
রংপুর ব্যুরো: রংপুর সিটি কর্পোরেশনের টার্মিনাল মৎস্য আড়তে মুজিববর্ষ ও মহান বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে রংপুর জেলাকে পিরানহা মাছ মুক্ত ঘোষণা করার জন্য সোমবার দুপুরে বাসটার্মিনাল ম্যসৎ আড়ত প্রাঙ্গনে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা মৎস্য অফিসার বরুন চন্দ্র বিশ্বাসের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোঃ আসিব আহসান, বিশেষ অতিথি ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ নুর নাহার বেগম, এতে বক্তব্য রাখেন রংপুর টার্মিনাল মৎস্য আড়তের সভাপতি আলমগীর হোসেন ,সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম প্রমুখ । এ সময় রংপুর জেলাধীন আটটি উপজেলা হতে আড়তদার সমিতি’র সভাপতি, সম্পাদক, মাছ বিক্রেতারা উপস্থিত ছিলেন ।
জেলা মৎস্য অফিসার, রংপুর জানান যে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিভিন্ন দপ্তর / বিভাগ নির্ধারিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে ; নির্ধারিত কর্মসূচির বাইরে রংপুর জেলা মৎস্য বিভাগ এ কার্যক্রমটি আলাদাভাবে গ্রহণ করেছিল। তিনি জানান যে, এ মাছ – আমাদের দেশের নয় । এটি মূলত দক্ষিণ আমেরিকার আমাজান, ও সাও ফ্রান্সিসকো নদীতে পাওয়া যায় । এটির অনেক প্রজাতি আছে তবে এ যাবৎ ত্রিশটি প্রজাতি আবিস্কৃত আছে। তবে আমাদের দেশে মাত্র দুটি প্রজাতি পাওয়া যায় । কোন এক সময়ে থাইল্যান্ড হতে কোন এক মৎস্য সৌখিন ব্যাক্তি একুরিয়ামে রাখার জন্য নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে এটি শুধু পুকুরে নয় ব্রিডিং পর্যন্ত শুরু হয়ে গিয়েছে।
মাছটির ত্রিভুজাকৃতির দাঁত এবং নিচের চোয়াল অত্যন্ত শক্ত। এরা সর্বভুক এবং রাক্ষুসে প্রকৃতির। এটির যে আকৃতি এটির চেয়ে কয়েকগুন বড় আকৃতির জীবকে আক্রমণ করতে পারে।
এরা দলবদ্ধভাবে জলাশয়ে বসবাস করে কিন্তু পরস্পরকে অবিশ্বাস ও ভয় করে। কারন জলাশয়ে যদি কোনভাবে খাবেরের অভাব ঘটে তবে নিজ সদস্যদেরকে আক্রমন করে, আহত করে এবং ভক্ষণ করা শুরু করে। এদের খাদ্য তালিকায় আছে – যে জলাশয়ে বসবাস করে ঐ জলাশয়ের সকল প্রকার মাছ, শামুক, ঝিনুক, সকল প্রকার পোকা- মাকড় এবং সকল প্রকার ব্যাঙ। এ মাছ যদি কোনভাবে পুকুর থেকে নদী-নালা, খাল-বিলে আসার সম্ভাবনা রয়েছে কারন আমার দেশ বন্যা প্রবণ এলাকা ; ফলে যে কান সময়ে এ মাছ মুক্ত জলাশয়ে প্রবেশ করতে পারে এবং তাই যদি হয় তাহলে আমাদের দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাবে এবং এক সময়ে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তিনি আরো জানান যে, ওটঈঘ আন্তর্জাতিক সংস্থার মতে – আমাদের স্বাদু পানির ২৬০ প্রজাতি মাছের মধ্যে ৬৪ প্রজাতির মাছ আজ হুমকীর সম্মুখীন এর মধ্যে- ৯ প্রজাতির মাছ মহাবিপন্ন , ২৫ প্রজাতির মাছ বিপন্ন এবং ৩০ প্রজাতির মাছ সংকটের মধ্যে আছে।
এই পরিস্থিতির মধ্যে রাক্ষুসে এ মাছের বিস্তার যদি বন্ধ না করা যায় তবে আমাদের দেশীয় প্রজাতির সকল মাছ বিলুপ্তির পথে যাবে। এ বিবেচনায় রেখে এ মাছ বিষাক্ত না হওয়ায় সত্বেও আমাদের দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষার্থে সরকার ২০০৮ সালে আইন করে এ মাছ চাষ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে।
তিনি জানান যে, কার্যক্রমটি বাস্তবায়নে রংপুর জেলায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ৬২ টি মোবাইল কোর্ট, ২৬১ টি অভিযান, ১৯২টি সচেতন সচেতনসভা করা হয়। এসবের মাধ্যমে ৮৯৬ কেজি পিরানহা মাছ সহ ২৩৮ কেজি আফ্রিকান মাগুর জব্দ করা হয় এবং ৭৬৭০০ মিটার কারেন্ট জাল ও ২৩৮ টি চায়না দুয়ারী জাল আটক করা হয়। তিনি আরো জানান যে, ড. মোহাঃ সাইনার আলম, উপপরিচালক, মৎস্য অধিদপ্তর রংপুর বিভাগ, রংপুর স্যার কার্যক্রমটি বাস্তবায়নে নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করেছেন। জেলা প্রশাসক মোঃ আসিব আহসান বলেন,মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মৎস্য সেক্টর পৃথিবীর মধ্যে ঈর্শানীয় সাফল্য অর্জন করেছে এবং তারই ধারাবাহিকতায় আমরা হারিয়া যাওয়া দেশীয় প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে আনতে চাই এবং মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে চাই। তাই আমি মনে করি মুজিববর্ষ উপলক্ষে রংপুর জেলা মৎস্য বিভাগ যে কার্যক্রম নিয়েছিল তা ছিল যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে জেলা মৎস্য বিভাগসহ আটটি উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তাদের তিনি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি আরো জানান যে, মৎস্য আইন বাস্তবায়ন আরও জোড়দার করা হবে এবং শুধু পিরানহা মাছ নয় সকল প্রকার সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ মাছ যাতে রংপুর জেলায় প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ প্রসঙ্গে আড়তদার গণ অঙ্গীকার করেন যে, তারা কখনো সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ মাছ আড়তে প্রবেশ করতে দিবেন না এবং এসব মাছের ব্যবসা বাণিজ্য করবেন না। আড়তদারদের টার্মিনাল মৎস্য আড়তের অবকাঠামোগত কিছু সমস্যা তুলে ধরেন যা জেলা প্রশাসক মহোদয় বিষয়টি সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। আলোচনার শেষে তিনি মুজিববর্ষ ও মহান বিজয়ের সুর্বণজয়ন্তী উপলক্ষে রংপুর জেলাকে পিরানহা মাছ মুক্ত ঘোষণা করার মাধ্যমে সভার কার্যক্রম সমাপ্তি ঘোষনা করেন।