জাতীয়শিরোনাম

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করা হবে-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

মিয়ানমার থেকে সেনাবাহিনীর হত্যা-নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের শরণার্থী ক্যাম্পের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত রবার্ট আর্ল মিলার, কানাডার হাইকমিশনার বেনোইট প্রিফন্টেইন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কয়েকটি ইইউ এনজিও প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে রোহিঙ্গারা রয়েছে। আমাদের হিসাব অনুযায়ী দেশে এখন কমবেশি ১১ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। তারা (কূটনীতিকরা) রোহিঙ্গা ক্যাম্প নিয়ে আমাদের চিন্তা-ভাবনা জানতে চেয়েছিলেন। আমরা তাদের জানিয়েছি, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো কতদিন থাকবে আমরা নিজেরাও জানি না। আমরা মনে করছি, যে কোনো সময়ই এ প্রবলেমটা সলভ হবে।
তিনি বলেন, (রাষ্ট্রদূতদের) বলেছি জাতিসংঘ থেকে বারবার চাপ দেয়া হচ্ছে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য। কিন্তু তারা (রোহিঙ্গা) যাচ্ছেন না, প্রত্যেকবারই নানা প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। রোহিঙ্গারাও আগ্রহী হচ্ছেন না ফিরে যেতে। ফিরে গেলে জীবনের নিরাপত্তা ও অন্য নিরাপত্তা তারা পাবে না এ রকম মনে করছেন। এগুলো নিয়েই আলোচনা হয়েছে।
কূটনীতিকরা রোহিঙ্গাদের সমাবেশের বিষয়টি উত্থাপন করেছেন জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছি, বেঁচে থাকার যে আকুতির কথা তারা সারা পৃথিবীকে জানিয়েছে, আমরা মনে করি তারা যথার্থভাবেই জানিয়েছে। আমরা সেটা নেগেটিভভাবে চিন্তা করছি কিনা, সেটাও তারা জিজ্ঞাসা করেছেন। আমরা নেগেটিভ চিন্তা করব কেন? বেঁচে থাকার জন্য একত্রিত হয়ে তারা যেটা বলেছে আমরা মনে করি এটা তারা করতেই পারে।
তিনি বলেন, তারা জানতে চেয়েছিলেন, আমরা নাকি ক্যাম্পগুলোতে বেড়া নির্মাণ করছি- আমরা বলেছি, প্রধানমন্ত্রী (কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের) নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রাথমিক অবস্থায় কাজ শুরু হবে। সব ক্যাম্পেই কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করব। তারা (কূটনীতিকরা) বলছিলেন, এটা (রোহিঙ্গা ক্যাম্প) জেলখানা হবে কিনা? বলেছি, জেলাখানা হবে না। পৃথিবীর অনেক দেশেই জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত বা শরণার্থী যাই বলুন, উদাহরণ দিয়েছি তুরস্কে সিরিয়ার শরণার্থী রয়েছে, তারা যাতে ছড়িয়ে যেতে না পারে, সেজন্য আমরা এ ব্যবস্থা করছি। তারা এক জায়গায় থাকলে ফিরে যেতে পারবে এটাই আমরা বিশ্বাস করি।
মন্ত্রী আরও বলেন, বেড়া দিলে রোহিঙ্গারা কীভাবে থাকবে- সেটা তারা জানতে চেয়েছিল- বলেছি, তোমরা যেভাবে কাজ করছ, ঠিক সেভাবেই কাজ করবে। পৃথিবীর আর দশটা দেশে যেভাবে কাজ হয়, আমরা সেই নীতিটাই ফলো করব। আমরা কেন বেড়া দিচ্ছি সেটা নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছেন, কেন আমরা দিচ্ছি- সেটাই আমরা ব্যাখ্যা দিয়েছি। প্রত্যেকটি ক্যাম্পেই কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়ে গেছে, এর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা আরও বলেছি, রোহিঙ্গারা মূল ভূমিতে এখনও যাতায়াত করে, তারা ইয়াবা নিয়ে আসছে। কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার উদ্দেশ্যটাই হচ্ছে এসব, যাতে এখানে নতুন করে টেরোরিস্ট তৈরি না হয়। মানব পাচারকারীদের হাতে তারা যাতে না পড়ে। কাঁটাতারের বেড়া দেয়া মানে এই নয় যে তারা জেলখানায় আবদ্ধ হবে। তাদের (রাষ্ট্রদূত ও এনজিও প্রতিনিধি) জানিয়েছি আপনারা যেখানে যাবেন, কার্যকলাপ সুন্দরভাবে করবেন, আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। আমরা শুধু তাদের নজরদারিতে রাখতে চাই।
সরকার এতদিন কেন বেড়া দেয়নি- জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমরা তো বলতে পারছিলাম না, আমাদের এ সমস্যাটা কবে সমাধান হবে। আগামী মাসে না আগামী বছরে না আরও পাঁচ বছর থাকবে। এজন্য ডিলে হয়েছে। এখন দেখছি এটা খুব সহজে সলভ হবে এ রকম বিশ্বাস আমাদের হচ্ছে না। সেজন্য কাঁটাতারের বেড়া দেব।
এনজিওকর্মীদের ভিসা নিয়ে কূটনীতিকদে সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা বলেছি, যারা এনজিও কর্মী হিসেবে রোহিঙ্গাদের সেবা দিতে আসবে তাদের ভিসা আমরা সবসময়ই দিয়ে আসছি। কিন্তু ইদানিংকালে যেটা দেখছি, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা দেখছি, একজন পুলিশকেও তারা হত্যা করেছে। নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা ক্যাম্পের ভেতর দেখছি। তারা সবাই স্বীকার করেছেন যে, যথাসম্ভব রোহিঙ্গাদের তাড়াতাড়ি ফিরে যেতে হবে। অল্প বয়সী যারা এসেছে তাদের শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। আমি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী সেই দেশের কারিকুলাম, সেই দেশের ভাষা দিয়ে এদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। তারা আমাদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা বললাম, মোবাইল ও ইন্টারনেটের জন্য সময়সূচি বেঁধে দেয়া হয়েছে। তারা যাতে বিদেশি টেরোরিস্টদের আওতায় যেতে না পারে, তারা যাতে রেডিক্যালাইজড না হয়, সেজন্য এ ব্যবস্থা। আপনাদের যাতে সমস্যা না হয় সেটা আমরা দেখব।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তায় আরও একটি ব্যাটালিয়ন করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, এটা সবই আছে, পুলিশ আর্ম ফোর্স ব্যাটালিয়ন তৈরি হচ্ছে সেখানে নতুন করে। সেখানে বিজিবি ও র‌্যাবের সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে। যাতে আইনশৃঙ্খলা অটুট থাকে।
ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আসবেন তিনি নির্দেশনা দেবেন, ভাসানচর রেডি আছে। এটাও নির্ভর করে ইউএনএইচসিআর (জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা) ও যারা এনজিও রয়েছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রধানমন্ত্রী নিয়ে যাবেন। এরকম চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button