বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের আহবায়ক ড. কামাল হোসেন বলেছেন, নির্বাচনকে ঘিরে যা ঘটেছে তার বিচার করার ক্ষমতা তাদের নেই।
গত ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভোট কারচুপিসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে শুক্রবার এক গণ-শুনানির আয়োজন করেছিল ঐক্য ফ্রন্ট এবং ড. হোসেন সেই উপলক্ষেই এই মন্তব্য করেন।
নির্বাচনে অংশ নেয়া জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের অধীন নানা দলের ৩০০ জন প্রার্থী শুক্রবার জড়ো হয়েছিলেন ঢাকায়।
শুরুতেই বিএনপি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন চকবাজার অগ্নিকাণ্ডের কারণে এই গণ-শুনানি স্থগিত বা সংক্ষিপ্ত করা যায় কিনা সে ব্যাপারে।
নিহতদের স্মরণে কোরআন তেলাওয়াতের পর মঞ্চে উঠে একে একে নির্বাচনের আগে-পরের নানা ঘটনা নিয়ে নিজেদের অভিযোগগুলো তুলে ধরেন প্রার্থীরা।
তাদের একজন শামা ওবায়েদ। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ফরিদপুর-২ আসনে লড়েছিলেন।
তিনি বলছিলেন, “তিনশ আসনের মতো আমার আসনেও একই অবস্থা হয়েছে। এবং শুধু নির্বাচনের দিন নয়, নির্বাচনের আগের তিন সপ্তাহ ধরে, আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীর হয়রানি হয়েছে। আমার একশর উপরে নেতাকে এক সপ্তাহে অ্যারেস্ট করা হয়েছে।”
“নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা ছিল যে কোন নতুন মামলা দেয়া হবে না, তারপরও আমার নেতাকর্মীদের নতুন মামলায় জেলে দেয়া হয়েছে।”
এমন অভিযোগ নির্বাচনের আগে থেকেই শোনা গেছে বিরোধী নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে।
নির্বাচনের দিন থেকে শোনো গেছে ভোটের আগের রাতে ব্যালট ভরে রাখার অভিযোগ, বিরোধী পোলিং এজেন্টদের ভয়ভীতি প্রদর্শন বা ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের না ঢুকতে দেয়ার অভিযোগ।
নানা অভিযোগ সত্ত্বেও টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। চীন, রাশিয়া বা ভারতের মতো দেশ তাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছে।
পশ্চিমা অনেক দেশ উদ্বেগ ও সুষ্ঠু তদন্তের কথা জানালেও কঠোর ভাষায় নিন্দা জানায়নি কেউই।
এই প্রেক্ষিতে একটি গণ-শুনানি এখন কতটা কাজে আসবে?
হবিগঞ্জ-১ আসনে গণফোরাম প্রার্থী রেজা কিবরিয়া বলছিলেন, “এটার উদ্দেশ্য ছিল টু পুট ইট অন দ্যা রেকর্ড। কি ঘটেছে সে ব্যাপারে সব প্রার্থীদের কথা একটা রেকর্ডে রাখার জন্য। এই শুনানি থেকে সবাইকে একটা কথা বলার সুযোগ দেয়া হল। অনেক দিন পর সবার দেখা হল। এবং আমরা যে একটা ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ মানুষের ভোটের অধিকার ফেরত নেয়া- এটাই সবচাইতে বড় কথা।”
তার ভাষায়, এই নির্বাচনের মাধ্যমে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন আবারো প্রমাণিত হয়েছে।
কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নাকচ হয়ে গেছে অনেক আগেই। সেই আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত করতে সফল হয়নি বিএনপি।
নির্বাচনের প্রয়োজনে গড়ে ওঠা জোট ঐক্য ফ্রন্ট বিভিন্ন সময়ে ঐক্য প্রদর্শন করার ক্ষেত্রে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে জামায়াত ইস্যুতে। ভোটের পর শপথ নেয়া না নেয়া নিয়ে দ্বিধা ছিল।
শুনানির সময় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মঞ্চে উপবিষ্ট প্যানেলে নয় বরং দেখা গেছে দর্শক সারিতে।
এই জোট এখন সামনে কিভাবে এগুনোর কথা ভাবছে?
ঐক্য ফ্রন্টের সাথে রয়ে যাওয়া বিকল্পধারার আরেকটি অংশের মহাসচিব শাহ আহমেদ বাদল বলছিলেন, “এখন পরিকল্পনা হচ্ছে জনগণ এই রাষ্ট্রের মালিক। এই মালিকানার অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য, ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য আমাদের রাস্তায় নামা ছাড়া আর কোন গত্যন্তর নেই।”
কিন্তু সেরকম শক্ত অবস্থানে কি আছে এই জোট? সে প্রশ্নটি অবশ্য রয়ে যাচ্ছে।