sliderস্থানীয়

জগন্নাথপুরে সাংবাদিক পরিচয়ে প্রবাসীর টাকা হাতিয়ে নিলো ব্যাটারী মোল্লা আদালতে মামলা

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌর শহরে আব্দুল ওয়াহিদ প্রকাশ ব্যাটারী মোল্লা নামের এক প্রতারক সাংবাদিক পরিচয়ে ভয়ভীতির মাধ্যমে লন্ডন প্রবাসী আব্দুল নেহারের কাছ থেকে ৫৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সাংবাদিক পরিচয়দানকারী চাঁদাবাজ আব্দুল ওয়াহিদ ওরফে ব্যাটারী মোল্লা জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের বাগময়না গ্রামের মৃত আবরু মিয়ার পুত্র।

এব্যাপারে প্রবাসী আব্দুল নেহার প্রথমে জগন্নাথপুর থানায় তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ তদন্ত শুরু করে এর সত্যতা খুঁজে পায়।

পরে তাকে আদালতে মামলা দেওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
আদালতে আনিত অভিযোগে জানা যায়, জগন্নাথপুর পৌর শহরের সিএ মার্কেট এলাকার বাসিন্দা মৃত আরব আলীর ছেলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুল নেহারের বাসভবনে (সাবেক কামাল কমিউনিটি সেন্টার) গিয়ে বিবাদী আব্দুল ওয়াহিদ ওরফে ব্যাটারী মোল্লা সাংবাদিক পরিচয়ে গত ১৪ জানুয়ারি রাত ৯ টায় আব্দুল নেহারের বাসাটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে ভয়ভীতি দেখায়।

এ সময় তিনি তার বাসা কিভাবে ঝুঁকিপূর্ণ তার প্রমান চাইলে সে বলে বাসা নিয়ে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে নিউজ হবে এবং ঢাকা থেকে বিভিন্ন চ্যানেলের সাংবাদিকরা আসবে।
এ নিয়ে লেখালেখি করলে ঝুঁকিপূর্ণ বিল্ডিং হিসাবে পৌর কর্তৃপক্ষ আপনার বাসা ভেঙে ফেলবে। আপনি যদি ২ লক্ষ টাকা দেন তাহলে আপনার বিরুদ্ধে লেখালেখি হবে না বলে ভয়ভীতি দেখায়।

এর দুইদিন পর (১৬ জানুয়ারী) আব্দুল ওয়াহিদ ওরফে ব্যাটারী মোল্লা রাত ৯ টায় পূনরায় প্রবাসী আব্দুল নেহারের বাসায় গিয়ে উপরোক্ত চাঁদা দাবী করে। তখন তিনি মান সম্মানের ভয়ে তাকে নগদ ৫৬ হাজার টাকা চাদাঁ দেন।

পরবর্তীতে তিনি প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে তার নিকট টাকাগুলো ফেরত চাইলে লন্ডন প্রবাসী আব্দুল নাহারকে বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দেন আব্দুল ওয়াহিদ ব্যাটারী।
প্রতারণা ও চাদাঁবাজির বর্ণনা দিয়ে প্রথমে জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার শুভাশীষ ধর-এর কাছে লিখিতভাবে তিনি অভিযোগ করেন।

পরে থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বিষয়টি তদন্তের জন্য সেকেন্ড অফিসার জিন্নাতুল ইসলাম তালুকদারকে দায়িত্ব দিলে গত ২৭ জানুয়ারি ওসি বিষয়টি বাদী বিবাদী ও সাক্ষীদের উপস্থিতিতে সাক্ষ্য নেন।

এ সময় ঘটনার সত্যতা প্রমান পাওয়ায় আপোষে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য বিবাদী আব্দুল ওয়াহিদকে ২/৩ দিনের সময় বেঁধে দেন ওসি মিজানুর রহমান । কিন্তু দু’সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও টাকা ফেরত না দিয়ে সে বিভিন্ন টালবাহানা শুরু করলে অবশেষে সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারী) আমল গ্রহনকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত জগন্নাথপুর জোনে মামলা দায়ের করেন প্রবাসী আব্দুল নেহার। যার মামলা নং (সিআর ৩৫২৩/২০২৩)

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ইতোপূর্বে আব্দুল ওয়াহিদ প্রকাশিত ব্যাটারী মোল্লা জগন্নাথপুর বাজারের হাবিব ষ্টোরে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুম বিল্লাহ’র নাম ভাঙ্গিয়ে মোবাইল কোর্টের ভয় দেখিয়ে ৩০ হাজার টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়। পরে কিছু টাকা ফেরত দিয়ে মুক্তি পায়।

আরো জানা যায়, জগন্নাথপুর সি এ মার্কেট এলাকায় একদল জুয়াড়ী প্রতিদিন একটি দোকানে জুয়ার আসর বসায়। এমন অভিযোগ পেয়ে তৎকালীন জগন্নাথপুর সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ইয়াসির আরাফাত সহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে আটক করে।
এ সময় জুয়া খেলার দায়ে আব্দুল ওয়াহিদ মোল্লাকে জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দেয়া হয়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এমন কোন খারাপ কাজ নেই, যা নামধারী সাংবাদিক আব্দুল ওয়াহিদ ওরফে ব্যাটারী মোল্লা দ্বারা সংঘটিত হচ্ছেনা। রাত-দিন সব সময়ই করে যাচ্ছে নানা প্রতারণা। সে নিরীহ লোকজনকে জিম্মি করে ভয়ভীতির মাধ্যমে আদায় করে যাচ্ছে হাজার হাজার টাকা। সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি, প্রতারণা ও দালালি যার নেশা ও পেশায় পরিণত হয়েছে। তার এহেন কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ এলাকার নানা শেণী-পেশার মানুষ। তদন্ত হলেই চলে আসবে তার অতীত ও বর্তমানে সংঘটিত নানা প্রতারণার অজানা তথ্য।

প্রবাসী আব্দুল নাহার বলেন, আব্দুল ওয়াহিদ ওরফে ব্যাটারী মোল্লা এলাকার একজন চিন্হিত প্রতারক ও চাঁদাবাজ। এখন আমিও তার প্রতারণা ও চাঁদাবাজির শিকার।

নানা কৌশলে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার কাছ থেকে ৫৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সে কখনো পত্রিকার সাংবাদিক, আবার টিভি চ্যানেল কিংবা অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক এমন পরিচয়ে চলছে তার অভিনব প্রতারনার নানা কৌশল।

আমার মত আর কেউ যাহাতে তার কাছে প্রতারিত না হয়।
এ ব্যাপারে আমি প্রথমে পুলিশ প্রশাসনের দারস্থ হই, কিন্তু সে বিষয়টি সমাধানে না আসায় অবশেষে আদালতে মামলা দায়ের করতে বাধ্য হয়েছি।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button