পতাকা ডেস্ক : নারী পুলিশ সার্জেন্ট মহুয়া হাজংয়ের বাবা দুর্ঘটনার শিকার মনোরঞ্জন হাজংয়ের বিরুদ্ধে বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তাকে ধাক্কা দেয়া গাড়ির চালক।
দুর্ঘটনার জন্য মনোরঞ্জন হাজংই দায়ী এবং তাকে আসামি করে মামলা দেয়া উচিত বলেও জিডিতে লিখেছেন সাঈদ হাসান নামের ওই ব্যক্তি।
গত ২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের চেয়ারম্যানবাড়ী এলাকায় ইউটার্নে একটি দ্রুতগতির বিএমডব্লিউ গাড়ির ধাক্কায় আহত হন মনোরঞ্জন হাজং। পরে তাকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) নেয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার করে তার ডান পা বাদ দেয়া হয়। এরপর তাকে বারডেম হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি।
এদিকে দুর্ঘটনার পর আহত মনোরঞ্জনকে ‘পর্যাপ্ত’ আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হয়েছে বলেও দাবি করেছেন সাঈদ হাসান।
ওই ঘটনার পর সার্জেন্ট মহুয়া থানায় মামলা করতে গেলে তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল পুলিশ। এ নিয়ে সমালোচনার মুখে দুই সপ্তাহ পর ১৬ ডিসেম্বর মামলা নিতে বাধ্য হয় বনানী থানা-পুলিশ। মামলায় অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করা হয়। তবে এর দুই দিন আগেই গাড়িচালক সাঈদ হাসান ওই জিডি করেন। বিস্তারিত বর্ণনায় দুর্ঘটনার জন্য মনোরঞ্জন হাজংকে সরাসরি দায়ী করেন তিনি। তবে জিডিতে নিজের বিস্তারিত পরিচয় লেখেননি।
শনিবার রাতে জিডির বিষয়ে জানতে চাইলে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আযম মিয়া বলেন, সাঈদ হাসান জিডিতে যা-ই উল্লেখ করুক না কেন, তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, ধাক্কা দেওয়া গাড়িটির (ঢাকা মেট্রো ঘ-১৫-৪৯০৬) মালিকানা জানতে বিআরটিএ কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে তথ্য পাওয়ার পর গাড়ির মালিককে গ্রেপ্তার করা হবে।
১৪ ডিসেম্বর সাঈদ হাসানের করা জিডিতে বলা হয়, তার গাড়িটি মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়নি বা পেছন থেকে ধাক্কা দেয়নি। বরং বেআইনিভাবে উল্টো দিক থেকে মোটরসাইকেলটি ইউলুপে প্রবেশ করে। সেই মোটরসাইকেল আরোহী তার গাড়ির বাঁ-পাশের হেডলাইটে ধাক্কা দেয় এবং এ দুর্ঘটনার জন্ম হয়। প্রাণে বেঁচে গেলেও তার স্ত্রীর ডান হাতের তিনটি আঙুলের হাড়ে চিড় ধরেছে এবং তিনি ঘাড়ে ব্যথা পান। তিনি স্ত্রীকে ৩ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যান। তার হাতের প্লাস্টার এখনো খোলা হয়নি। সম্পূর্ণ ঘটনা সড়কের সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড হয়েছে এবং স্থিরচিত্রও আছে। পরে জানতে পেরেছেন, সংঘর্ষে লিপ্ত মোটরসাইকেলচালকের নাম মনোরঞ্জন হাজং। তার চিকিৎসার বিষয়ে ৩ ডিসেম্বর ভোর ৫টার দিকে একবার আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়। পরে রাজধানীর গ্রিন রোডের গ্রিন লাইফ হাসপাতালের এক অধ্যাপকের অধীনে চিকিৎসার পরামর্শ দিলে ওই দিন বিকেলে তাকে আরেকবার ‘পর্যাপ্ত আর্থিক সহযোগিতা’ দেয়া হয়। তবে পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেয় মনোরঞ্জন হাজংয়ের পরিবার।
জিডিতে সাঈদ হাসান লিখেছেন, সড়কের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যাবে, মনোরঞ্জন হাজং বেআইনিভাবে এবং ট্রাফিক নিষেধ অমান্য করে ইউলুপটির পশ্চিম পাশ থেকে অর্থাৎ উল্টো পথে মোটরসাইকেল নিয়ে প্রবেশ করেন। মনোরঞ্জন হাজং জানেন না, উল্টো দিক দিয়ে ইউলুপে প্রবেশ বেআইনি ও নিষিদ্ধ। তিনি এ দুর্ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। এ ঘটনা নিয়ে যদি মামলা হয়ে থাকে তাহলে সম্পূর্ণ দায় মনোরঞ্জন হাজংয়ের ওপর বর্তায়। তাকে আসামি করেই মামলা করতে হয়। তাই তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি, তার গাড়িও আটক রাখা হয়নি। অপর দিকে তার (সাঈদ হাসান) গাড়িটি বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়। প্রাণে বেঁচে যাওয়ার পর তারা ভয় পেয়ে যান। তিনি ও তার স্ত্রী এই ঘটনার ভুক্তভোগী। কেবল প্রাণে বেঁচে যাওয়ার কারণে এর দায় তার নয়।
জিডিতে বলা হয়, অহেতুক হয়রানি ও অপপ্রচার, মিথ্যা মামলা, মানসিক নির্যাতন, অর্থের জন্য চাপ দেয়া ইত্যাদি আশঙ্কা থেকে এবং প্রকৃত বিষয় উদ্ঘাটনের নিমিত্তে তদন্তপূর্বক বিষয়টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানাচ্ছেন।