শিরোনামশীর্ষ সংবাদ

সড়ক দুর্ঘটনা: কুষ্টিয়ার যে ভিডিও নাড়া দিলো সবাইকে

কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস এলাকায় যে দুর্ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে অনলাইনে, তা আবারও খবরের শিরোনোমে উঠে এসেছে ।

চোখের পলকে ঘটে যাওয়া হৃদয় বিদারক এক দুর্ঘটনা ধরা পড়ে ওই ভিডিও-তে, আর ঘটনাটি বিস্মিত ও আতঙ্কিত করেছে তাদের সবাইকে যারা এটি দেখেছেন।

হৃদয় নাড়া দেয়া ওই ভিডিও-তে একটি বাসের ধাক্কায় মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়তে দেখা যায় একটি শিশুকে।

পরে সেই শিশুটিকে আর বাঁচানো যায়নি। আজই ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা গেছে আট মাসের শিশুটিকে।

কুষ্টিয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন ভিডিওটির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, ভিডিওতে যা দেখা যাচ্ছে ঠিক সেটিই ঘটেছে।

কী দেখা যাচ্ছে ভিডিওতে?

(ভিডিও’র দৃশ্যটি আপনি সহ্য নাও করতে পারেন।)

নাড়া দেওয়া ভিডিওটি দেখুন এখানে [ফুটেজটি যমুনা টিভি থেকে নেওয়া হয়েছে]

ভিডিওতে দেখা যায় একটি বাস দাঁড়িয়ে আছে সড়কে।

আর বাসটি যে পাশে দাঁড়িয়ে আছে তার উল্টো দিক থেকে শিশু কোলে এক নারী রাস্তা পার হচ্ছিলেন।

তিনি যখন রাস্তার অর্ধেক পার হয়ে বাসটির সামনে দিয়ে ফুটপাতে উঠবেন, ঠিক তখনই দাঁড়িয়ে থাকা বাসটি চালাতে শুরু করেন চালক।

মুহূর্তের মধ্যেই বাসের ধাক্কায় কোল থেকে ছুটে রাস্তায় পড়ে শিশুটি।

ভিডিওতে দেখা যায় বাসটি না থেমেই চলে যাচ্ছে, আর ওই নারী নিজেই রাস্তা থেকে তুলে নিচ্ছেন শিশুটিকে।

আর এর মধ্যেই আশপাশের মানুষজন ছুটে আসতে থাকে।

কিন্তু ওই নারী শিশুকোলে বসে পড়েন রাস্তায়।

এরপর জড়ো হওয়া লোকজনের মধ্যে একজন শিশুটিকে কোলে নিয়ে দৌড়ে রাস্তার উল্টো দিকে গিয়ে একটি থ্রি-হুইলারে তুলতে দেখা যায়। এরপর শিশুটির মাকেও তাতে তুলে দেয় তারা।

ধারণা করা হচ্ছে, হাসপাতালে নেয়া হয়েছে সেখান থেকে।

পরে শিশুটির অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাকে ঢাকায় আনা হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর তাকে বাঁচানো গেল না।

আট মাসের এই শিশুটির নাম আকিফা।

শিশুটির চাচা আবু বকর সিদ্দিক বিবিসিকে বলেন, মঙ্গলবার বেলা পৌনে বারোটার দিকে ঘটনাটি ঘটে।

“ঘটনাস্থলের কাছেই আমাদের বাসা। আকিফার মা রীনা তাকে কোলে নিয়ে এসেছিলো বাসে করে তাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য। বাসটি থেমে আছে দেখে সে হেঁটে রাস্তা পার হচ্ছিলো। কিন্তু প্রথম ধাক্কার পরেও বাচ্চার মা সামলে নিয়েছিলো। কিন্তু দ্বিতীয় ধাক্কায় আর হাতে ধরে রাখতে পারেনি।”

যে বাসটি রীনাকে ধাক্কা দেয়, সেটি ফরিদপুর থেকে কুষ্টিয়া হয়ে রাজশাহী যাচ্ছিল বলে জানান তিনি।

মি: সিদ্দিক বলেন, প্রথম ধাক্কা দেয়ার পর দুর্ঘটনা হয়ে গেছে ভেবে চালক জোরে গাড়ি টান দিলে দ্বিতীয় দফার ধাক্কা দিয়ে চলে যায়, আর তখনই ভয়ংকর দুর্ঘটনাটি ঘটে যায়।

পরে শিশুটিকে প্রথমে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।

আকিফাকে বাঁচাতে কাল সারাদিন ও রাত ভর চেষ্টা চালানোর পর বৃহস্পতিবার ভোর নাগাদ সে মারা যায়।

দুপুরে মৃতদেহ নিজ এলাকায় নেয়ার সময় বিবিসি বাংলার সাথে কথা বলছিলেন আবু বকর সিদ্দিক।

আর ইতোমধ্যেই দুর্ঘটনাস্থলের কাছেই একটি দোকানের সিসিটিভির ফুটেজে থাকা দুর্ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

কুষ্টিয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা নাসির উদ্দিন জানান, এখনো বাসটি আটক করতে পারেননি তারা।

“বাচ্চাটি মারা গেছে ঢাকায়। তাকে নিয়ে পরিবারের সদস্যরা ফিরলেই মামলা নেয়া হবে এবং বাস, চালক ও অন্যদের আটকের চেষ্টা আমরা করছি। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজটিও আমাদের কাছে আছে,” বলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

দুর্ঘটনা সনাক্তকরণ প্রকল্প নিয়ে শিক্ষার্থীরা
বিবিসি বাংলা

সম্পর্কিত বিষয়

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button