slider

অটো সিন্ডিকেটের কবলে মানিকগঞ্জ পৌরবাসী

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জ পৌরসভার বাসস্ট্যান্ড-তিতুমীর-জরিনা কলেজ রুটে চলাচলকারী হ্যালোবাইক-অটোরিকশায় পশ্চিম দাশড়া এলাকার যাত্রী না নেয়ার কারনে জনভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এতে সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।

বৃহস্পতিবার(১৯ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন দেখা যায়, মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকা হতে পশ্চিম দাশড়া রুটের বেতিলা-মিতরাগামী ইজিবাইকে দাশড়া-পশ্চিম দাশড়া, তিতুমীর স্কুল, জরিনা কলেজ এলাকার কোনো যাত্রী নেয়া হচ্ছে না। অথচ মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড হতে এই এলাকার দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার ও বিজয় মেলা মাঠ (মানিকগঞ্জ সঃউঃবিঃ খেলার মাঠ) হতে এই এলাকার দুরত্ব প্রায় ৩ কিলোমিটার। এসময় অধিকাংশ যাত্রীরা আধঘন্টা দাড়িয়ে থেকে অনুরোধ সাপেক্ষে কোনো গাড়ি চালককে রাজি করালেও দ্বিগুণ ভাড়া নেয়ার ঘটনা দেখা যায়।

মানিকগঞ্জ বিজয় মেলা মাঠ হতে জরিনা কলেজ পর্যন্ত বহু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত বিশেষ করে পৌরসভা কার্য্যালয় ও হাসপাতাল রয়েছে। যাত্রী না নেয়ার কারনে এই পথগামী যাত্রী বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি চরম আকার ধারন করেছে।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সাদিমা হোসেন নাবিলা বলেন, “গতকাল প্রায় আধঘন্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম। কোনো অটোবাইক আমায় নেয় নি। তারা এই রাস্তা দিয়েই যায় কিন্তু পশ্চিম দাশড়ার কোনো যাত্রী নেয় না। বেশিরভাগ সময় হেটেই যেতে হয়। অতিরিক্ত ইমার্জেন্সি থাকলে রিকশা ছাড়া উপায় নেই। এতে তিনগুণ বেশি ভাড়া গুনতে হয়। এরা সিন্ডিকেট করেছে। যাত্রী উঠায় না কিন্তু ভাড়া বেশি দিলে ঠিকই নেয়”।

উক্ত প্রতিষ্ঠানের এক অভিভাবক বলেন, “এই এলাকার (পশ্চিম দাশড়া) মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাওয়ার সময় কোনো সমস্যা হয় না কিন্তু ফেরার পথে কোনো গাড়িই যেনো নিতে চায় না। এর চুড়ান্ত সমাধান প্রয়োজন”।

সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী আফরোজা খাতুন বলেন, “মানিকগঞ্জ পৌরসভার সবচেয়ে কাছে এই পশ্চিম দাশড়া এলাকা। পৌরসভা প্রতিষ্ঠানটিও দাশড়া মৌজায়। কিন্তু পৌরসভার জন্য সবচেয়ে বড় লজ্জা এটা যে এই এলাকার উন্নয়নে পৌরসভা কখনোই চেষ্টা বা কোনো কাজ করে নি। শুধু গাড়ির বিষয়ই নয় প্রায় অধিকাংশ দিকেই এই এলাকার মানুষ বঞ্চিত। পৌরসভার সবচেয়ে কাছের এলাকা হয়েও দুর্ভাগ্য যেনো আমাদের পিছু ছাড়ে না। দখল দুষন লেগেই থাকে। খেয়াল করলেই দেখবেন একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা, পানি দূষণ এই এলাকার নিত্যকার বিষয়। আর গাড়ির যে বিষয়টা,গাড়ি চালকরা তো এই এলাকাকে এলাকাই মনে করেন না। এর প্রতিরোধ গড়ে তোলা ছাড়া উপায় নেই”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অটো চালক সালমান বলেন, “আসলে বেতিলা-মিতরার যাত্রি পেলে বেশি ভাড়া পাওয়া যায়। তখন আর কেউ দাশড়ার যাত্রি উঠায় না। তবে হ্যা এটা সত্যি যে অনেক সময় যাত্রীদের দাড়ায়া থাকতে হয়।”

