
চৌধুরী জীবন : চোর সন্দেহে পিটিয়ে মারা হলো যে মানুষটাকে’ শুনলাম সে নাকি মানসিক ভারসম্যহীন ছিলো। সাথে ছিলো একসময়ের মেধাবী ছাত্র..ছিলো বাবা মায়ের স্নেহের সন্তান..ছিলো এক নিঃসঙ্গ প্রেমিকও…
পাথরঘাটার তোফাজ্জল; সর্বহারা মন্দভাগ্য মানুষটার নাম পরিচয় ।
শুনলাম লোকটা জীবন থেকে একে একে হারিয়েছে তার সব কিছুই, আর সে চোট তার সুস্থ মস্তিষ্কের পক্ষে নেওয়া সম্ভব হয়নি। নিঃস্ব-বিপর্যস্ত হয়ে পথে পথে হেটে বেড়াতো পাগল হয়ে…
এই প্রেমিক পাগল লোকটার থেকে প্রথমেই চুরি হয়েছিলো তার প্রেমিকা, মোহাব্বতের মানুষ ।। সে ভালোবেসেছিলো একই এলাকার চেয়ারম্যানের মেয়েকে। পূর্ণতা পায়নি সে প্রেম। মেয়েটার বিয়ে হয়ে যায়..
এ ছিলো তার হারানোর শুরু কেবল..
এরপর একে একে তার থেকে চুরি হয় তার বাবা মা দুজনেই! ওপারের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যান তারা..ছেলেটা মানসিক ভাবে আরো বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।।
এরপর পাগল ছোটভাই কে দেখার দায়িত্ব নেন তার বড়ভাই, পেশায় ছিলেন পুলিশের এস.আই..
এদিকে কথায় আছে-“অভাগা যেদিকে চায়, সাগর ও শুকায়ে যায়”…এই শেষ আশ্রয় বড় ভাই টাও তারপর চুরি হয়ে যায় তার..উনিও পাগল টাকে একা করে ওপারে চলে যান..
এরপর? এরপর আর কিছু কি ছিলো এই মানুষটার থেকে ছিনিয়ে নিতে পারতো তার’ জীবন? হু ছিলো.. সেটা খোদ তোফাজ্জলের ‘জীবন’…
মানুষটাকে গত রাতে চোর সন্দেহে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের ছাত্র নামধারী মনুষত্ব্যহীন কিছু জানোয়ার..
মারতে মারতে এক পর্যায়ে অচেতন উপক্রম হলে তাকে পানির ঝাপটা দিয়ে ডেকে তুলে’ খেতে দেওয়া হয় তার জীবনের শেষ ভাতের থালা। খাওয়ার সময় পাগল লোকটা বুঝেও নি তাকে এরপর পিটিয়ে মেরে ফেলা হবে ..
“যে খেতে দেয় সে কি মেরেও ফেলে?”
কিন্তু না।। শেষ রক্ষা হয়নি তার।। চোর অপবাদে গ্যাসলাইট দিয়ে পায়ের পাতায় আগুন ধরিয়ে ,চোখের পাতা,ভ্রু কেটে দিয়ে পিটাতে পিটাতে তোফাজ্জলের থেকে তার জীবন টাও চুরি করে নিলো তার ই স্বজাতিরা- হায়েনার উল্লাসে.. সে উল্লাস যেন-
“পাগল নষ্ট হবে কষ্ট পাবে,
তাতে কার কী বা আসে যাবে”
যেই মানুষটার থেকে ‘জীবন’ তার সবকিছু চুরি করে নিয়েছিলো, সেই মানুষটা মৃত্যুর আগে জেনে গেলো সে ই নাকি আসলে ‘চোর’…
এই নির্মম মৃত্যুই আজ তোফাজ্জলের মুক্তির খোঁজে পথে পথে নিরন্তর হেটে চলার শেষ পরিণতি ! তোফাজ্জল শেষমেষ হারিয়ে গিয়ে হয়তো মুক্তি পেলো সব হারানোর যন্ত্রণা থেকে…
প্রিয় তোফাজ্জল,
আকাশের উজ্জলতম নক্ষত্র হয়ে জ্বলে থেকো..
আমাদের ক্ষমা করে দিয়ো…