sliderঅপরাধশিরোনাম

জড়িতরা চিহ্নিত, কাস্টমসের ৪ সিপাহি পুলিশ হেফাজতে

বিমানবন্দরে স্বর্ণ গায়েব

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টম হাউজের নিজস্ব ভল্ট (গোডাউন) থেকে ৫৫ দশমিক ৫১ কেজি স্বর্ণ চুরির ঘটনায় জড়িতরা চিহ্নিত হয়েছে-এমন তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

কিন্তু মামলার এজাহারে আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের। তবে এজাহারে চুরির ঘটনার বর্ণনায় কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের মধ্যে কাস্টমসের চার সিপাহিকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। তারা হলেন-রেজাউল করিম, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন ও নিয়ামত হাওলাদার।

অন্যদিকে প্রাথমিক তদন্তে চার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার নাম বেরিয়ে এলেও তাদের এখনো হেফাজতে নেওয়া হয়নি। তারা হলেন-মাসুদ রানা, সাইফুল ইসলাম শাহেদ, শহিদুল ইসলাম ও আকতার শেখ। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যে ভল্ট থেকে স্বর্ণ চুরি হয়েছে, সেই ভল্টের বাইরের ক্যামেরা ১ সেপ্টেম্বর থেকেই বন্ধ ছিল।

তারা জানান, আলমারির লকারে থাকা স্বর্ণের কোনো প্যাকেটই পুরোপুরিভাবে খোয়া যায়নি। ৪২৬টি প্যাকেট থেকে আংশিকভাবে স্বর্ণ চুরি করা হয়েছে। সম্প্রতি ভল্ট থেকে একটি পুরো প্যাকেট খোয়া যায়। এর দায় কেউ স্বীকার করছিলেন না।

একপর্যায়ে একজন কর্মকর্তা দায় স্বীকার করে ফেরত দেন প্যাকেটটি। এরই মধ্যে ভল্টের দায়িত্বে থাকা দুই কর্মকর্তাকে বদলি করা হলে তারা গুদামের চাবি বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন না। এদিকে ১ সেপ্টেম্বর থেকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ গুদামের স্বর্ণ ও মূল্যবান সামগ্রী ইনভেন্ট্রি করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর পরই ধরা পড়ে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ চুরির ঘটনাটি।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্বর্ণ উধাও হওয়ার ঘটনায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ গোডাউনের দায়িত্বে থাকা চার সরকারি রাজস্ব কর্মকর্তা ও চার সিপাহিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তাদের কাছ থেকে সন্তোষজনক উত্তর পাওয়া যায়নি।

স্বর্ণ চুরির বিষয়টি শনিবার কাস্টম হাউজের গুদাম কর্মকর্তা মাসুদ রানার নজরে আসে। বিষয়টি তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বিমানবন্দরে দায়িত্বরত যুগ্ম কমিশনারকে জানান।

মাসুদ রানা বিমানবন্দর লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ডস সংলগ্ন ট্রানজিট গোডাউন টিজিআর-১-এর গুদামের ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পান, মূল্যবান পণ্য সংগ্রহের জন্য গুদামে রাখা একটি স্টিলের আলমারির দরজার লক ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। ২ সেপ্টেম্বর প্রতিদিনের মতো আটক করা পণ্য টিজিআর-১-এ জমা করে কাজ শেষে আনুমানিক রাত ১২টা ১৫ মিনিটে গোডাউনে তালাবদ্ধ করে চাবি নিয়ে চার কর্মকর্তা একসঙ্গে বিমানবন্দর কাস্টমস এলাকা ত্যাগ করেন বলেও মাসুদ রানা যুগ্ম কমিশনারকে অবগত করেন।

এই তথ্য জানার পর বিমানবন্দরের দায়িত্বরত যুগ্ম কমিশনার গোডাউন পরিদর্শন করেন। তিনি বিষয়টি কাস্টমস কমিশনারসহ ঢাকা হাউজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান। কমিশনারসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা গোডাউন পরিদর্শনে গিয়ে ভেতরে একটি স্টিলের আলমারির লক ভাঙা অবস্থায় দেখতে পান।

পরে গোডাউনে কর্মরত ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ ও ‘ডি’-এই চার শিফটের কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা, মো. সাইদুর রহমান শাহেদ, মো. শহিদুল ইসলাম ও আকরাম শেখ, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম মোহাম্মদ, মোজাম্মেল হক, মো. আফজাল হোসেন ও সিপাহি পদে কর্মরত নিয়ামত হাওলাদারকে লক ভাঙার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

মামলার এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, গোডাউনের আলমারির লকারে রাখা আট দশমিক শূন্য দুই কেজি এবং ২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সালের বিভিন্ন সময় আটককৃত ৪৭ দশমিক ৪৯ কেজি অর্থাৎ সর্বমোট ৫৫ দশমিক ৫১ কেজি স্বর্ণ পাওয়া যাচ্ছে না। ২ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা ১৫ মিনিট থেকে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের মধ্যে যে কোনো সময় কে বা কারা সোনার বার ও স্বর্ণালংকার গোডাউন থেকে স্টিলের আলমারির লকার ভেঙে চুরি করে নিয়ে যায়।

চোরাইকৃত সোনার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৪৫ কোটি টাকা বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

আরও উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে ইনভেন্ট্রি কার্যক্রম পরিচালনা চলমান রয়েছে। চূড়ান্ত ইনভেন্ট্রির পর একত্রে সোনার পরিমাণ নিশ্চিত করা যাবে।

ঢাকা কাস্টম হাউজের কমিশনার একেএম নুরুল হুদা আজাদ বলেন, গুদামে অনেক লকার থাকলেও সোনা চুরি হয়েছে একটি থেকে। এসব সোনা ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি গুদামে অটোমেশনের কাজ শুরু করছিলাম। এর মধ্যে এ ধরনের ঘটনায় আমি লজ্জিত ও বিব্রত। তিনি বলেন, আট দিন আগে গুদামটি অটোমেশনের কাজ শুরু হয়। এই কাজের অংশ হিসাবে গুদামে থাকা সোনা গণনার কাজ শুরু হয়। আমার ধারণা, সোনা চুরির ঘটনা আগেই ঘটেছে। গুদামের অটোমেশনের কাজ শুরু হওয়ায় সেটা ধরা পড়বে। তাই লকার ভাঙার ‘নাটক’ তৈরি করা হয়েছে। বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। দায়ীদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত চারজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টম হাউজের উপকমিশনার (ডিসি) মো. মোকাদ্দেস হোসেন বলেন, স্বর্ণ চুরির ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক না কেন, ছাড় দেওয়া হবে না। বিষয়টি নিয়ে ঢাকা কাস্টম হাউজ, পুলিশ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছে। তদন্তের পরই জড়িতদের নাম বেরিয়ে আসবে। এটি যেহতু একটি সেনসেটিভ ঘটনা, তাই নিশ্চিত না হয়ে কাউকে আসামি করা হয়নি।

পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, বিমানবন্দর রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই)। এমন একটি জায়গা থেকে কিছু চুরি হলে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। এ ঘটনায় কারা জড়িত, তদন্ত করে সেটা বের করা হবে।

যুগান্তর

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button