মাহিদুল ইসলাম মাহি, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ১৩টি মৌজার ১২টি মৌজা পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। অবশিষ্ট রয়েছে গৌড়বড়দিয়া মৌজা। সে মৌজারও অবশিষ্ট অংশের বাসিন্দারা ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে। সম্প্রতি কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ২ নং ও ৩ নং ওয়ার্ড এর
পদ্মা নদী তীরবর্তী মালুচি ও কুশিয়ারচরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নতুন করে নদী ভাঙনের আতংকে রয়েছে
পদ্মাপাড়ের হাজারো মানুষ। ভাঙন ঝুঁকিতে কুশিয়ারচর গায়েনবাড়ি মসজিদ, হোসেন শাহের মাজার ও মালুচি মসজিদ ও অর্ধশতাধিক বাড়িঘর রয়েছে। স্থায়ী বেরি বাঁধের দীর্ঘদিনের দাবি স্থানীয়দের।
মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে গেলে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শামিম গাজীর সাথে।
তিনি জানান, কয়েক বছরে পদ্মার ভাঙনে ১৩টি মৌজার ১২টি মৌজাই পদ্মায় ভেঙে গেছে। পদ্মার ভাঙনে এ ইউনিয়নের ৭০-৭৫ শতাংশই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত তিন বছরে কোর্টকান্দি, মুহম্মদপুর ও
বৌদ্ধকানিতে পদ্মার ভাঙনে শত শত বিঘা জমি ও বাড়িঘর ভেঙে গেছে। গত ১০-১৫ দিন ধরে নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের কুশিয়ারচর থেকে শিবালয় উপজেলা শুরুর প্রান্তে মালুচী ঘাট এলাকায় তীব্র স্রোত এবং ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙন দেখা দিলে বালু ভর্তি জিও ব্যাগসহ কয়েক জায়গায় ভাঙন দেখা দেয়।
ভাঙনকবলিত এলাকায় আরো দেখা যায়, প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় নদী তীরবর্তী কৃষিজমির অনেক জায়গায় ফাটল ধরেছে। নদীর তীরবর্তী স্থানে পানির গভীরতা বেশি হওয়ায় পানি বৃদ্ধির সাথে তীব্র স্রোত তৈরি হয়েছে।
কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন ২ নং ওয়ার্ড সদস্য তোফাজ্জল হোসেন বলেন, কুশিয়ারচর এলাকার ফৈজদ্দীনের বাড়ি, বেলায়েত মেম্বার,নুরুল, বনি, রাকিব, বারেক গাজী, আঈয়ুব খাঁ, গেন্দু বেপারী, বিশু বেপাড়ী, লালন,
জিয়াউর মেম্বারের বাড়ি এবং মালুচি এলাকার শাহাজদ্দীন, লালমিয়া,আখিজদ্দিন ও ফুলুর বাড়ি ভাঙন ঝুঁকিতে
রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়া না হলে বাড়িগুলো পদ্মায় বিলীন হয়ে যাবে।
কুশিয়ারচর গ্রামের বেলায়েত মেম্বার বলেন, (৪৫) বলেন, আমাদের বাড়িটি ১২০ শতাংশের বেশি বড় ছিলো। ৭০-৮০ শতাংশ ভেঙে গেছে। বাড়ির সামনে জিও ব্যাগ ছিলো তাও ধ্বসে গেছে। একটি পামওয়েল গাছ সহ বাড়ির কিছু অংশ ভেঙে গেছে। দ্রুত সময়ে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাই। একটা স্থায়ী বেরি বাঁধ চাই আমরা।
একই গ্রামের কৃষক ফয়েজউদ্দীন বলেন, কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের বাগমাড়া আগে বাড়ি ছিল। দুইবার বাড়ি ভাঙার পর ৬-৭ বছর আগে কুশিয়ারচর এলাকায় বাড়ি করলাম। কৃষি কাজের পাশাপাশি মাছও ধরি। অনেক কষ্টে একটা ঘড় দিলাম। তাও যেকোন সময় ঘড়বাড়ি পদ্মায় চইলা যাইবো। কয়েক চাপ মাটি পড়লে আমার ঘড়ডা পদ্মায় চলে যাইবো। মালুচি এলাকার আখিজদ্দীন বলেন,কুশিয়ারচর ও আমার বাড়ির এখানে মালুচিতে বস্তা না ফেললে আমার বাড়ি ও কুশিয়ারচরের কয়েকটি বাড়ি যেকোন সময় ভেঙে যাবে।
কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী বনি ইসলাম রূপক বলেন,‘কয়েক বছরে পদ্মার ভাঙনে ১৩টি
মৌজার ১২টি মৌজাই ইতোমধ্যে পদ্মায় ভেঙে গেছে। এখন শুধু গৌড়বোরদিয়া মৌজা অবশিষ্ট আছে । গত দুই- তিন বছরে কোর্টকান্দি, মুহম্মদপুর ও বৌদ্ধকান্দিতে পদ্মার ভাঙনে শত শত বিঘা জমি ও বাড়িঘর বিলীন হয়েছে। পানি বৃদ্ধির সাথে পদ্মার পানির স্রোতে কয়েকদিন আগে বিল্লাল মেম্বাবের বাড়ির সামনে জিও ব্যাগ ধ্বসে গেছে। এখনো ৫০০ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ পড়েনি। বিষয়টি ফোনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও কে জানিয়েছি। ইউএনও মহোদয় ও জানেন।
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.শাহরিয়ার রহমান আজকের জানান, ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা কাঞ্চনপুরের কুশিয়ারচর ও মালুচি এলাকার বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, হরিরামপুরের চরাঞ্চলে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধে কাজ শুরু হয়েছে। কুশিয়ারচর ও মালুচি এলাকায়ও দ্রুত সময়ের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ৫০ বছর আগে থেকে পদ্মার ভাঙনে এ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টি ইউনিয়নে পদ্মা ভাঙনে ঘরবাড়ি জমি জমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে হাজার হাজার পরিবার। গত ৭-৮ বছরে উপজেলার ধূলশুড়া ইউনিয়ন থেকে কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পর্যন্ত নদী ভাঙন রোধে তীর রক্ষা কাজে শতশত কোটি টাকার জিও ব্যাগ ফেলে অস্থায়ী তীর রক্ষা বাধেঁর কাজ করা হয়েছে।