sliderস্থানিয়

শিবগঞ্জে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমছে

শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) সংবাদদাতা: শিবগঞ্জে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যেতে আগ্রহ দিন দিন কমছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা। বিষয়টি শিক্ষার্থীরাও স্বীকার করছেন, তবে তাদের ব্যাখ্যা ভিন্নভাবে। কয়েকটি কলেজে ক্লাস পরিদর্শন করার সময় দেখা গেছে, একজন থেকে পাঁচজন শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতেও শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন। ইন্টারমিডিয়েট ১ম বর্ষের শুরুতে শিক্ষার্থীরা খুব উৎসাহ নিয়ে ক্লাসে অংশ নেন। তবে ছয় মাস যেতে না যেতেই উপস্থিতি হ্রাস পেতে থাকে। অভিভাবকেরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা মূল ক্লাসের চেয়ে অন্যান্য কার্যক্রমে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। আলাবক্স মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজ,রানীহাট্টি কলেজ,শাহ নেয়ামতউল্লাহ কলেজ, শ্যামপুর শিবগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ সহ প্রায় ২৫/৩০ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে ক্লাশের সময় শিক্ষার্থীরা ক্লাশে না গিয়ে গাছ তলায়, শিক্ষা প্রতিশষ্ঠানের গেটে ও দোকানে আড্ডা মারছে। এমনকি শিক্ষক দেখে সালামটুকুও দেয় না। শুধু কি তাই ছেলে শিক্ষার্থীদের দ্বারা মেয়ে শিক্ষার্থীরা ইভটিজিংয়ের শিকারও হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন মেয়ে শিক্ষার্থীরা জানান ছেলেদের ইভটিজিংযের কারণে আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঠিকমত যেতে পারি না।

সরজমিনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, পড়ার জন্য দৈনিক দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় দেন। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং অন্যান্য কাজে সাত থেকে আট ঘণ্টা ব্যয় করেন।মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, কলেজে ভর্তি হওয়ার পর ক্লাসে খুব কমই যাওয়া হয়েছে। পরীক্ষার সময় কলেজে গিয়ে নোটপত্র সংগ্রহ করতে যাওয়া হয়। তারপরও প্রথম বর্ষে ফার্স্ট ক্লাস রেজাল্ট হলেও কর্মজীবনের হতাশার কারণে নিয়মিত পড়াশোনা করতে পারেন না। ইঞ্জিনিয়ার মো. আবু বাশির নামে এক অভিভাবক বলেন, “পরীক্ষার ফলাফল হয়তো গড়পড়তা ভালো, কিন্তু শিক্ষার্থীদের জ্ঞানচর্চা সীমিত। অনলাইন গেম এবং সামাজিক যোগাযোগের অভ্যাস তাদের মূল শিক্ষার চেয়ে বেশি প্রভাবিত করছে। এভাবে চললে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানসিক ও শিক্ষাগত বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে।”আরেক অভিভাবকশওকতারা বেগম বলেন, “সন্তানকে পড়াশোনায় মনোযোগী করতে বাড়তি কোচিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। তবুও আগ্রহ বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। সদ্য এসএসসি পাস করা আমার ছেলে রাত নয়টা পর্যন্ত বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারে। আমরা মনে হয় সন্তানদের ঠিকমতো মানুষ করতে পারছিনা।”প্রভাষক মো. সফিকুল ইসলাম জানান, শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও পড়াশোনার প্রতি উদাসীনতা দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।৫০ জন শিক্ষার্থীর ক্লাস কিন্তু উপস্থিত থাকে মাত্র তিন থেকে পাঁচ জন সাত জন। এমন উপস্থিতিতে শিক্ষকরা নিজেও ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারছেন না।আগে ক্লাস না হলে শিক্ষার্থীরা মন খারাপ করত,এখন ক্লাস হলেই যেনো শিক্ষার্থীরা মন খারাপ করে।আদিনা ফজলুর হক সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাযহারুল ইসলাম তরু বলেন, সারাদেশেই অনলাইন প্লাাটফর্মের প্রতি শিক্ষার্থীদের আসক্তি লক্ষ করা যায়। আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে নিবিড় সম্পর্ক ধরে রেখেছি। এজন্য আমাদের ক্লাসে উপস্থিত যথেষ্ট। কোন শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিতি না হলে আমরা অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করি। শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে ক্লাসে আনার চেষ্টা করি। শিক্ষক ও অভিভাবকগণ দায়িত্বশীল হলে শিক্ষার্থীরা পড়াশুনোয় মনোযোগী হবে এবং ক্লাসেও উপস্তিত থাকবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button