sliderউপমহাদেশশিরোনাম

আমি হিজাব পরার অধিকার রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাব : মুশকান খান

ভারতের কর্নাটক রাজ্যে হিজাব পরে কলেজে যাওয়ার জন্য হিন্দু উগ্রবাদীদের হাতে হেনস্তার শিকার মুসলিম ছাত্রী মুশকান খান বলেছেন, তিনি হিজাব পরেছেন বলে তারা জয় শ্রী রাম স্লোগান দিয়েছে। তখন আমিও আল্লাহু আকবার ধ্বনি দিয়েছি। আমি হিজাব পরার অধিকার রক্ষার লড়াই অব্যাহত রাখব।
গতকাল মঙ্গলবার কর্নাটকে হিজাব পরা এক মুসলিম ছাত্রীর উগ্র হিন্দুদের হাতে হেনস্তা হওয়ার ভিডিওটি টুইটারে পোস্ট করার পর ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, মানদায় মুশকান খান তার কলেজে আসামাত্র গেরুয়া স্কার্ফ পরা একদল ছেলে তাকে ঘিরে ধরেছে। তবে তিনি দমে না গিয়ে নিজের অবস্থান প্রকাশ করেন। তিনি জানান, ওই উগ্র ছেলেগুলোর বেশির ভাগই বহিরাগত।
কর্নাটকের ওই কলেজে ইসলামি স্কার্ফ নিষিদ্ধ করাকে মুসলিম শিক্ষার্থীরা মেনে নিতে পারছে না। তারা এটাকে ভারতের সেক্যুলার সংবিধানে তাদের ধর্মবিশ্বাস নিশ্চিত থাকার আশ্বাসের ওপর আক্রমণ বলে মনে করছে। হিন্দু উগ্রবাদী গ্রুপগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মুসলিম ছাত্রীদের প্রবেশ বন্ধ করার চেষ্টা করলে সম্প্রদায়িক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
মঙ্গলবার ওই ঘটনার পর মুশকান খান ভারতের এনডিটিভি নিউজ চ্যানেলকে বলেন, ‘আমার অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়ার কথা ছিল। এ কারণেই আমি কলেজে প্রবেশ করেছিলাম। কিন্তু আমি বোরকা পরার কারণে তারা আমাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দিতে চাচ্ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘তারা জয় শ্রী রাম বলে স্লোগান দিতে শুরু করে। তখন আমিও আল্লাহু আকবার বলে ধ্বনি দেনই।’ তিনি বলেন, তিনি হিজাব পরার তার অধিকার রক্ষার জন্য লড়াই অব্যাহত রাখবেন।
তিনি বলেন, উপস্থিত উগ্রবাদীদের মাত্র ১০ ভাগ ছিল আমাদের কলেজের। বাকিরা ছিল বহিরাগত।
মুসলিমদের মধ্যে ভয়
উগ্র হিন্দুবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) পরিচালিত কর্নাটক সরকার মঙ্গলবার তিন দিনের জন্য রজ্যেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করার কথা ঘোষণা করেছে।
কর্নাটক রাজ্যের (এখানেই ভারতের আইটি হাব বেঙ্গালুরু অবস্থিত) এই পরিস্থিতির ফলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান হারে ভয় ঢুকে পড়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের অধীনে ক্রমবর্ধমান নির্যাতনের শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছে।
মঙ্গলবার নতুন করে বিক্ষোভের পর পুলিশ সরকার-পরিচালিত একটি ক্যাম্পাসে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। তাছাড়া কাছের শহরগুলোর স্কুলেও ব্যাপক পুলিশি উপস্থিতি দেখা যায়।
মোদির বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্বাই তিন দিনের জন্য সকল উচ্চ বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পাশাপাশি সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত মাসে সরকার-পরিচালিত একটি হাই স্কুলের শিক্ষার্থীদেরকে হিজাব না পরতে বলা হয়। তারপর থেকে উগ্র হিন্দুবাদী গ্রুপগুলো হিজাব পরিহিত ছাত্রীদেরকে রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রবেশ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছে।
কর্নাটক রাজ্যে জনসংখ্যার ১২ ভাগ মুসলিম।
মুসলিম ও হিন্দু শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি
কর্নটাকের মুখ্যমন্ত্রী বি সি নাগেশ এক টুইটারে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে হিজাব বন্ধ করার আদালতের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে স্কুলের ড্রেস কোড করা হয়েছে।
মুসলিম শিক্ষার্থীরা এই নিষেধাজ্ঞার নিন্দা করে আসছে।
স্থানীয় মিডিয়ার খবরে বলা হয়, গত সপ্তাহে উপকূলীয় শহর উদুপিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের উদ্ধৃতি দিয়ে বেশ কয়েকটি স্কুলে হিজাব পরা মুসলিম মেয়েদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা এই নীতির তীব্র বিরোধিতা করে।
উদুপির মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়াল কলেজের কিশোরী ছাত্রী আয়েশা বলেন, হঠাৎ করে কেন তারা বলছে যে আমরা হিজাব পরতে পারব না? তারা এখন কেন শুরু করছে?
তিনি বলেন, হিজাব পরার কারণে এক শিক্ষক তার রসায়ন পরীক্ষা নেননি।
তিনি বলেন, আমরা কোনো ধর্মের বিরোধিতা করি না। আমরা কারো বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি না। আমরা আমাদের অধিকার রক্ষার জন্য লড়াই করছি।
সূত্র : আল জাজিরা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Back to top button