যমুনার ভাঙনে সবহারা মানুষের আর্তনাদ

সংবাদদাতা, চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) : নদী ভাঙ্গছে বিলীন হচ্ছে-চিরচেনা বসতভিটা-ফসলি জমি। চোখের সামনে এসব দেখে কাঁদছে মানুষ। এক সময়ের বিত্তশালীরাও এখন অসহায়। তাদেরও মাথা গোজার জায়গা নেই। সবার চোখে-মুখে আতংক, আর্তনাদ। কিন্তু তাদের কান্না শোনার কেউ নেই।
দুরদুরান্ত থেকে বহু মানুষ প্রতিদিনই আসছে যমুনার ভাঙন তান্ডব দেখতে। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা দ্বায়িত্বশীল কোন কর্মকর্তাদের দেখা নেই যমুনা পাড়ে।
এমন চিত্র সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার যমুনা পাড়ে সাড়ে ৫কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। স্থানীয়রা বলছে, দ্রুত পাউবো ব্যবস্থা গ্রহন না করলে এনায়েতপুর থানা মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। আর পাউবো বলছে, একমাস আগে ভাঙ্গনরোধে জরুরী ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বরাদ্দ চেয়ে নোটশীট পাঠালেও এখনো অনুমোদন দেয়া হয়নি। যে কারণে তাদেরও অসহায় হয়ে ভাঙ্গন দেখা ছাড়া কিছু করতে পারছে না।
সরেজমিন জানা যায়, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত তিন মাসের ব্যবধানে নদীর পশ্চিম তীরবর্তী শাহজাদপুর উপজেলাধীন এনায়েতপুর থানা সদর থেকে দক্ষিনে পাচিল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার এলাকার ছয়টি গ্রামের সহস্রাধিক বসতভিটাসহ কয়েকশ শতাধিক হেক্টর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
শনিবার সকালের দিকে ব্রাহ্মনগ্রাম ও আড়কান্দি গ্রামে চলে ভয়াবহ ভাঙন। একে একে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসত বাড়ি ও ফসলি জমি। ঘরবাড়ি হারিয়ে বাস্তুহারা হয়ে পড়ছে মানুষ। খোলা আকাশে মানবেতর জীবনযাপন করছে অনেকে। বাপ-দাদার চিরচেনটা বসতভিটা-ফসল জমি হারিয়ে পথের ফকির হতে বসেছে অনেকেই। বিশেষ রাতের বেলায় ভাঙ্গনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে নদী তীরবর্তীদের।
ব্রাহ্মনগ্রামের বাসিন্দা তপা ফকির জানান, মাত্র দুবছর আগে সাড়ে বিঘা জমি, ওয়ালসেট বাড়ী নদীগর্ভে হয়ে গেছে। এক কিলোমিটার পিছনে এসে নতুন করে আবার বাড়ী নির্মান করেছিলাম। সেটিও বিলীন হয়ে গেলো। এখন রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছি। রোহিঙ্গারা যতটুকু সহায়তা পাচ্ছে তার একচুল পরিমাণ সহযোগিতাও আমরা দেশের নাগরিক হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে পাচ্ছি না। কারন গত বছর পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করে তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু তাদের আশ্বাস থেকেই গেলো, আর আমাদের বসতভিটা নদীগর্ভে চলে গেলো।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সোহবার আলী জানান, নদী ভাঙনের ভয়াবহতা এতো বেশি যে প্রতিদিনই কোন না কোন বাড়ি অথবা স্থাপনা নদীতে চলে যাচ্ছে। এই বিষয়ে উর্ধ্বতন মহলকে জানিয়েও কোন ফল না পেয়ে আমরা হতাশ। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, তিন বছর আগ থেকেই ব্রাহ্মনগ্রাম থেকে পাঁচিল পর্যন্ত ভাঙ্গন শুরু হয়েছে।
গতবছর ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করায় বহু বসতভিটা নদীগর্ভে চলে যায়। যেকারণে গত বছর পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যগন এলাকা পরিদর্শন করে তীররক্ষা বাঁধের আশ্বাস দেন। এরপরই কারিগরী কমিটি স্থান পরিদর্শন করে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। কিন্তু সেটি অনুমোদন হয়নি।
অনুমোদনের পর প্রকল্প প্রস্তাবনা জমা দেয়া হবে। তারপর পাস হলে স্থায়ী রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হবে। কিন্তু এটি সময়সাপেক্ষে ব্যাপার। কিন্তু এ বছর যে ভয়াবহ ভাঙ্গন শুরু হয়েছে তা থেকে জনপদ রক্ষায় একমাস আগে জরুরী বরাদ্দ চেয়ে পত্র দেয়া হয়েছে। কিন্তু বোর্ড থেকে অনুমোদন হয়নি। যে কারণে আমরা কোন কাজ করতে পারছি না। আমাদের শুধু পরিদর্শন করে দেখা এবং উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা ছাড়া কিছুই করার নেই।