নাম শাহনুর রহমান সিক্ত। বড় হয়েছেন তিনি জাবির পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) কোয়ার্টারে। এই নারী নিজেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থী এবং বিসিএস ক্যাডার পরিচয় দিয়ে এ পর্যন্ত ১২ জনকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছেন,করেছেন বিয়েও।
শুধু তাই নয়, চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেয়ার নাম করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়েও নিয়েছেন।
বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি) সূত্রে জানা গেছে, শাহনুর রহমান সিক্তর বাবা সেখানকার একজন গাড়িচালক ছিলেন। বাবার অকাল মৃত্যুর পর তার মা বিপিএটিসিতে আয়ার চাকরি পান। মায়ের সঙ্গে বিপিএটিসির কর্মচারী কোয়ার্টারে বড় হন সিক্ত।
গত ২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় দায়ের করা একটি প্রতারণার মামলায় সিক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই মামলার বাদী সিক্তর কথিত স্বামী এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী।
এরপর পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে এই নারীর সুচতুর সব প্রতারণার গল্প। উত্তরা পশ্চিম থানার মামলায় তিনি এখন কারাগারে।
জানা যায়, সাভারের বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) কোয়ার্টারে বেড়ে ওঠায় প্রশাসনিক পরিভাষায়ও রপ্ত তিনি। ইংরেজিতেও কথা বলতে দক্ষ এই নারী। আবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় তার বাসার কাছে থাকায় সেখানকার পরিবেশ সম্পর্কেও যথেষ্ট ভাল জানেন সিক্ত। তাই নিজেকে পরিচয় দিতেন জাবির ইংরেজি বিভাগের ৩৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে। শাহনুর আকতার নামে একজন বিসিএস ক্যাডারের নামের সঙ্গে নিজের নামের মিল থাকায় ওই পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছেন শাহনুর রহমান সিক্ত।
শাহনুর রহমান সিক্ত ছাড়াও ওই নারী সিক্ত খন্দকার, তাহামিনা আক্তার পলি ও তামিমা আক্তার পলি বলে নিজেকে পরিচয় দিতেন। ৩৬তম বিসিএস ক্যাডার শাহনুর আক্তারের নামের সঙ্গে প্রতারক সিক্তর নামের মিল রয়েছে। ফলে সিক্ত বিসিএস ক্যাডার শাহনুরের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে নিজেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিচ্ছিলেন।
এভাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রথমে বিয়ে করেন। পরে স্বামীর আত্মীয়-স্বজনদের চাকরি দেয়ার নাম করে সাত লাখ টাকা ও ১০ লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেন। এক স্বজনকে ক্যাডেট কলেজে ভর্তির নাম করে হাতিয়ে নেন মোটা অঙ্কের অর্থ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থীকেও প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে তার সর্বস্ব নিয়ে পালিয়ে যান সিক্ত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ১০-১২ বছর ধরে একইভাবে প্রতারণা করে আসছিলেন সিক্ত। জাবির সাবেক দুই শিক্ষার্থী ছাড়াও অন্তত ১০ জনকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। প্রতারণার কাজে তাকে সহায়তা করতেন পরিবারের সদস্যরাও। মামলায় সিক্তর ভগ্নিপতি আফতাব উদ্দিনকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পুলিশের উত্তরা বিভাগের ডিসি নাবিদ কামাল শৈবাল জানিয়েছেন, প্রতারণার মামলায় সিক্ত নামের ওই নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্ত এখনও চলমান। ইতোমধ্যে তার সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। বিয়ের ফাঁদে ফেলে অন্তত ১২ জনের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন এই নারী।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ. স. ম. ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, এই নারীর মতো কোনও জালিয়াতের কাছে কেউ যাতে না পড়ে সেজন্য সবার সতর্ক থাকা উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম-পরিচয় ব্যবহার করে কেউ জালিয়াতির চেষ্টা করলে তার পরিচয় জানানোর জন্যও সবার কাছে অনুরোধ জানান তিনি।
বাংলা