উপমহাদেশশিরোনাম

স্কুলে বাচ্চা খুন : আগুন ধরানোর চেষ্টা অভিভাবকদের

দিল্লির উপকন্ঠে গুরগাঁও-তে একটি বেসরকারি স্কুলে সাত বছরের একটি বাচ্চা ছেলে খুন হওয়ার পর ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা এদিন ওই স্কুলটিতে গিয়ে চড়াও হন এবং স্কুলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা করেন।
ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের ঠেকাতে স্কুলের বাইরে ব্যাপক সংখ্যায় পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে। স্কুল-ভবনে ঢুকতে না-পেরে তারা পাশেই একটি মদের দোকান আগুনে জ্বালিয়ে দেন।
ভারতে স্কুলের ভেতরে শিশুদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে। কিন্তু তাতে বাবা-মায়ের ক্ষোভ ও হতাশা যে কোন পর্যায়ে ঘটেছে গুরগাঁওয়ের এই ঘটনাতেই তা প্রমাণিত।
গতকাল শনিবারই আবার দিল্লির শাহদরা এলাকায় একটি স্কুলের ক্লাসরুমের ভেতর পাঁচ বছরের একটি বাচ্চা মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় রাতে গ্রেফতার করা হয় ওই স্কুলেরই এক পিওন-কে।
এর আগে গুরগাঁও-য়ের রায়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের বাথরুমে শুক্রবার সকালে ছুরি দিয়ে গলা চিরে দেওয়া হয় ক্লাস টু-র ছাত্র প্রদ্যুম্ন ঠাকুরের। সেই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে স্কুলবাসের এক কন্ডাক্টরকে।
অশোক কুমার নামে ধৃত ওই ব্যক্তি বাচ্চা ছেলেটিকে খুন করার আগে তার ওপর যৌন নির্যাতন চালানোর চেষ্টা করেছিল বলেও প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।
বাচ্চাটিকে যখন বাথরুমের ভেতর রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়, তার মাত্র মিনিট পনেরো-কুড়ি আগেই তার বাবা তাকে ও তার বড় বোনকে স্কুলের গেটে ছেড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন।
শুক্রবার থেকেই ওই স্কুলের ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা স্কুল বিল্ডিংয়ের বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন, স্কুলের ভেতর ভাঙচুরও চালানো হয়। রবিবার সেই বিক্ষোভ তীব্র আকার নেয়।

ভারতের শিক্ষামন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর

ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা মদের দোকানে অগ্নিসংযোগ করার পর তিনটি বাস বোঝাই করে পুলিশকর্মীদের এনে তাদের কোনওক্রমে নিরস্ত করা হয়। তবে তারা এখনও স্কুলের বাইরে অবস্থান নিয়ে আছেন।
এর মধ্যে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল নীরজা বাটরাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। স্কুলও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
হরিয়ানা পুলিশ জানিয়েছে সাত দিনের মধ্যে এই ঘটনার তদন্ত শেষ করে তারা চার্জশিট জমা দেবে। হরিয়ানা সরকারও বলেছে, নিহত শিশুটির বাবা-মা যদি পুলিশি তদন্তে সন্তুষ্ট না-হন তাহলে তারা অন্য যে কোনও সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করাতেও রাজি।
ভারতের শিক্ষামন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরও কথা দিয়েছেন, নিহত শিশুটির বাবা-মা যাতে ন্যায় বিচার পান যেভাবেই হোক তা নিশ্চিত করা হবে।
ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের ওপর যৌন নির্যাতন – এমন কী তাদের মৃত্যুর ঘটনাও বেড়ে চলেছে উদ্বেগজনক ভাবে।
গত বছর দিল্লিতে এই রায়ান ইন্টারন্যাশনাল গোষ্ঠীরই আর একটি স্কুলের জলের ট্যাঙ্কে পড়ে গিয়ে এক ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছিল। সে ঘটনাতেও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ ওঠে।
গত দেড়-দুবছরের মধ্যে শুধু দিল্লি ও তার আশেপাশে স্কুলে বাচ্চাদের মৃত্যু বা গুলিবিদ্ধ হওয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে।
ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের ধৈর্যের বাঁধ যে এবার ভাঙছে, গুরগাঁওয়ের ঘটনা থেকেই তা বোঝা যাচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button