গাড়ি খালি থাকলেও যাত্রি না ওঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে নাম পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অটো চালক বলেন, “আসলে মাঠ থিকা জরিনা কলেজের ভাড়া ১০ টিকা। আবার মাঠ থিকা নয়াকান্দির পিল গেলে ১৫/২০ যে যেমন পারে নেয়। কিন্তু পশ্চিম দাশড়ার যাত্রি উঠাইলে মাত্র ৫টিকার ভাড়া। তখন আর কেউ নিবার চায় না। হ এইডা সত্য যে ভাড়া বেশি দিলে উঠায়া নেই। ১০ টিকা দিলে যাওন যায়। এইডা সবাই করে, তাই আমিও করি”।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ হ্যালোবাইক চালক সমিতির সাথে যোগাযোগ করার জন্য চেষ্টা করা হলে ইজিবাইক চালকদের মাধ্যমে জানা যায় বর্তমানে কোনো পরিচালনা কমিটি না থাকায় যে যার মতোই চলছে। শহরের ইজিবাইক চলাচলে প্রশাসনেরও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই বলে জানা যায়।

মানিকগঞ্জের তরুন গণমাধ্যমকর্মী ও সংগঠক খাব্বাব হোসেন ত্বহা বলেন, “মানিকগঞ্জ পৌরসভার দাশড়া-পশ্চিম দাশড়া এলাকার সার্বিক বৈষম্য লক্ষ্যনীয়। মানিকগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম দাশড়ায় এযাবৎ কালের পৌরসভার উন্নয়নের নামে লুটপাটও লক্ষ্যনীয়। তবে বর্তমানে দেশের এই সেন্সেটিভ সময়ে যে সকল সুবিধাভোগীরা ও সুযোগ সন্ধানীরা লুটপাট চালাচ্ছে তাদের প্রতিহত করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে প্রশাসনকে সোচ্চার হতে হবে। বর্তমান পৌর কতৃপক্ষের উচিৎ জনগণের কল্যানে কাজ করা। জনগণের সুবিধা-অসুবিধার সার্বিক দিক বিবেচনায় রেখে অসাধুদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহন করা। লাগামহীনভাবে অবৈধ অটোরিকশাকে বৈধতা প্রদান, ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য ও যত্রতত্র পার্কিংয়ের বিষয়ে এখন থেকেই পৌর কর্তৃপক্ষকে সোচ্চার হতে হবে”।

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর দপ্তর সম্পাদক হাসান শিকদার বলেন, “দেশে একটি নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহন করার সুযোগে বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতাসহ নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিকে সুযোগ হিসেবে গ্রহন করে যদি কেউ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে চায় তাহলে তা কোন ভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। প্রশাসনের উচিত হবে এই বিষয়ে অতিদ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করা ও জনদূর্ভোগ লাঘবের চেষ্টা করা।”

এ বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মানিকগঞ্জের অন্যতম আন্দোলনকারী ও নেতৃত্বদাতা সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক বলেন, “মানিকগঞ্জ পৌরসভা এলাকায় বিভিন্ন অনিয়ম ইতোমধ্যে আমাদের নজরে এসেছে। পৌরসভার সকল কার্যক্রমকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব। জনগণের ভোগান্তি যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা এখন প্রশাসনের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। পৌরসভা কতৃপক্ষের নিকট দ্রুততম সময়ের মধ্যে ইজিবাইক এর রুট প্রনয়ণ, ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যের সমাধান, ভাড়ার তালিকা প্রনয়ণ ও যত্রতত্র পার্কিং এর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানাচ্ছি”।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button