sliderশিরোনামস্থানীয়

পিতৃপরিচয়ের সন্ধানে ১৫ বছর বয়সী কাশেম

লতা খানম ইতি, মানিকগঞ্জ: বাবার পরিচয় নেই বলে কি কাশেম কোথাও ভর্তি হতে পারবে না? তার কি জন্মনিবন্ধন কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র হবে না? সে কি কোনোদিন ভোটাধিকার পাবে না? পিতৃপরিচয় নেই এটাই কি তার অপরাধ? এমনই নানা প্রশ্ন সংবলিত একটি ব্যানার নিয়ে সম্প্রতি মানিকগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে দাড়িয়ে কাশেম সবার দৃষ্টি কারে। কাশেম মানিকগঞ্জের পুটাইল ইউনিয়নের লেমুবাড়ি গ্রামের এক প্রতিবন্ধি মায়ের সন্তান। তার পিতা আজও বঞ্চিত করে রেখেছে কাশেমের পিতৃ পরিচয় থেকে।

‘বাবা আমাকে তার ছেলে হিসেবে মেনে নেয় না। আমার কি কোনো পরিচয় থাকবে না? সবাই আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করবে কেন! কী আমার অপরাধ?’ কি আমার দোষ? এমনই অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তরের সন্ধানে ব্যানার হাতে মানিকঞ্জের শহীদ রফিক সড়কে প্রেস ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল মহম্মদ আবুল কাশেম নামের এক কিশোর।

সে থাকে লেমুবাড়ি গ্রামের জনৈক সোনা মিয়ার বাড়িতে। মা সখিনা বেগম কিছুটা মানসিক প্রতিবন্ধী ছিলেন। মায়ের বাড়ি সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার চরহাটি গ্রামে। ভাগ্যক্রমে যেকোন ভাবেই হোক মা মানিকগঞ্জের লেমুবাড়ি গ্রামে আসেন। গ্রামের জনৈক ছালেহার বাড়িতে আশ্রয় হয় তাঁর। এখানে আসার প্রায় দুই বছর পর জন্ম হয় কাশেমের। কাশেম জানায়, কিছুটা বড় হওয়ার পর মা তাকে বলেছেন, লেমুবাড়ি গ্রামের দেলোয়ার পোদ্দার তার জন্মদাতা বাবা। কিন্তু দেলোয়ার পোদ্দার বা তাঁর পরিবারের লোকজন কোনো দিনই কাশেমকে মেনে নেয়নি। উল্টো তারা মারধর করত।

আবুল কাশেম জানায়, তার মা ভিক্ষা করতেন। আজ এর বাড়ি কাল ওর বাড়ি যেখানেই একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই হতো সেখানেই ছেলেকে নিয়ে থাকতেন। শত বাঁধার তিনি কাশেমকে ভর্তি করে দেন স্থানীয় লেমুবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই বিদ্যালয় থেকেই সে ২০১২ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে ওঠে। প্রাইমারি স্কুল সার্টিফিকেট (পিএসসি) পরীক্ষার নিবন্ধন করার সময় কাশেমের কাছে চাওয়া হয় জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র। পুটাইল ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) যোগাযোগ করে সে একটি সদনও জোগাড় করে। সনদপত্রে বাবার পরিচয় দেয় মায়ের কাছে শোনা দেলোয়ার পোদ্দারের নাম। কিন্তু সনদপত্র নিয়ে বাড়ি ফিরতে না ফিরতেই ইউপির চৌকিদার এসে বলেন, সনদপত্রে ভুল হয়েছে। ঠিক করে দেওয়ার জন্য চেয়ারম্যান ডেকে পাঠিয়েছেন। কিন্তু চেয়ারম্যান আর সনদপত্র দেননি। তিনি বলেছেন, ‘তুমি বাবা হিসাবে যার পরিচয় দিয়েছ সে তোমাকে স্বীকার করেনি।’ জন্ম নিবন্ধন সনদ না থাকায় কাশেমের আর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে সে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তাকে ভর্তি করা হয়নি। এর পর থেকে তার লেখাপড়া বন্ধ।

পুটাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, কাশেম যাকে বাবা হিসেবে পরিচয় দেয়, তিনি তা স্বীকার করেন না। তাই কাশেমকে জন্ম নিবন্ধন সনদ দেওয়া যায়নি।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button