sliderস্থানীয়

লামায় ইটভাটার ধোঁয়া আর তামাকের ঘ্রাসে পরিবেশ বিপর্যের সম্মুখে

উথোয়াই মারমা জয়
সামাজিক বনায়ন বা পাহাড়ে বাগান। যার থেকে আমরা প্রতিনিয়ত অক্সিজেন পাই। সে সামাজিক বনায়ন বা পাহাড়ে সৃজনকৃত বাগান এখন যেন নেড়া হয়ে বসে আছে। বলা যায় অলরেডি নেড়া হয়ে গেছে। কিছুতেই তা রক্ষা করা যাচ্ছে না। কেন না রক্ষা করা যাবে? কারণ এ মৌসুম তো নেড়া হওয়ার মৌসুম। কেন বা এ মৌসুমে নেড়া করা হচ্ছে আমাদের সৃজনকৃত সামাজিক বনায়ন বা পাহাড়ে এক এক ফোঁটা করে ফেলানো মাথার ঘামের রোপনকৃত গাছগুলো? অবশেষে চোখের দেখা মিলে সে নেড়া হওয়া স্থলে যারা এতদিন আমাদের অক্সিজেন দিতো তাদের কি না করাতের সাহায্যে কর্তন করে ট্রলি টু ট্রলি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সে ইটভাটায় আর তামাক পুরানো চুল্লিতে।
এবার আসা যাক মূল কথায়। ৬৭১.৮৪ বর্গকিলোমিটার আয়তন জুড়ে লামা উপজেলায়। যেদিকে তাকায় সেদিকে দেখা মিলে প্রাকৃতি ও সৃজনকৃত সবুজ বনবনানী। আর তারও একটি ইউনিয়নের আয়তন ৬৪.৭৫ বর্গকিলোমিটার। যেখানে সবচেয়ে ইটেভাটার জোন। একটি নয় দুইটি নয় একেবারে ২৩টি ইটভাটা রয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশ ইটভাটা টিনের চিমনি, যা অবৈধভাবে স্থাপিত । তাহলে তো বুঝতে পারছেন। যেন এসব দেখার কেউ নেই, যারা আছেন তারা দেখেও না দেখার ভান করছে। যার ফলে অবৈধ ইটভাটাগুলোতে অবাধে জ্বলছে আমার-আপনার সৃজনকৃত সামাজিক বনায়নের গাছ। যে গাছটি কিনা এক সময় আমার-আপনার জন্য অক্সিজেন দিতো, পারিবারিক কোন নির্মাণ কাজে বা বাগানে রোপনকৃত গাছটি বিক্রি করে হলেও ছেলে-মেয়ের পড়ালেখা খরচে কাজে লাগাতাম। কিন্তু আজ তেমন না হয়ে উল্টো ভাবে ইটভাটায় জড়ো হচ্ছে সামাজিক বনায়নের গাছগুলো।
কোন এক কাজের ফাঁকে যাওয়া হয়েছিলো। এতদিন অন্যের মুখে কথাগুলো কানে ভাসতো। কিন্তু সে দিন নিজ স্ব চোখে দেখেছি আর দেখছিলাম। স্থানীয় সূত্রে জানা মিলে যে সড়কের উপর ৫টনের অধিক যানবাহন চলাচলের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সে সড়কে না কি প্রত্যেক দিন সরকারের নীতিমালা তোয়াক্কা না করেই ২৪ ঘন্টায় প্রায় ৮শত গাড়ি চলাচল করছে। কেও ইটভাটায় ইট পোড়ানো জন্য ট্রাক টু ট্রাক জ্বালানী কাঠ নিয়ে ঢুকছে ইটভাটায় আবার কেও কেও ট্রুলি টু ট্রুলি ইট নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কোন বিত্তবানের বসত বাড়ি নির্মাণ করার জন্য। আবার কিছু কিছু ইটভাটার সামনে লোক দেখানো কিছু কয়লা স্তুপ করে রাখা হলেও এসব কয়লা ইটভাটায় দেয়া হচ্ছে না। এসব অবৈধ ইটভাটার কারণে উক্ত ইউনিয়নের বেশির ভাগ জায়গায় কৃষি জমি নষ্ট কওে গড়ে তোলা হচ্ছে ইটভাটা। যার কারণে ইটভাটা সংলগ্ন পাহাড়ি গ্রাম রাইম্যাখোলা, শিবাতলী পাড়া, মংব্রাচিং কারবারী পাড়া,ফাদু বাগান পাড়া, হেডম্যান পাড়া ও বাঙালি পাড়ার অধিবাসী কৃষকরা পড়েছেন বড় বিপাকে।


অন্যদিকে লামায় কৃষি জমিকে গিলে খাচ্ছে তামাক। যে সময়ে কৃষকরা সবজি চাষ নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা সে সময়ে দৃশ্যমান লাভের আশায় ক্ষতির দিকটি জেনেও তারা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে তামাক চাষে। যেদিকে চোখ যায় সেদিকে শুধু দেখা মিলে তামাক ক্ষেত আর ক্ষেত। আর সে ক্ষেতে তামাক পুরানো জন্য কৃষকরাও উঁচু উঁচু তামাক চুল্লিতে স্তুপ তৈরি করছে সামাজিক বনায়নে জ্বালানি কাঠ। তামাক চারা বড় হচ্ছে কিছু দিনের মধ্যে চুল্লিগুলোতে জ্বলে উঠবে জ্বালানি কাঠ। সে তামাক চুল্লিগুলি আর ইটভাটার চিমনি থেকে বের হবে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় অধিবাসীদের সৃজনকৃত ফলজ বাগানের ফলন কমে যাচ্ছে। অন্য দিকে বিলুপ্তি হচ্ছে বন্যপ্রাণী আর রীতিমত স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকার শিশু থেকে শুরু করে বয়স্করাও।
সবশেষে ইতি টানছি এই বলেই, ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনানুগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক আর নেড়া হওয়া সামাজিক বনায়নে ভরে উঠুক সবুজের সমারোহ। কারণ একটি গাছ একটি প্রাণ, লক্ষ গাছ লক্ষ প্রাণ। লক্ষ প্রাণে বন তৈরি হয়, একটি বনে লক্ষ প্রাণ রয়। একটি বনে লক্ষ গাছ, লক্ষ পশুপাখী এসো আমর তাদের যত্ন করে রাখি।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button