sliderজাতীয়শিরোনাম

করোনাভাইরাস : সতর্কতা পরামর্শ কতটা মানা সম্ভব হচ্ছে বাংলাদেশে?

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর বাংলাদেশেও নানা ধরণের সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
বিশ্বের ৬০টিরও মতো দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হলেও বাংলাদেশে এখনো ভাইরাসটির উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
করোনাভাইরাসের এই প্রাদুর্ভাবের পর বাংলাদেশেও নানা ধরণের সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি রয়েছে কিনা সে বিষয়ে নমুনা পরীক্ষা করে থাকে বাংলাদেশের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর।
প্রতিষ্ঠানটি করোনাভাইরাস নিয়ে নিয়মিত সতর্কতামূলক পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি হটলাইনও স্থাপন করেছে।
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আইইডিসিআর-এর ওই হটলাইনে গত ২৪ ঘণ্টায় ১১০টি ফোনকল এসেছে যার মধ্যে ৬৯টি করোনাভাইরাস সম্পর্কিত। সরাসরি করোনাভাইরাস বিষয়ক পরামর্শ নিতে এসেছেন চার জন। আর এ পর্যন্ত ১০২ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে এখনো করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
কী কী পরামর্শ এসেছে?
করোনাভাইরাসের যেহেতু কোন প্রতিষেধক নেই তাই প্রতিকারের প্রতিই বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন পর্যায় ও ঘটনার প্রেক্ষিতে সতর্কতামূলক নানা পরামর্শ দিয়েছে আইইডিসিআর।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, করোনাভাইরাস ঠেকাতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা আনতে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সাধারণ নিয়ম অনুসরণের পাশাপাশি জনসমাগম ও সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার মতো নানা পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এর মধ্যে রয়েছে-
•হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় টিস্যু বা কাপড় ব্যবহার করা
•ব্যবহৃত টিস্যু সঠিকভাবে ঢাকনাযুক্ত বিনে ফেলা
•ব্যবহৃত কাপড় সাবান পানি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে ফেলা
•নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলা
•অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ না করা
•মাছ-মাংস, ডিম ভাল করে রান্না করে খাওয়া
•বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা, খুব জরুরি না হলে না যাওয়া
•অসুস্থ পশু/পাখির সংস্পর্শ পরিহার করা
•হাত মেলানো বা হ্যান্ডশেক না করা, কোলাকুলি না করা
•অসুস্থ হলে ঘরে থাকা, বাইরে যেতে হলে মাস্ক ব্যবহার করা
•জনসমাগম এড়িয়ে চলা
•অসুস্থ কারো কাছ থেকে এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখা


করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বিদেশ থেকে আসা মানুষদের কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এসব পরামর্শ কি মানা সম্ভব?
তবে অনেকেই বলছেন যে, আইইডিসিআর-এর এসব পরামর্শ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানতে পারছেন না তারা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিশাত অঞ্জন চৈতি।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের সতর্কতামূলক পরামর্শের কথা শুনেছেন তিনি। তবে সেগুলো খুব একটা মেনে চলতে পারেন না।
“করোনাভাইরাস সম্পর্কে দেখেছি আমি কী কী করতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের যে সিচুয়েশন ও কন্ডিশন সেখানে গরমের মধ্যে হ্যান্ডগ্লাভস পড়তে থাকতে পারবেন না, পাবলিক প্লেসে না চলে থাকা যায় না, এক কথায় টাচ না করে থাকা যায় না,” তিনি বলেন।
“আমি আমার জায়গা থেকে মাস্কটুকু পড়তে পারছি সর্বোচ্চ, এর বেশি সম্ভব হচ্ছে না।”
নোয়াখালী থেকে মা জেসমিন আরা আজিমের সাথে ঢাকায় চিকিৎসা নিতে এসেছেন তানজিনা আজিম। তারা বলছেন, করোনাভাইরাস বাংলাদেশে এখনো শনাক্ত না হওয়ায় এ বিষয়টিকে খুব বেশি পাত্তা দেন না তারা।
তানজিনা আজিম বলেন, “মনের মধ্যে একটু হলেও উদ্বেগ থাকে। কিন্তু আমাদের দেশের যে প্রেক্ষাপট তাতে সম্ভব না।”
“একটা জিনিস মাথায় আছে যে আমাদের দেশে এখনো স্প্রেড করে নাই, তাই মোটামুটি সিওর যে আমাদের দেশে এটা নাই। আর এজন্যই সচেতনতা কম।”
একটি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিতে চাকরি করেন আবু সাইদ রিয়াজ। তিনি বলেন পেশাগত কারণেই হ্যান্ডশেকের বিষয়টি এড়িয়ে চলতে পারেন না তিনি।
“পেশাগত কারণেই হ্যান্ডশেক করতে হয়। তবে আমার জায়গা থেকে যতটুকু সম্ভব আমি মেনে চলার চেষ্টা করি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী দৃষ্টি তালুকদার বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলা নিয়ে দেয়া সব পরামর্শ মানতে পারেন না তিনি। বিশেষ করে জনসমাগম এড়িয়ে চলা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে সাবান দিয়ে নিয়মিতই হাত ধোয়ার কথা জানান মিস তালুকদার।
তিনি বলেন,”মেনে চলছি বলতে আমি যতটুকু পারছি, সেটা করছি। কিন্তু জনসংযোগ বিচ্ছিন্ন করা তো সম্ভব না। আমার ক্লাস থাকে, আমাকে যেতেই হবে।”
“মাস্ক কিংবা বাইরে থেকে বাসায় গিয়ে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, সেগুলো তো করতেছি।”
অনেকে আবার বলছেন যে, করোনাভাইরাস সম্পর্কে শোনেননি তারা।
এক মিটার দূরত্ব
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার আগে ও পরে সতর্কতা ব্যবস্থা আলাদা হবে।
তবে কারো হাঁচি-কাশি বা জ্বর থাকলে তার অবশ্যই মাস্ক পরা উচিত যাতে অন্যদের মধ্যে জীবাণু ছড়িয়ে না পড়ে। এক্ষেত্রে তাদের সাথে এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শও দেয়া হয়েছে।
তবে আইইডিসিআরের প্রাক্তন পরিচালক ডা. মাহমুদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের মতো জন ঘনত্ব পূর্ণ দেশে দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি মেনে চলা কঠিন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারো হাঁচি-কাশি বা জ্বর থাকলে তার অবশ্যই মাস্ক পড়া উচিত যাতে অন্যদের মধ্যে জীবাণু ছড়িয়ে না পড়ে।
“এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখা সব সময় সম্ভব হবে না। বাসে বা ট্রেনে বা যেখানে অনেক বেশি লোকের সমাগম হয়, সেখানে কিন্তু এই সতর্কতা মানা যাবে না।”
তবে, বাসে উঠে হাঁচি বা কাশি হলে সেটা যতটা সম্ভব আড়াল করে দিতে হবে বলেও পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি বলেন, “আধোয়া হাত শরীরের বিভিন্ন জায়গায় যেমন চোখ, নাক, মুখে যাতে বার বার চলে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে”।
“যারা ফ্লু-এর মতো রোগের নানা উপসর্গে ভুগছেন তাদের নিজেদেরই সতর্ক হয়ে ঘরে থাকতে হবে এবং অন্যদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে যাতে তার কাছ থেকে অন্য কেউ আক্রান্ত হতে না পারে।”
মিস্টার রহমান বলেন, বাংলাদেশে যেহেতু এখনো করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি তাই এই মুহূর্তে মানুষকে বেশি বেশি জানাতে হবে যে করোনাভাইরাস ঠেকাতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ কী হতে পারে।
এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সহকারী ও কমিউনিটি নেতাদের সহায়তা নিতে হবে বলেও মনে করেন তিনি। বিবিসি বাংলা

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button