ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের উরি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলার ১৮ ভারতীয় জওয়ান নিহত হওয়ার পর বেশ কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এমনকি পাকিস্তানকে উপযুক্ত জবাব দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্তও করেছিলেন। তবে এই ইস্যুতে প্রথম প্রকাশ্য ভাষণে যেন কিছুটা নরম সুরেই কথা বললেন মোদী। মাঠের লড়াইয়ে না গিয়ে বরং পাকিস্তানকে দারিদ্রতা এবং বেকারত্বের সঙ্গে লড়াই করতে বললেন।
ভারতের কেরালায় বিজেপির এক জনসভার বক্তব্যে উরি হামলা ও পাকি-ভারত সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে কথা বলেন মোদি। ভাষণে পাকিস্তানকে উদ্দেশ্য করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। সাহস দেখিয়ে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো, দেখা যাক কে দ্রুত দ্রারিদ্র্য দূর করতে পারে। কে বেকারত্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে প্রথম হয়।’ কাশ্মীরের উরি ঘাঁটিতে হামলার পর এটাই ছিলো মোদির প্রথম প্রকাশ্য ভাষণ।
ভারত উরি হামলায় নিহতদের স্মরণ করে মোদী বলেন, ‘আমাদের ১৮ জন জওয়ানের আত্মত্যাগ কখনো ভোলা যাবে না।’ এর আগে ‘পাকিস্তানকে প্রেমপত্র নয়, তাদের ভাষাতেই কড়া জবাব দিতে হবে’ বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মোদি। কিন্তু তার এই বক্তব্যে সমালোচনা হচ্ছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে। আনন্দবাজার বলছে, নরেন্দ্র মোদীকে ঢোক গিলে বলতে হয়েছে, ‘সরকার পাকিস্তানকে কূটনৈতিক ভাবে একঘরে করার পথেই হাটবে। ঠিক যে পথে আগের কংগ্রেস সরকার পাকিস্তানকে মোকাবেলা করতো।’
বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তোমাদের একঘরে করার বিষয়ে আহ্বান জানাবো। আমরা বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের কাছে নতি স্বীকার করবো না। সম্প্রতি ১১০ জন জঙ্গিকে ভারতীয় সেনারা হত্যা করেছে। সন্ত্রাসী-জঙ্গিরা সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের সেনাদের ওপর হামলা চালাতে ১৭ বার চেষ্টা করেছে কিন্তু সফল হয়েছে একবার। আগামীতেও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।’
পাকিস্তান সন্ত্রাসী রপ্তানি করে উল্লেখ করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘দুটি দেশ একসঙ্গে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, কিন্তু ভারত রপ্তানি করছে সফটওয়্যার আর তোমরা করেছো সন্ত্রাস। বিশ্বের যেখানেই সন্ত্রাস-জঙ্গির উথ্থান হয় সেখানেই নাম ওঠে পাকিস্তানের। এশিয়ার যেখানেই কোনো দেশ সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে তারা দোষারোপ করছে পাকিস্তানকে। তোমরা প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী রপ্তানি করছো।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, বিচক্ষণ মোদী বুঝেছেন জনসভায় দাড়িয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গরম গরম কথা বলা এক জিনিস। আর ময়দানে নেমে তাদের মোকাবিলা করা অন্য জিনিস। সামরিক কর্তারা মোদিকে বলেছেন, দু’টি পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধ কোনভাবেই সম্ভব নয়। সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে আমেরিকা, ব্রিটেন বা জার্মানি যতোই ভারতের পাশে দাড়াক, যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলে তারাই বাধা হয়ে যাবে। এমনকী সীমান্ত বা নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে জঙ্গি ঘাঁটি ভেঙে দিয়ে আসাও সম্ভব নয়।’
এসব কারণেই সুর নরম করতে হয়েছে মোদীকে। তাইতো কোঝিকোড়ে বিজেপির জাতীয় পরিষদের বৈঠক উপলক্ষে জনসভায় বললেন, ‘শান্তি ও শুভবুদ্ধিই কেবল আমাদের ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল করতে পারে। যুদ্ধে দুর্দশা বাড়ে।’