মোঃজাকির হোসেন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি: দুস্থ অসহায় জনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঈদ উপহার ভিজিএফের ১০ কেজি চাল প্রদানের দুই শতাধিক স্লিপ কিনে নিয়ে শিশুদের দিয়ে চাল তুলে অবৈধ মজুদের দায়ে একটি টেলিকম দোকান সীলগালা করেছে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি)। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (১৭ এপ্রিল) বিকাল ৪ টায় নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নে।
জানা যায়, সোমবার সকাল থেকে বোতলাগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদে আসন্ন ঈদুল ফিতরের ভিজিএফের চাল বিতরণ শুরু হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের প্রবেশ গেটের সাথে লাগোয়া ভাই ভাই টেলিকম দোকান মালিক লিটন তার ভাই চালের পাইকার ও ইউপি চেয়ারম্যানের একান্ত কর্মী ম্যানেজারকে দিয়ে শতাধিক স্লিপ কিনে নিয়েছে। সেই স্লিপ কয়েকজন শিশুকে দিয়ে বার বার পাঠিয়ে চাল তুলেছে। প্রতিবার শিশুদের ১০ টাকা করে দেয়া হয়েছে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দৈনিক আনন্দ বাজার প্রতিনিধি শাহজাহান আলী সরেজমিনে গিয়ে এর সত্যতা পায়। তিনি শিশুদের স্লিপ দেয়ার দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও করার সময় ম্যানেজার ও তার বাবা জব্বর আলী বাধা দেয়। তারা বলে টাকা দিয়ে স্লিপ কিনে চাল তুলছি। তাতে কার কি? আমরা পরিষদের খাস লোক। আমরা নিবোনা তো কে নিবে? চেয়ারম্যান মেম্বার কিছু বলছেনা আপনাদের এত মাথা ব্যাথা কেন? এক পর্যায়ে তারা মোবাইল কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে।
এসময় সংবাদদাতা জাকির হোসেন এগিয়ে আসলে তারা তাড়াতাড়ি দোকান বন্ধ করে স্লিপগুলো নিয়ে পরিষদের ভিতরে চলে যায়। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল রায়হান কে জানালে তিনি এসিল্যান্ড আমিনুল ইসলামকে পাঠান। এসিল্যান্ড উপস্থিত হওয়ামাত্র দোকান মালিক লিটন, তার বাবা জব্বর আলী এবং বড় ভাই চালের পাইকার ম্যানেজার পালিয়ে যায়।
এসিল্যান্ড আমিনুল ইসলাম ইউপি চেয়ারম্যানকে ডেকে এবং গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে জব্বর আলীকে ধরে আনেন। তিনি তালা খুলে দিলে দোকানে তল্লাশি চালানো হয় এবং পরে দোকানের সব চাবি জব্দ করে নতুন একটি তালা লাগিয়ে সীলগালা করে দেয়া হয়। অধিকতর তদন্ত করার পর এব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং ততদিন দোকান তালাবন্ধ থাকবে বলে নির্দেশ দেন এসিল্যান্ড।
এলাকার লোকজনের অভিযোগ এই দোকানের সব স্লিপ ২ নং ওয়ার্ডের মেম্বার জাহাঙ্গীর ইসলাম ময়নুল ও ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান সরকার জুনের। ম্যানেজারের মাধ্যমে তার ভাই ও বাবার সহযোগীতায় স্লিপের চাল তুলে আত্মসাৎ করা হচ্ছিল। এলাকাবাসী তাদের বাড়ি তল্লাশির দাবী জানান। এসময় তারা আরও বলেন, দরিদ্র মানুষেরা কোন স্লিপ পায়নি। সব পাইকারদের কাছে বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। তারা সঠিক তদন্ত করে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবী তোলেন।
কিন্তু এসিল্যান্ড তাদের কথা শুনতে চাননি বলেও তারা ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেন। এসময় এলাকার সাধারণ মানুষের জটলা বাধে ঘটনাস্থলে। এসিল্যান্ড চলে যাওয়ার পর ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান সরকার জুন ও ওয়ার্ড মেম্বার মইনুলের প্ররোচনায় পলাতক অবস্থা থেকে বেড়িয়ে এসে চালের পাইকার ম্যানেজার সাংবাদিকদের দেখে নেয়ার হুমকি দেন। এব্যাপারে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার প্রস্তুতি চলছে।
ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান সরকার জুন বলেন, আমরা সঠিকভাবেই স্লিস বিতরণ করেছি। ওই দোকানের স্লিপগুলো হয়তো সাধারণ মানুষই বিক্রি করেছে। যারা বয়স্ক বা রোগাক্রান্ত তারা তাদের স্লিপ পাইকারদের দিয়ে টাকা নিয়েছে। এখন সেই স্লিপ দিয়ে পাইকাররা চাল তুলছে। এখানে আমাদের করার কিছুই নাই। তাছাড়া অনেকে চাল তোলার পর ইউনিয়ন পরিষদের বাইরে গিয়ে বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করে দিচ্ছে। এতে আমরা কি করতে পারি?
ওই ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আব্দুল মোতালেব বলেন, আমি সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি ওই দোকানের স্লিপগুলো ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার জাহাঙ্গীর ওরফে মইনুলের। কারণ সে এলাকায় কোন কার্ড বিতরণ করেনি। একই অভিযোগ করেন আজমত আলী নামে এক দিনমজুরসহ একাধিক ব্যক্তি। তদন্ত করলেই এর সত্যতা মিলবে বলে তিনি জোর অভিমত ব্যক্ত করেন।
ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোফার বলেন, কার্ডগুলো চেয়ারম্যান তার খাসলোক ম্যানেজারকে দিয়ে পাচার করে চাল আত্মসাতের মাধ্যমে অবৈধভাবে টাকা পকেটস্থ করেছে। ম্যানেজার ছাড়াও পোড়ারহাটে সজিব, কাসেম, মানিক, দুলাল নামেও আরও কয়েকজন পাইকার একইভাবে স্লিপ কিনে নিয়ে চাল তুলেছে। যার অধিকাংশই মেম্বার চেয়ারম্যানের বিক্রি করা স্লিপ।