ইবিতে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষে রক্তাক্ত সম্পাদক, আহত ৩০

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে আটক করেছে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, ইবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম পলাশ ও সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বিদ্রোহী কর্মীদের দ্বারা অবাহিত হওয়ার প্রায় পাঁচ মাস পর মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে আসেন। তাদের কিছু নেতকর্মী সকাল থেকেই প্রধান ফটকে অবস্থান নেয়। এদিকে সভাপতি-সম্পাদককে ক্যাম্পাসে ঢুকতে বাধা দেওয়ার জন্য ছাত্রলীগের দলীয় টেন্ট ও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয় বিদ্রোহী গ্রুপের নেতা-কর্মীরা। এরপর সকাল সাড়ে দশটার দিকে প্রধান ফটকে অবস্থান নেয়া সভাপতি-সম্পাদকের কর্মীদের হামলা করে বিদ্রোহী গ্রুপের নেতা-কর্মীরা। এতে অন্তত তিন জন আহত হয়।
এরপর বিদ্রোহী গ্রুপের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের ভিতরে অবস্থান নেয়। দুপুর দেড়টার দিকে সভাপতি ও সম্পাদক কয়েকজন কর্মীসহ মিছিল নিয়ে পুনরায় ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে আসে। এ সময় পুনরায় বিদ্রোহী গ্রুপের অনুসারী বিপুল, অনিক, হিমেল চাকমা, নীল, আলামিন জোয়াদ্দার, শাহজালাল সোহাগ, আদিত, আবিরসহ কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী সশস্ত্র অবস্থায় হামলা করে। তারা লাঠি, হকস্টিক ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সভাপতি, সম্পাদকসহ তাদের কর্মীদের উপর হামলা করে। এতে সম্পাদক রাকিবের মাথা ফেটে রক্তাত্ত হয়। পরে সে পাশে একটি ফটোকপির দোকানে আশ্রয় নেয়। এখানেও হামলা করে বিদ্রোহী কর্মীরা। এদিকে সভাপতি পলাশ কিছু কর্মীসহ ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গিয়ে পাশ্ববর্তী গ্রামে আশ্রয় নেয়। এ সময় প্রধান ফটকের সামনে অন্তত ৩টি ককটেল বিষ্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ঘটনা স্থলে সভাপতি সম্পাদক গ্রুপের কর্মী ইংরেজী বিভাগের আমিন হাসান, সামস, আইন ও ভুমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাসুম, ফিন্যান্স বিভাগের মেহেদী সুমন, ইইই বিভাগের জাকির, ইতিহাসের সুইট, বিদ্রোহী গ্রুপের কর্মী বিপুল, আইন বিভাগের হানিফ, অর্থনীতির আল আমিন, ফিন্যান্স এর রাফিদ, ব্যবস্থাপনা বিভাগের শুভ শিকদার, কল্লোল, আরবি সাহিত্যের সোহানসহ অন্তত ৩০জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
এছাড়া সহকারী প্রক্টর প্রভাষক আরিফুল ইসলামও ঘটনা স্থলে আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে আটজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। গুরতর আহত কয়েকজনকে কুষ্টিয়া শহরে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে সম্পাদকসহ গুরুতর আহত হয়েছে চার জন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য ও পুলিশের সহযোগিতায় সম্পাদক রাকিবকে সিএনজিতে কুষ্টিয়া পাঠিয়ে দেয়া হয়।
এদিকে সভাপতি সম্পাদক ক্যাম্পাস ছাড়া হলে বিদ্রোহী গ্রুপের নেতা কর্মীরা প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে কুষ্টিয়া-খুলনা মহসড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে তীব্র যনজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া প্রধান ফটকে তালা দিয়ে অবরোধ করে রাখে বিদ্রোহী গ্রুপের নেতা কর্মীরা।
এ বিষয়ে সভাপতি রবিউল ইসলাম পলাশ পূর্বপশ্চিমকে বলেন, বিভিন্ন জটিলতার কারণে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কর্যক্রম কিছু ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্বি হয়ে রয়েছে। আমরা কেন্দ্রের নির্দেশে ছাত্রলীগের কার্যক্রম সচল করতে ক্যাম্পাসে আসি। এ সময় কিছু সন্ত্রাসী বিভিন্ন দেশিয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের উপর হামলা করে। আমরা কেন্দ্রকে বিষয়টি জানিয়েছি। তাদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।
বিদ্রোহী গ্রুপের নেতা সাবেক সহ-সম্পাদক ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত পূর্বপশ্চিমকে বলেন, ঘটনাস্থালে আমি ছিলাম না। এই কমিটি অর্থের বিনিময়ে হওয়ায় ছাত্রীগের কর্মীরা মেনে নিতে পরেনি। পলাশ রাকিব বহিরাগত সন্ত্রাসীসহ ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করলে কর্মীরা প্রতিহত করে। এতে বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. আনিসুর রহমান বলেন, পূর্বে থেকে গোয়োন্দা তথ্য ছিলো ছাত্রলীগ এমন কিছু ঘটাতে পারে। তাই আমারা সকাল থেকে প্রধান ফটকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করেছিলাম। র্যাবের টহলও ছিলো। সেই সঙ্গে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গির আরিফ পূর্বপশ্চিমকে বলেন, আমরা পুলিশ ফোর্সসহ ঘটনা স্থালে ছিলাম। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়েছিল। বর্তমানে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনায় হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সেলিনা নাসরিনকে আহ্বায়ক এবং অধ্যাপক তপন কুমার জোয়াদ্দার ও অধ্যাপক মোস্তফা জামাল হ্যাপিকে সদস্য করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
পূর্বপশ্চিম