
নাটোর প্রতিনিধি : দেশীয় জাতের বাঙলা ডিএপি ও পতেঙ্গা টিএসপি সার আমদানি এবং বিপননে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে গুরুদাসপুরের বিসিআইসি এবং বিএডিসি ডিলারদের বিরুদ্ধে। বরাদ্দ থাকা স্বত্তেও দীর্ঘদিন ধরে ডিলাররা এই দুইজাতের সার নিয়ে খুচরা ডিলারদের সাথে কারসাজি করছেন।
ডিলারদের এসব অনিয়ম তুলে ধরে মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলন করেছে গুরুদাসপুরের কার্ডধারী খুচরা সার ব্যবসায়ী মালিক সমিতি। এসময় উপজেলা, পৌর এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের খুচরা সার ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা খুচরা সার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি শরিফুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, প্রায় বছরখানেক হলো তারা কার্ডের মাধ্যমে সার উত্তোলন করছেন। তবে এই দীর্ঘ সময়ে দেশে উৎপাদিত বাঙলা ডিএপি ও পতেঙ্গা টিএসপি সার তাদের কাছে সরবরাহ করা হয়নি। কাগজে কলমে প্রতিমাসে বরাদ্দতাকলেও নানা অজুহাতে বিসিআইসি এবং বিএডিসি ডিলারেরা প্রভাব খাটিয়ে আমদানি বন্ধ রেখে ছিলেন।
পৌর খুচরা সার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি সাইম সরদার বলেন, খুচরা ডিলারদের পক্ষ থেকে বারবার আগ্রহ দেখালেও বিসিআইসি এবং বিএডিসি ডিলারেরা সার দুটি আমদানি করেননি। গত মাসে গণমাধ্যমে সার নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর সম্প্রতি এই দুইটি সার আমদানি করেছেন বিসিআইসি এবং বিএডিসি ডিলারেরা। ১৬ অক্টোবর খুচরা ডিলারদের কাছে এই দুইটি সার সরবরাহ করার কথাছিল। কিন্তু বিসিআইসি এবং বিএডিসি ডিলারেরা মজুত থাকা সত্তেও খুচরা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করেননি।
স্থানীয় কৃষি অফিস বলছেÑ গুরুদাসপুরে ১০জন বিসিআইসি, ১০জন বিএডিসি সার ডিলার রয়েছেন। এছাড়া গুরুদাসপুরের একটি পৌরসভা এবং ছয় ইউনিয়ন পর্যায়ে ৬১জন খুচরা ডিলার আছেন। নিয়মঅনুযায়ী বিসিআইসি এবং বিএডিসি সার ডিলারেরা প্রতিমাসে বরাদ্দমতো ইউরিয়া, পটাস, ড্যাপ, ডিএপি ও টিএসপি সার আমদানি করার কথা। এরমধ্যে দেশীয় জাতের বাঙলা ডিএপি ও পতেঙ্গা টিএসপি সার আমদানিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হিসাবমতেÑ আমাদানিকরা মোট সারের অর্ধেক খুচরা ডিলারদের মাধ্যমে গ্রামীণ পর্যায়ে এবং বিসিআইসি ও বিএডিসি ডিলারদের মাধ্যমে বাজার এলাকার কৃষকদের কাছে সরাসরি বিক্রির কথা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ইস্যুকৃত ডিলারদের নামের বরাদ্দ তালিকায় দেখা গেছেÑ চলতি অক্টোবর মাসে বিসিআইসি ডিলারদের অনুকুলে পতেঙ্গা টিএসপি সার ৩৬ মেট্টিক টন এবং বাঙলা ডিএপি ১৮২ মেট্টিকটন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চলতি মাসের এবং আগের মাসের বরাদ্দকৃত সার এখন পর্যন্ত খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করা হয়নি।
উপজেলা খুচরা সার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দু সাঈদ, পৌরর সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম এবং খুবজিপুর ইউনিয়নের সভাপতি নজরুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশে উৎপাদিত অধিক কার্যকরী সার না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। ডিলারদের কাছে এই দুই জাতের সার নাপা ওয়ায় সরকার নির্ধারিত ১হাজার ৩৫০ টাকা বস্তার পতেঙ্গা টিএসপি এবং ১হাজার ৫০টাকা দামের সার উচ্চ মূল্যে কিনছেন কৃষকেরা।
খুচরা ডিলারদের ভাষ্যমতেÑ ইউরিয়া, পটাস, ড্যাপ, ডিএপি ও টিএসপি সার বিসিআইসি, বিএডিসি এবং খুচরা ডিলারদের মাধ্যমে বিক্রি করাহয়। এরমধ্যে সরকারি বরাদ্দমতো দেশে উৎপাদিত বাঙলা ডিএপি ও পতেঙ্গা টিএসপি সার দীর্ঘদিন ধরে আমদানি করা হয়না। দেশে উৎপাদিত এই সারের পরিবর্তে মরক্ক এবং বুলগেরিয়া থেকে আমদানি করা ডিএপি ও টিএসপি সার বিক্রি করা হচ্ছে।
নাটোর জেলা বিসিআইসি ডিলার সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুল মজিদ বলেন, খুচরা ডিলারদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। মূলত তারা সরকারি রেজুলেশন মোতাবেক সার সরবরাহ করছেন। সার নিয়ে কারসাজির কোনো সুযোগ নেই।
গুরুদাসপুর কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন, সার মজুত রেখে সরবরাহ না করার সুযোগ নেই। খোঁজ নিয়ে ডিলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।