sliderবিবিধস্পটলাইট

মা দিবসের আদ্যোপান্ত

বুশরা আমিন তুবা : মা। কথাটি খুব ছোট্ট কিন্তু এর বিশালতা ব্যাপক। এই পৃথিবীতে আমরা মায়ের কারণেই আসতে পেরেছি। মা সহস্র ত্যাগের মাধ্যমে আমাদের এই ‘কঠোর’ পৃথিবীতে পথ চলতে শিখিয়েছেন, বেঁচে থাকার পথ দেখিয়েছেন। মা দিবস পালন করার বহু নিয়ম-কানুন প্রচলিত আছে সমগ্র দুনিয়া জুড়ে। এটি নতুন কিছু নয়। তবে সব দিবসের একটি ইতিহাস আছে। ‘মা দিবসের’ ইতিহাস কী? চলুন জেনে নিই গল্পে গল্পে-
মা দিবসের ইতিহাস
ঐতিহাসিকভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম সম্পর্ক স্থাপন এবং বজায় রাখার ক্ষেত্রে মায়েদের ভূমিকা অপরিসীম। পরিবার থেকে নিয়ম কানুন মায়েরা প্রথমে নিজেরা শেখেন, জানেন এবং সেগুলো নিজ সন্তানের কাছে পৌঁছে দেন। এতে করে তাঁরা নির্ভরতার সেতু হিসেবে কাজ করেন। মায়ের এই ভূমিকাই ‘মা দিবসের’ ঘটনার পেছনের অংশ। কিন্তু এটিই সব নয়।
কিছু মানুষ মনে করেন, হলমার্কই প্রথম মা দিবসের ছুটির ব্যাপারটি স্থাপন করেছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল কার্ড, ফুল এবং উপহার বিক্রি করা এই বিশেষ দিনে। আবার অনেকেই মনে করেন যে সকল মায়েরা গৃহিণী, তাদের অন্তত একদিন ছুটি দেয়ার জন্যই এই দিবসের প্রবর্তন। আমাদের বর্তমান সমাজ হলো ভোক্তাবাদী, তারা ছুটি পেলেই সন্তুষ্ট বোধ করেন। মা দিবসে মায়েদের ছুটি শুধুমাত্র পরিবারকে সময় দেওয়ার জন্যে নয়। এছাড়া আরও অনেক কারণ লুকায়িত আছে এই দিনের পেছনে। দিনটি ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক উভয় স্তরে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের নারীদের প্রতিজ্ঞার বিষয়। এটি নারীদের সম্মান করে যারা না শুধুমাত্র তাদের নিজের শিশুদের জন্য বরং একটি সম্পূর্ণ ভবিষ্যত প্রজন্মের পক্ষে কাজ করেছেন।


শেকড়ের গল্প:
গ্রীক ও রোমানদের উদযাপন
মা দিবস এখন আন্তর্জাতিকভাবে ছুটির দিন। কিন্তু এটি নতুন নয়। বহু আগে থেকেই এই ছুটির প্রচলন ছিল। প্রাচীন গ্রীসে বসন্তের সময়ে মাতৃদেবী রিয়ার অর্চনা করা হতো। গোধূলী বেলায় লোকেরা মধু-রুটি, পানীয় ইত্যাদি দিয়ে অর্চনায় শরিক হতেন।
প্রাচীন রোমের অধিবাসীদের ও ‘মাগনা মাতার’ নামে একজন মাতৃদেবী ছিলেন। তার উদ্দেশ্যে একটি মন্দির নির্মিত হয়েছিল। প্রতি বছর মার্চ মাসে তার উদ্দেশ্যে আনন্দ উদযাপিত হতো। দেবীমাকে খুশি করার জন্য দর্শনার্থীরা হরেক রকমের উপহার আনতেন।
প্রাচীন ইংল্যান্ডে মা দিবস উদযাপন
১৬০০ সালের দিকে ইংরেজরা ‘মাদারিং সানডে’ পালন করতো মায়েদের সম্মানার্থে। তখনকার সময়ে অনেক দরিদ্র নারীরা পরিবার থেকে দূরে গিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন মানুষের বাসায় কাজ করে। ওই একটা দিন তাঁরা ছুটি পেতেন এবং পরিবারের সাথে দিনটি পালন করতেন। উৎসবের আয়োজন আরও প্রগাঢ় করতে বিভিন্ন রকম পিঠার আয়োজন করা হতো।
ছবি : সংগৃহিত

প্রাচীন আমেরিকায় মা দিবস উদযাপন
প্রাচীন আমেরিকায় মা দিবস উদযাপন শুরু হয় কবি এবং লেখিকা জুলিয়া ওয়ার্ড এর চেষ্টায়। সময়টা ছিল ১৮৭২ সাল। মা দিবসের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তিনি তখন কাজ করছিলেন। তিনি এই বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রক্লেমেশন পাস করানোর চেষ্টা করেন এবং দিনটিকে ছুটির দিন হিসেবে প্রকাশ করার আবদার জানান। জুলিয়ার রচনা করা ‘ব্যাটেল হিম অব দ্য রিপাবলিক’ গানটিও বেশ জনপ্রিয়তা পায়।

মা দিবসের প্রেক্ষিতে আনা জার্ভিসের অবদান:
আনা জার্ভিস ছিলেন ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার একটি আদুরে মেয়ে। তিনি ‘মা দিবসের প্রতিষ্ঠাতা’ এবং ‘মা দিবসের মাতা’ হিসাবে স্বীকৃত। আনার মা মিসেস অ্যান ম্যারি রিভস জার্ভিস ছিলেন একজন কর্মী, যিনি সকল এক্টিভিস্ট মায়েদের তাদের যথাযথ স্বীকৃতি প্রদান করার চেষ্টা করতে চেয়েছিলেন। ১৯০৫ সালে মায়ের মৃত্যুর পর, আনার সংকল্প দৃঢ় হয়ে ওঠে এবং কয়েকজন সমর্থক মা দিবসে সরকারি ছুটির জন্য আনুষ্ঠানিক ছুটি চেয়ে ক্ষমতার লোকেদের চিঠি লিখতে শুরু করে। মাতৃমৃত্যুর দিন উদযাপন করার জন্য, আন্না তার স্থানীয় এলাকাবাসীদের তার মায়ের প্রিয় ফুল কার্নেশান পাঠাতে শুরু করলো যাতে লোকেরা তাদের মায়ের সম্মানে সেগুলো পরিধান করে। ধারণাটি বছরের পর বছর ধরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং ১৯১০ সালে ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া মাতৃদিবসের ছুটি প্রদান করার দিক থেকে প্রথম রাষ্ট্র হয়ে উঠেছিল। শেষমেশ ১৯১৪ সালের ৮ মে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে ‘মা দিবস’ ঘোষণা করে চুক্তিপক্ষ সাক্ষর করে।
এভাবেই সমগ্র পৃথিবী জুড়ে ‘মা দিবস’ পালন শুরু হয় এবং এই ঐতিহ্য এখনো পালিত হচ্ছে। প্রত্যেকটি মা সুস্থ, সুন্দর ও সামগ্রিক ভালোবাসার অধিকারী হন, এই শুভকামনা রইলো সকল মায়েদের প্রতি।
সূত্র: প্রিয়.কম

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button