
ফ্ল্যাট উইকেটেও বাংলাদেশ বোলারদের দাপটে বড় লিড নিতে ব্যার্থ হলো অজি ব্যাটসম্যানরা। যদি কয়েকটা সহজ ক্যাচ বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা ধরতে ব্যার্থ না হতেন তবে অজিদের জন্য বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসটা অতিক্রম করা মোটেও সহজসাধ্য ছিল না। বোলারদের দাপটে ব্যাকফুটে থাকা বাংলাদেশ মোটামুটি ভাবে তৃতীয় দিনটা নিজেদের করে নিল। চট্টগ্রাম টেষ্ট জয় পরাজয়ের এখন পুরোটাই নির্ভর করছে দ্বিতীয় ইনিংসের উপর। টানা বৃষ্টিতে তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনে একটা বলও মাঠে গড়ায়নি। বৃষ্টি থামায় লাঞ্চ বিরতির পর খেলা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ভারী বর্ষণে মাঠ পরিচর্যায় খেলা শুরু হতে দেরি হয়। খেলা শুরুর পর নাসিরের করা ইনিংসের ৭৩তম ওভারে দ্রুত সিঙ্গেল নিতে গিয়ে বোঝাপড়ার অভাবে সাকিবের থ্রোতে রান আউট হন দারুন খেলতে থাকা পিটার হ্যান্ডসকম ব্যাক্তিগত ৮২ রানে । সেই সঙ্গে ভেঙ্গে যায় হ্যান্ডসকম আর ওয়ার্নারের ১৫২ রানের দুর্দান্ত জুটির। নতুন বলের বাড়তি বাউন্স কাজে লাগিয়ে মুস্তাফিজ স্ট্রাইকে থাকা ম্যাক্সওয়েলকে গালিতে মিরাজের ক্যাচে পরিনত করেন। সহজ ক্যাচ লুফে নিতে পারেনি মেহেদি হাসান। ব্যক্তিগত ১২ রানে জীবন পান ম্যাক্সওয়েল।
টেষ্টের দ্বিতীয় দিনে দুইবার জীবন পাওয়া ওয়ার্নারকে একই স্পেলে সাজঘরে ফেরান মুস্তাফিজ। আজ ছিল বাংলাদেশের এই অসাধারণ বোলারের জন্মদিন। ৮৮তম ওভারে লেগ স্লিপে থাকা ইমরুলের দুর্দান্ত রিফ্লেক্স ক্যাচে ১২৩ রানে আউট হন ওয়ার্নার। দলের স্কোর তখন চার উইকেটে ২৯৮ রান। উপমহাদেশে টানা দুই টেস্টে সেঞ্চুরি করা ষষ্ঠ অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান এখন ওয়ার্নার। বিরল এই রেকর্ডে এর আগে নাম লিখিয়েছিলেন সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক, মিস্টার ক্রিকেট খ্যাত মাইক হাসি, ডেমিয়েন মার্টিন, বব সিম্পসন এবং অ্যালান বোর্ডার।
অজিদের লিড বেশি বড় হওয়ার আগেই সাজঘরে ফিরতে হয় একবার জীবন পাওয়া কার্টরাইটকে। মিরাজের বলে ফরওয়ার্ড ডিফেন্স করতে গিয়ে স্লিপে সৌম্যর সতর্ক হাতে ধরা পড়েন ১৮ রান যোগ করা কার্টরাইট। উইকেট পতনে সতর্ক ব্যাটিং করার চেস্টা করেন ম্যাক্সওয়েল ও সদ্য ক্রিজে আসা ওয়েড। স্পিনাররা রান আটকে চাপ সৃষ্টি করার চেস্টা করেন। সুফল আসে ইনিংসের ১০৬তম ওভারে। নিজের দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসেই মুস্তাফিজ ওয়েডকে ৮ রানে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন তিনি। পরের ওভারেই ফের অজি ক্যাম্পে আঘাত হানে বাংলাদেশ। এবার ইনিংসের শুরুতে ক্যাচ ফেলে দেয়া মিরাজের বলেই ফরওয়ার্ড ডিফেন্স খেলতে গিয়ে মুশফিকের চতুর উইকেট কিপিংয়ে কট বিহাইন্ড হন ম্যাক্সওয়েল , ৩৮ রান করে আউট হন তিনি। ৪ রান করা প্যাট্রিক কামিন্সকে এলবি করে ড্রেসিংরুমের রাস্তা দেখিয়ে দিলেন মিরাজ। এর ফলে অষ্ট্রেলিয়ার ইনিংসে টানা দ্বিতীয় ও সব মিলিয়ে তৃতীয় বারের মত টেষ্ট ক্রিকেটে তিনি তিন উইকেট শিকারী বোলার। এরপর বোলিং জুটির পরিবর্তনে সাকিবের প্রথম বলেই সহজ ক্যাচ ড্রপ সৌম্যের। যদিও ঐ ওভারেই তিনি ২২ রান করা আগারকে বোল্ড করেন। ৩৭৭/৯ উইকেট তৃতীয় দিনের খেলা শেষে অজিদের লিড ৭২ রানের । মুস্তাফিজ , মিরাজ ৩টা করে আর তাইজুল , সাকিব ১টা করে উইকেট লাভ করেন।
চট্টগ্রাম উইকেটে টার্নিং হবে। এমনটাই হয়ে এসেছিল এতদিন। টসে জিতে বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিক অজিদের ফিল্ডিংএ পাঠাতে এতটুকু সময়ও নিলেন না। স্বস্তির নিঃশ্বাস বাংলাদেশ ক্রিকেট ভক্তদের মাঝেও। সাত উইকেট শিকারী অজি অফ স্পিনার নাথান লিওন যখন বলেন, ‘আমার বল একটুও টার্ন করেনি। আমি সোজা ডেলিভারি দিয়ে চারজনকে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলেছি, তখন আর বুঝতে বাকি থাকে না উইকেট আর যাই হোক স্পিন ফ্রেন্ডলি নয়। শুধু নাথান লিওন নয়, অস্ট্রেলিয়ান কোচ ড্যারেন লেহম্যান আর বাংলাদেশ অলরাউন্ডার নাসিরও দ্বিতীয় দিন শেষে প্রায় একই সুরে কথা বলেছেন। অজি কোচ লেহম্যানের মূল্যায়ন, ‘প্রথম টেস্টের তুলনায় এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন উইকেট। এটাতো আর আমাদের পছন্দে তৈরি না। ঘরের মাঠে স্বাগতিক দল নিজেদের পছন্দের উইকেট তৈরি করবে সেটাই স্বাভাবিক। আমার কাছে এটা উপমহাদেশের চিরায়ত ধারার পিচ থেকে বেশ ভিন্ন বলে মনে হচ্ছে।” বাংলাদেশের অলরাউন্ডার নাসির হোসেনও জানালেন , উইকেটে যে টার্ন থাকার কথা , তাঁর লেশ মাত্র নাই। ফ্যাট উইকেট যেখানে বাংলাদেশ ১০০ থেকে ১৫০ রান কম করেছে ।” প্রশ্ন উঠেছে, পীচের ব্যাপারে বিসিবি’র সিদ্ধান্ত নিয়ে । যদি এরকম উইকেটেই খেলা হবে তবে পেসার একজন কেন ? বিসিবি’র অগোচরেই কি এই পীচ তৈরী হয়েছে ? এমন প্রশ্ন খোদ বিসিবি’র কর্তাব্যাক্তিদেরও। পাশাপাশি প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যান বাঁহাতি কেন, ডান অথবা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান কম্বিনেশনে এতটা অবহেলার যুক্তিযুক্ত কারনটাও ভোঝা যায়নি।