চীন লাদাখে ভারতীয় ভূখণ্ড দখল করে ফেলেছে বলে এ বার সরাসরি অভিযোগ তুলল কংগ্রেস। রাহুল গান্ধীর এই অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেনি নরেন্দ্র মোদি সরকার। আবার স্বীকারও করেনি।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ, লাদাখের বিজেপি এমপি জাময়াঙ্গ সেরিং নামগিয়াল রাহুলকে বুধবার পাল্টা আক্রমণ করে বলেছেন, কংগ্রেস জমানাতেই চীন লাদাখের অনেকটা অংশ দখল করে ফেলেছিল। কিন্তু রাহুলের দাবি, “চীনারা হেঁটে হেঁটে ঢুকে লাদাখে আমাদের ভূখণ্ড দখল করে ফেলেছে।” লক্ষণীয়, তা অসত্য বলে রবিশঙ্কর প্রসাদ বা বিজেপি সাংসদ উড়িয়ে দেননি। লাদাখে চীন ভারতীয় এলাকা দখল করে রাখেনি বলেও তারা দাবি করেননি।
ভারতীয় সেনা সূত্র বলছে, প্যাংগং লেকের চার নম্বর ফিঙ্গার থেকে আট নম্বর ফিঙ্গার পর্যন্ত গোটা এলাকা চীন মে মাসের গোড়া থেকেই দখল করে রেখেছে এবং ওই এলাকায় ভারতীয় সেনার কোনো নজরদারিই হচ্ছে না। প্যাংগং লেকের মাঝে মাঝে পাহাড়ের কিছু অংশ আঙুলের মতো ঢুকে রয়েছে। এগুলোকে ‘ফিঙ্গার’ বলা হয়। দুই সেনাবাহিনীর মধ্যে বুধবারও বৈঠক হয়েছে।
৫ মে লাদাখের প্যাংগং লেক এলাকায় ভারত ও চীনের সেনার সংঘাত শুরু হয়। তার পর থেকেই দুই বাহিনী লাদাখে পরস্পরের চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে। শনিবার দুই সেনার কমান্ডার স্তরে বৈঠক হওয়ার পরে ভারত ও চীনের সেনা লাদাখের তিনটি জায়গা—গলওয়ান ভ্যালির ১৪ ও ১৫ নম্বর নজরদারি এলাকা, গোগরা-হট স্প্রিংস-এর ১৭ নম্বর নজরদারি এলাকায় মুখোমুখি অবস্থান থেকে পিছু হটেছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রও বুধবার বেইজিংয়ে জানিয়েছেন, কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে আলোচনায় যে ঐকমত্য হয়েছে, সেই অনুযায়ী দু’পক্ষ কাজ করছে।
কিন্তু ভারতীয় সেনাকর্তারা একান্তে বলছেন, সংঘাতের যে মূল এলাকা, সেই প্যাংগং লেকের উত্তর তীরে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি। সেখানে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে চীনের সেনাবাহিনী প্রায় ৮ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে এসেছে। ভারত চাইছে, এপ্রিলে যে যে যেখানে ছিল, সেই স্থিতাবস্থা বজায় থাকুক। কিন্তু চীন এ নিয়ে আলোচনাতেই রাজি নয়। তাদের দাবি, এখন তারা যেখানে রয়েছে, সেই স্থিতাবস্থা বজায় রাখা হোক। ভারতীয় সেনার যুক্তি, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা নিয়ে ভারতের দিক থেকে কোনো অস্পষ্টতা নেই। তা সামরিক মানচিত্রে স্পষ্ট দেখানো রয়েছে। যদিও ২০০২-সালে দু’দেশের বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠীর বৈঠকে চীন তা ফিরিয়ে দেয়।
নয়াদিল্লির দাবি, চীন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা সংলগ্ন এলাকা থেকে প্রায় হাজার দশেক সেনা, কামান ও ট্যাঙ্ক রেজিমেন্ট সরালে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরবে। অতীতে ডোকলামে ভারত-চীনের সেনা সংঘাতের অবস্থান থেকে পিছু হঠার পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সরকারি বিবৃতি দিয়েছিল। কিন্তু পূর্ব লাদাখের তিনটি জায়গা থেকে দুই সেনা কিছুটা পিছু হটলেও খাতায়-কলমে মোদি সরকার এখনো কিছু বলতে নারাজ। এখানেই বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন। রাহুল গান্ধী বুধবার সকালে টুইট করেন, “চিনারা হেঁটে হেঁটে ঢুকে লাদাখে আমাদের ভূখণ্ড দখল করে ফেলেছে। প্রধানমন্ত্রী একেবারে নীরব। তিনি উধাও হয়ে গিয়েছেন।”
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর পাল্টা বলেন, “রাহুল গান্ধীর বোঝা উচিত, এই রকম আন্তর্জাতিক বিষয়ে, যেখানে চীনের প্রশ্ন জড়িত, তা নিয়ে টুইটে প্রশ্ন তোলা যায় না।” রাহুল বালাকোটে বিমানবাহিনীর অভিযানেরও প্রমাণ চেয়েছিলেন বলে আঙুল তুলেছেন রবিশঙ্কর। তার যুক্তি, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ২০২০-র ভারত ও ১৯৬২-র ভারত এক নয়।
লাদাখের সাংসদ নামগিয়াল নিজে গত তিন দিন সীমান্তবর্তী এলাকায় ঘুরছিলেন। রাহুলকে টার্গেট করে তিনি বলেন, “চীন ভারতের এলাকা দখল করেছিল ঠিকই। কিন্তু সেটা কংগ্রেস জমানায়, ১৯৬২-তে। আকসাই চিন বা লাদাখের প্রায় ৩৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করে চীন। তার পরে ২০০৮-এর আগে চুমুরের পরের ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত টিয়া পাংনাক ও সাবজি ভ্যালি দখল করে। ২০০৮-এ ইউপিএ জমানায় ডেমজোকের জোরাওয়ার ফোর্ট ভেঙে ২০১২-তে সেখানে নজরদারি কেন্দ্র তৈরি করে।” তবে এখনকার পরিস্থিতি নিয়ে ‘সব কিছু বলা যাবে না’ জানিয়ে তার যুক্তি, “ভারতের এক ইঞ্চি জমিও চীনের দখলে যাবে না।”
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা