্যাকটিস করতে পারে না। সরকাবী বেসরকারী ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষায় পাশ করতে পারলেই পূর্ণাঙ্গ ডাক্তার হতে পারে, নতুবা নয়। এই ব্যবস্থা থাকার কারণে তৃতীয় শ্রেণীর মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাশকরা ডাক্তারকে প্রথম শ্রেণীর কলেজ থেকে পাশকরা ডাক্তারের সমকক্ষ করে নেয়। তবে সবাই যে সে পরীক্ষায় পাশ করে তা নয়। এক ডাক্তার তের বার চেষ্টা করেও মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষায় পাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ডাক্তারি প্র্যাকটিস করার সার্টিফিকেট পায় নি। এমন ছাত্রও দেখেছি।
আরেকটি আশ্চর্য ব্যাপার দেখেছি। ধরা যাক কোন এক ছাত্র বা ছাত্রীর ডাক্তার বাবা বা মায়ের ব্যক্তিগত মেডিক্যাল ক্লিনিক রয়েছে। সে ক্ষেত্রে তাদের ছেলে বা মেয়েকে যদি ডাক্তার করতে না পারে – ক্লিনিকটি সরকার বন্ধ করে দিবে। তেমন অবস্থা যাতে না হয়, ক্লিনিকের মালিক ( অবশ্যই মালিককে ডাক্তার হতে হবে ) তার সন্তানকে ডাক্তার বানাবার জন্যে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন। নিজের সন্তান ডাক্তার না হলে সে ক্লিনিকের মালিকানা দাবি করতে পারে না।
বাংলাদেশ থেকে যারা জাপানে পড়াশুনা করতে আগ্রহী – তাদেরকে ‘প্রাথমিক পর্যায়ের জাপানী ভাষা’ দেশ থেকে শিখে নিতে হবে। তারপর জাপান ‘ইনফরমেশন সার্ভিস’ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানা সংগ্রহ করে’ ডিপার্টমেন্ট হেড’ এর বরাবরে দরখাস্ত করতে হবে। যারা অনার্স পাশ। তাদের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থা মন্দ হবে না। আবার জাপান সরকার ‘মনবুশো’ স্কলারশিপ দেয়। সে স্কলারশিপ নিয়েও আসা যায়। যারা ‘আন্ডার-গ্র্যাজুয়েট’ তাদের জাপানে এসে জাপানী ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুলে দুই বৎসরের কোর্স সমাপন করতে হবে। ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুল শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যায়। তবে খরচ অনেক বেশি। ভাল ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ষ্টাইপেন্ড দেওয়া হয়। তাছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্কলারশিপ দেয়।
লেখক : জাপান প্রবাসী লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button