
চোখে আঁধার নেমে এসেছে, তো কী হয়েছে? মনে তো আঁধার নামেনি। মনের দূরবীনে চোখ রেখেই বই পড়ছেন তারা! অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এসে তারা চোখে দেখে বই পড়তে না পারলেও, হাতের আঙুলের স্পর্শে পড়ছেন ব্রেইল প্রকাশিত বইগুলো।
বলছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই জন দৃষ্টিজয়ী শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন ও তামান্না আক্তারের কথা। ব্রেইল প্রকাশনায় বই পড়ার সুযোগ পেয়ে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘আসলে আমার অনুভূতিটা আমি বলে শেষ করতে পারবো না। যারা চোখে দেখতে পায়, তারাতো বিভিন্ন পাবলিক লাইব্রেরীতে গিয়ে সারা বছর বই পড়ার সুযোগ পায়। কিন্তু আমাদের সেই সুযোগটা নেই। বইমেলায় স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা আমাকে বই পড়ার সুযোগ করে দেওয়ায় আমি আনন্দিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘জনপ্রিয় লেখকরা যদি আমাদের কথা চিন্তা করে ব্রেইল আকারে বই প্রকাশ করেন, ‘তাহলে আমরা আরও খুশি হবো।’
আরেক দৃষ্টিজয়ী শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার বলেন, ‘ব্রেইল প্রকাশনায় বই পড়ার অনুভূতি আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। বইমেলায় যারা আসছে, তারা মেলায় ঘুরে ঘুরে তাদের পছন্দের লেখকদের বই কিনে নিচ্ছে। তবে আমরাতো সেই সুযোগটা পাচ্ছি না। স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা আমাদের বই পড়ার সুযোগ করে দেওয়ায় আমরা তাদের কাছে আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।’
স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনার প্রধান উদ্যোক্তা হলেন নাজিয়া জাবীন। ২০০৯ সাল থেকে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা ব্রেইল আকারে বই প্রকাশ করছে। এ বছর বইমেলায় স্পর্শ প্রকাশনার অবস্থান বাংলা একাডেমী চত্বরের ৮৩ নাম্বার স্টল। এ বছর গল্প ও উপন্যাসসহ মোট ৮ টি বই প্রকাশ করেছে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’, জনপ্রিয় লেখক ইমদাদুল হক মিলনের ‘ ভালবাসার সুখ- দুঃখ ‘ এ ২টি বইসহ আরও ৬টি বই প্রকাশ করেছে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা।
বিনামূল্য বই বিতরণের কথা উল্লেখ করে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনার একজন কর্মী আসিফ ইকবাল বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত আমরা ৬০টিরও বেশি বই প্রকাশ করেছি। আমরা বইমেলার শুরু থেকেই দৃষ্টিজয়ীদের বই পড়ার সুযোগ করে দিচ্ছি।’
আগামী ২৫ ফ্রেব্রুয়ারী ব্রেইল প্রকাশনার বই উৎসব। যে সকল দৃষ্টিজয়ীরা রেজিস্ট্রেশন করেছেন সেদিন তাদের মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হবে। সুত্র : বাংলা