sliderস্থানিয়

রাজাপুরের ভুল চিকিৎসায় জমজ নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনার ৩৬দিন পরে দুদক’র নির্দেশে মামলা

ঝালকাঠি প্রতিনিধি: ঝালকাঠির রাজাপুরের সোহাগ ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসা ও অবহেলার কারণে জমজ ২ নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকালে নিহত শিশুদের পিতা উপজেলার উত্তর বাঘরী গ্রামের মো. উজ্জল খান বাদী হয়ে রাজাপুর থানায় সোহাগ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ সোহাগকে প্রধান আসামি এবং ক্লিনিকের ডাঃ ফরহানা আফরিন সারাহ্কে ২ নম্বর আসামী হিসেবে নামল্লেখ এ মামলা করেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, বাদীর স্ত্রী নুপুর বেগম গর্ভাবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজাপুরের সোহাগ ক্লিনিকে চিকিৎসা করানো হয়। প্রথমে ডা.এম.এইচ. নাঈম এবং পরে ডা.এম.ডি.এইচ. শরীফ ভূঁইয়া আল্ট্রাসনোগ্রাম করে ওষুধ দিয়ে বাড়ি পাঠান। তখন গর্ভে একটি শিশু বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় কিন্তু পরে অবস্থার অবনতি হলে গত ৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে তার স্ত্রীকে আবারও ওই ক্লিনিকে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ফরহানা আফরিন সারাহ তাদের জানান, গর্ভে জমজ সস্তান রয়েছে এবং রোগীকে ভর্তি করে কয়েকটি ইনজেকশন দেন । এর কিছুক্ষণ পর তীব্র ব্যথা শুরু হলে চিকিৎসক সঠিক চিকিৎসা না দিয়ে রোগীকে বরিশালের শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে রেফার করেন বলে অভিযোগ করেন উজ্জল খান। সেখানে ভর্তি করার পর সিজার করে জমজ সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু নবজাতক দুইজনই গুরুতর অসুস্থ থাকায় তাদের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। পরে ৯ সেপ্টেম্বর সকালে প্রথম সন্তান এবং ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে দ্বিতীয় সন্তান মারা যায়।

বাদী অভিযোগ করেন, সোহাগ ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাতা মো. সোহাগ অদক্ষ ডাক্তার নিয়োগ ও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ছাড়াই ক্লিনিক পরিচালনা করে আসছেন। ভুল চিকিৎসার কারণেই আমার সন্তান দুইটি মারা গেছে। রাজাপুর উপজেলায় অনেক বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও দক্ষ চিকিৎসক ছাড়াই চিকিৎসা কার্যক্রম চালাচ্ছে। তারা প্রশাসনের কঠোর নজরদারির দাবি জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি জানতে ক্লিনিক মালিক সোহাগের কাছে গেলে তিনি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং হুমকি দিয়ে বলেন, এই বিষয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করলে খুন জখম করা হবে।

তিনি জানান, ঝালকাঠিতে দুদকের গণ শুনানীতে অভিযোগ করার পর দুদক কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজীর নির্দেশে ঘটনার ৩৬ দিন পর মামলা হয়েছে কিন্তু সঠিক বিচার পাবো কিনা তা আল্লাহই ভাল জানে, বুধবার বিকেলেও ক্লিনিকে পুলিশ ডেকেছিলো, তদন্ত আর স্বাক্ষীর জন্য। তবে মামলা হলেও পুলিশ আসামী গ্রেফতার না করায় বাদীকে মামলা তুলে নিতে ক্লিনিকের মালিক সোহাগ বিভিন্ন লোকজন দিয়ে হুমকি দিচ্ছে এবং ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলেও সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন তিনি।

সোহাগ ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা আহসান হাবিব সোহাগ অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, যারা মামলা করেছে তারা টাকা চেয়েছিলো আর তাদের বলেছিলাম কাল ১১ টায় আসেন। দেখি ডাক্তার কি বলে ভুল হয়েছে কিনা। আর চিকিৎসার কোন ভুল হয়নি, তিনি রোগী দেখার আধা ঘণ্টার মধ্যে রোগীকে বরিশাল পাঠিয়ে দেন। আর সিজার হয়েছে ৬ টার পরে বরিশালে। এখানে মালিকের নামে মামলা হবে কেন?।

ঝালকাঠির সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (রাজাপুর সার্কেল) মোঃ শাহ্ আলম জানান, মামলা রেকর্ড করা হয়েছে, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে, পরীক্ষা নিরীক্ষার কাগজপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে। আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button