
মিজানুর রহমান, শেরপুর প্রতিনিধি: সরকার প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে পরিবেশ বিধ্বংসী আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছ বিক্রি ও রোপণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। সাম্প্রতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় বন-১ শাখার এক গেজেটে এসব গাছের ক্রয়-বিক্রয় ও রোপণ নিষিদ্ধও করা হয়েছে। কিন্তু সরকারি এই নির্দেশনাকে অমান্য করে শেরপুরের সর্বত্র দেদার চলছে আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছ ক্রয়-বিক্রয় ও রোপণ। তার পরও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় নতুন করে এসব নিষিদ্ধ ঘোষিত পরিবেশ দূষণকারী গাছের বাগান সৃজন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ইতোপূর্বে বিভিন্ন নার্সারি মালিককে সরকারিভাবে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে প্রণোদনা দিয়ে এসব গাছ উৎপাদন বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারি সেই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে নার্সারিগুলোয় তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। জানা যায়, সীমান্ত উপজেলা ঝিনাইগাতী, নালিতা বাড়ী ও শ্রীবরদী বন বিভাগ ও কৃষি বিভাগের নিরব ভূমিকার কারণেই সরকারের নিষিদ্ধ ঘোষিত আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছের চারা বিক্রি কার্যক্রম এখনো অব্যাহত রেখেছে নার্সারিগুলো।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছের ক্ষতি সম্পর্কে নার্সারি মালিক ও জনসাধারণকে সচেতন করছেন তারা।
জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসের দেয়া তথ্যমতে, ইতোমধ্যে প্রায় ৭৬ হাজার আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছের চারা ধ্বংস করা হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ৪৬টি নার্সারিকে ৩ লাখ ৪ হাজার টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়েছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ দ্যা নেচার-এর নালিতাবাড়ী উপজেলা শাখার আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম মন্ডল বলেন,
“আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছ পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আমরা এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে অনেক আগে থেকেই সচেতন করে আসছি। কিন্তু প্রশাসনের পদক্ষেপ না নেয়ায় এসব গাছ যত্রতত্র ক্রয়-বিক্রয় ও রোপণ এখনো বন্ধ হচ্ছে না।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক ব্যক্তি বলেন,
“প্রণোদনা পেয়েও নার্সারিগুলো এখনো নিষিদ্ধ গাছ কেন উৎপাদন করছে? আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।”
এদিকে কদিন আগে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আশরাফুল আলম রাসেলের নির্দেশে স্থানীয় কৃষি বিভাগ ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছ বিক্রির সময় বিক্রেতাদের নিকট থেকে জব্দ করে ধংস ও করেছেন।
চারা বিক্রেতাদের ভাষ্য হচ্ছে, এসব গাছের চারা বিক্রি যে নিষিদ্ধ। তা তারা জানেনই না। তাই বিক্রি করেন। এ ব্যাপারে নার্সারি মালিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা কোন বক্তব্য দেননি। স্থানীয় সচেতন মহলের মতে,প্রশাসনের নজরদারি আর সামাজিক সচেতনতাই বন্ধ করতে পারে এসব পরিবেশ বিধ্বংসী ক্ষতিকারক গাছ বিক্রয় ও সৃজন। নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান,“ইতোমধ্যেই কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নার্সারিকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছ উৎপাদন বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব গাছ পরিবেশের জন্য কতটুকু ক্ষতিকর তা বোঝাতে মতবিনিময় করা হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে কৃষি অফিস। এরপরও কোথাও আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছের চারা রোপণ বা ক্রয়-বিক্রয় করা হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা হবে।”
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আশরাফুল আলম রাসেল প্রতিনিধিকে বলেন, ইতোমধ্যেই ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর বাজারেও অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ চারা জব্দ করে ধংস করা হয়েছে এবং এব্যাপারে আমরা দৃঢ়ভাবে দৃষ্টি রাখছি। নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তার ববি সাংবাদিকদের বলেন, “সরকারিভাবে আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাস গাছ নিষিদ্ধ ঘোষণার পর আমরা উপজেলা এবং ইউনিয়নসমূহে মাইকিং করিয়েছি। বিভিন্ন বাজারে, বিশেষ করে পৌর বাজারসমূহে যারা নিষিদ্ধ ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছ বিক্রি করতো তাদের সতর্ক করা হয়েছে। এর পরও কেউ এসব গাছ বিক্রি করলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।”