দেশের পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে দুর্গত মানুষের জন্য ২০ কোটি টাকার বেশি ত্রাণসামগ্রী ও নগদ অর্থ সংগ্রহ করেছে বিএনপি। এসব অর্থে দুর্গত মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রমে ব্যয় করবে দলটি।
শুক্রবার সকালে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের ত্রাণ সংগ্রহ কমিটির এক সংবাদ সম্মেলনে ত্রাণ সংগ্রহ কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন,‘গত ২৫ তারিখ থেকে আজ অবধি আমরা বিএনপি এবং বিএনপি পরিবার প্রায় ২০ কোটি টাকার বেশি নগদ আর্থিক এবং ত্রাণ সহায়তা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, কুমিল্লা দক্ষিণ, কুমিল্লা উত্তর, খাগড়াছড়ি, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও চট্টগ্রামের একটা অংশকে দিয়েছি। এটা ছিল ওয়াস্ট এ্যাফেক্টেড এরিয়া। পরে চাঁদপুরের কয়েকটা উপজেলা বন্যা কবলিত হয়েছিল।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমাদের ত্রাণ কার্যক্রম ছিল বন্যার্ত মানুষকে উদ্ধার করা। এরপর ওই সময় মানুষকে খাবার সরবরাহ করা। এটি দলের জেলা, উপজেলা ও পৌর সভার দল ও অঙ্গসংগঠনের স্থানীয় নেতারা করেছেন। বিএনপি ক্ষমতায় নেই। তারপরও বিএনপি জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে ছিলেন থাকবে।
জাহিদ বলেন, ‘আমাদের ত্রাণ সংগ্রহে বিএনপির পরিবার ছাড়াও সাধারণ মানুষ, গৃহবধূ, রিকশাওয়ালা, সাধারণ শ্রমিকও এগিয়ে এসেছে। আমরা প্রতিটি টাকার হিসাব রেখেছি, যারা ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন তাদেরকে রশিদ দিয়েছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘অনেকে অনেক টাকা দিতে চেয়েছে। অনেকের টাকা নেইনি। তিনজনের টাকা ভুলে নিয়েছি। তাদের অবস্থা জানা ছিল না আমাদের। ফলে ওই টাকা আমরা টাকা ফেরত দিয়েছি। নৈতিকভাবে আমরা মনে করি, উনাদের টাকা নেয়া সঠিক হবে না, নেয়া উচিত হবে না। সেজন্য আমরা সেসব মানুষের টাকা পে-অর্ডার করে ফেরত দিয়েছি। কাজেই আমরা ত্রাণ সংগ্রহে যেমন ট্রান্সপারেন্ট ছিলাম, ত্রাণ বিতরণেরও আমরা ট্রান্সপারেন্ট আছি।’
তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া যে এই ত্রাণ পুনর্বাসনের জন্য এখন পর্যন্ত ৬০ কোটি টাকার বেশি আমাদের ত্রাণের একটি সেন্ট্রাল রিলিফ অ্যান্ড রিহ্যালিটেশন ফান্ড আছে বিএনপির দীর্ঘদিনের। সেটা এই মুহূর্তে জমা আছে। সেটা দিয়ে আমরা পুনর্বাসন কাজগুলো পরিচালনা করব। আমরা সেজন্য গণমাধ্যমসহ দেশবাসী এবং যারা ত্রাণ সহায়তা করেছেন তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।’
জাহিদ বলেন, ‘এখন পানি নেমে যাচ্ছে। এখন শুরু হয়েছে রোগ-বলাই। কিছু সংক্রামক ব্যাধিওয়ালা এলাকায় মেডিক্যাল ক্যাম্প চালু করা হয়েছে। আমাদের ডাক্তররা শুধু যাচ্ছেন তা না, পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ বিনামূল্যে সরবারহ করা হচ্ছে। জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ (ড্যাব) দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সহযোগিতা করছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘কৃষির অবস্থা খুবই খারাপ, পানিতে সব ভেসে গেছে, বীজ পাবে কোথায়? আমরা ইসলামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল থেকে প্রচুর পরিমাণ ধানের বীজ ট্রাকে করে উপদ্রুত এলাকায় সরবারহ করেছি। কৃষকরা ধান ক্ষেতে বীজ বপন করছে।’
তিনি জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বন্যাপরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শিশুদের মধ্যে শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের গৃহ নির্মাণের সহযোগিতা করা হবে। ওই কাজও শুরু করা হয়েছে।’
দেশের পূর্বাঞ্চলে ছাত্র-জনতার বিপ্লবে ১৩৭ জন শহীদ হয়েছে। তাদেরকেও এই তহবিল থেকে সহায়তা করা হবে বলে জানান তিনি।
জাহিদ বলেন, ‘এই প্রাকৃতিক দুযোর্গ প্রায়ই হবে। এই যে বন্যা দেখেছেন এটা মানব সৃষ্ট। এর মাধ্যমে আমাদের মানুষগুলোকে কষ্ট দেয়া হয়েছে। এটা মোকাবেলা করে কিভাবে বেঁচে থাকতে হয়, বাঙালিরা তা জানে। বাংলাদেশের মানুষ তা জানে। কাজেই কেউ যদি চেষ্টা করে আমাদেরকে এভাবে দাবিয়ে রাখবে অথবা আমাদের যে সার্বভৌমত্ব, আমাদের যে বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা সেটা দাবিয়ে রাখবে, বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছার বর্হিপ্রকাশকে গলাটিপে হত্যা করবে, সেটার সুদূর পরাহত, বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ।’
এরপর তিনি বলেন, ‘কাজেই কোনো ষড়যন্ত্র সার্থক হবে না। ছোট বন্যা দিয়ে কষ্ট দিয়েছেন। কিন্তু মনে রাখবেন এই কষ্ট কোনো সময় হয়ত মনে আনন্দ পেতে পারেন। কোনো অবস্থাতেই মানুষের প্রতি মানুষের যে ভালোবাসা এটি পাবেন না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ত্রাণ সংগ্রহ কমিটির সদস্য আবদুস সালাম, মীর সরাফত আলী সপু, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, কাজী আবুল বাশার, রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, আমিনুল হক, হাসান জাফির তুহিন, রেজাউল কবির পল এবং ত্রাণ সংগ্রহ কমিটির সদস্য সচিব দলের যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।