পতাকা ডেস্ক : বিশিষ্ঠ চিন্তাবিদ ও লেখক সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচার এই নামেই ৭১ সালের মুক্তি যুদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি গিয়ে দাঁড়ায় গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এবং ধর্ম নিরপেক্ষতা। আওয়ামী লীগ সরকার পরে এর সঙ্গে জাতীয়তাবাদ যুক্ত করেছিল ৭২ সালে। যে দেশে একজন মানুষও গুমের শিকার হয় সেখানে সংবিধান লঙ্ঘিত হয়। যেখানে একজন মানুষকে বিনা বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয় সেখানে সংবিধান থাকে না। র্যাব গঠন মৌলিক অধিকারের সঙ্গে যায় না।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নগরের আলী আহাম্মদ চুনকা মিলনায়তনে ধাবমান সাহিত্য আন্দোলন আয়োজিত গণতান্ত্রিক বিপ্লবে জাতীয় সংবিধানের রূপরেখা শীর্ষক বিষয়ে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, যার কাছে যা পাওয়া যাবে উচিত হবে তার কাছ থেকে তাই নেওয়া। এক নেতা এক দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ এটা একটা ফ্যাসিষ্ট কনসেপ্ট। জাতির পিতার ছবি টানাতে হবে এটা একটা ফ্যাসিস্ট বিধান।
ড. ইউনূসের জাতিসংঘ সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনি এই সফরে ৩ জন ছাত্র প্রতিনিধিকে নিয়ে গিয়ে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। এ নিয়ে অনেক কথা হতে পারে। কিন্তু তিনি আক্ষরিক অর্থে বুঝিয়েছেন যে এই কনসেপ্টটা তাদের মাথা থেকে এসেছে। তিনি তাদের কৃতিত্বটা প্রতীকী আকারে তুলে ধরেছেন। কারণ তিনি ১৫৮ জন সমন্বয়ককে তো নিয়ে যাবেন না। চিন্তা করুন ৭২ সালের পর এই দেশের রাষ্ট্রপতির যখন জাতিসংঘে গিয়েছেন তারা কি কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। না নেননি। যারা বীরশ্রেষ্ঠ যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছিলেন তারা হয়তো ছিলেন না, কিন্তু যারা বেঁচে ছিলেন বীরউত্তর তাদের মধ্যে থেকে তো কাউকে নিতে পারতেন।
তিনি বলেন, সংবিধানে বলা আছে কাউকে বিনা বিচারে আটকে রাখা যাবে না। কিন্তু ৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে বলা আছে বিনা বিচারে ১২০ দিন আটকে রাখতে পারবেন।
এরপর জেলা ম্যাজিস্টেট্রট সেটিকে আবার ৬০ দিন করে বাড়াতে পারবেন। এভাবে একজন মানুষকে বিনা বিচারে সারাজীবন আটকে রাখার বিধান তিরি হয়েছিল। আটকে রাখা একটা সম্মানের বিষয়। কিন্তু তারা তো আটকেও রাখে না, ক্রসফায়ারে দিয়ে মেরে ফেলে।
তিনি বলেন, সংবিধানে উল্লেখ আছে যারা নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা করবে তাদের শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু যারা সংবিধানের উপর বসে গুম খুনের আদেশ দেবেন তাদের কী হবে? তাদেরও তো মৃত্যুদন্ড হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রে মৌলিক অধিকার না থাকলে রাষ্ট্রই ব্যর্থ। বুঝতে হবে রাষ্ট্রই গঠিত হয়নি। তিনি বলেন, আমরা চাইব সবার জন্য সমান অধিকার। দীর্ঘ বক্তব্য শেষে তিনি উপস্থিত সুধীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
তার বক্তব্য শুনতে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জের সংস্কৃতজন রফিউর রাব্বি, জাহিদুল ইসলাম ভূইয়া, আইনজীবী আওলাদ হোসেনসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংগঠকরা।