
শাহীন রাজা : রাষ্ট্রবিজ্ঞানে নতুন সংযোজন, মহাদেশীয় রাষ্ট্র ! এই মহাদেশীয় রাষ্ট্রগুলো ভেঙ্গে ফেলাই পশ্চিমা বিশ্বের প্রধান লক্ষ্য। বিশাল আয়তনের এই রাষ্ট্রগুলো একসময় প্রধান অন্তরায় হয়ে দেখা দিতে পারে। বিশালত্ব ভেঙ্গে ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র রাষ্ট্র তৈরির কৌশল বাস্তবায়নে কর্ম শুরু হয়ে গেছে।
মহাদেশীয় রাষ্ট্র শব্দটি, একসময় শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়। কিন্তু না, এখন সংখ্যার ব্যপ্তি ঘটেছে। আগে যে অর্থে ব্যবহার হয়ে আসছিল, এখন সম্পুর্ন ভিন্ন অর্থ। আমেরিকা বাদে আরও ছয়টি দেশকে মহাদেশীয় রাষ্ট্র বলা হয়। এই দেশগুলো হচ্ছে – অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সাউথ আফ্রিকা, চীন, ভারত এবং ব্রাজিল। প্রথম দুটো দেশ, ধর্ম এবং জাতিগতভাবে পশ্চিমা বিশ্বের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। যে কোন দুর্যোগে এই দুই দেশের পাশে দাঁড়ানোই হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর প্রধান কর্তব্য।
বাকী চারটি রাষ্ট্র হচ্ছে – চীন, ভারত, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। এরা সবাই আবার সম্প্রতি নবগঠিত জোট, ব্রিকস-এর প্রাথমিক সদস্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, এই বৃহৎ রাষ্ট্রগুলো বিশাল হওয়ায় এদের প্রাকৃতিক সম্পদ-ও ব্যপক। সেই সাথে আছে বিশাল জনগোষ্ঠী এবং বিরাট বাজার। আভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক শক্তির জন্য এটা অনেক বড় বিষয়। আগামীতে এটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিতে পারে। তাই এদের ভাঙতে হবে। এই ভাঙ্গার ব্যাপারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ও যুক্ত।
রাষ্ট্রগুলো ভাঙ্গার জন্য সহযোগী হিসেবে, মহাদেশীয় রাষ্ট্রগুলোর আশপাশের ছোট ছোট বেছে নিয়েছে।
ষাটের দশকে পৃথিবীর বেশীরভাগ বড় রাষ্ট্র সোভিয়েত বলয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়। সোভিয়েত বলয়ের বিরুদ্ধে ছোট, ছোট রাষ্ট্রগুলো বেছে নেয়। যার প্রেক্ষিতে মিশর, আলজেরিয়া, সৌদি আরব, ইরাক, ভারত, ইথিওপিয়া, সুদান এবং ল্যাটিন আমেরিকার বিশাল অংশ সোভিয়েত বলয় থেকে বের করে নিয়ে আসে। এবারও ক্ষুদ্র রাষ্ট্র ব্যবহারের মধ্য দিয়ে বিশাল রাষ্ট্রগুলো ভেঙ্গে দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
প্রশ্ন উঠতে পারে রাশিয়া-ও বড় দেশ। তবে কেন রাশিয়া এর মধ্যে নেই। রাশিয়া মুলতঃ পারমাণবিক সমৃদ্ধ দেশ। এই মূহুর্তে রাশিয়াকে এর অন্তর্ভুক্ত করলে পরিকল্পনা সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। এছাড়া রাশিয়ার সাথে তাদের ভিন্ন হিসাব। ধর্ম এবং জাতিগোষ্ঠীগত এরা সবাই এক। শুধু শাসক ভিন্নমতের। একসময় এই সমস্যা থাকবে না বলে তারা মনে করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান অর্থনৈতিক শত্রু হচ্ছে চীন। তাই চীনের উপর তাদের নজরটা বেশী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাষ্ট্র দ্বারা চীনকে “নেকলেস রাজনীতি ” দ্বারা ঘিরে রেখেছে। এদিকে শ্রীলঙ্কায় রাজা পাকসের সরকার উৎখাতের মধ্য দিয়ে মার্কিন কূটনীতি দখল নিয়ে নিয়েছে।
পাকিস্তানে ইমরান খানের সরকার ফেলে দেয়া হয়েছে। এবং নিজেদের পছন্দের সরকার ক্ষমতায় আনা হয়েছে। আগামী নির্বাচনে ইমরান অংশ নিতে না পারলে তাঁদের পছন্দের দল নির্বাচিত হয়ে আসবে। তবে ইমরান যদি এর মধ্যে সমঝোতা করতে পারে তাহলেই ইমরানে ফের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে। পাকিস্তানের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে সে দেশের সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী কোনভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের বাইরে যাবে না।
বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমারের বিরুদ্ধে “বার্মা অ্যাক্ট ” নামে মার্কিন কংগ্রেসে প্রণীত আইন গ্রহণ করা হয়েছে। মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও মুল লক্ষ্য হচ্ছে চীন। বার্মা অ্যাক্টে বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে আশপাশের ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলোর সাথে সহযোগী মূলক সম্পর গড়ে তুলতে হবে। মিয়ানমারের পাশে ভারত কিন্তু ক্ষুদ্র রাষ্ট্র নয়।
তাহলে কে হতে যাচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ?
লেখক সিনিয়র সাংবাদিক