slider

সাভারে বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে ছোট ভাইয়ের স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ

সোহেল রানা, সাভার (ঢাকা)প্রতিনিধি : ঢাকার সাভারে ব্যাবসায়িক কলহের জের ধরে ছোট ভাই ও তার স্ত্রীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে বড় ভাই ও ভাবির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শিশু সহ চারজন।
শনিবার (২৩ এপ্রিল ) সন্ধ্যায় বিরুলিয়া ইউনিয়নের আককরাইন বউ বাজার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক ও বিরুলিয়া ফাঁড়ির ইনচার্জ মো: আব্দুল কুদ্দুস।
আহতরা হলেন, মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ী থানার চাষী বাড়ি এলাকার মতিউর রহমানের ছেলে মোঃ সবুজ হোসেন(২৮), স্ত্রী একই জেলার বেতকা ইউনিয়নের কান্দাপাড়া গ্রামের মান্নান হাওলাদার এর মেয়ে ও রাজধানীর মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী
তাহমিনা আক্তার (২২),তাদের দেড় বছরের শিশু পুত্র আব্দুল্লাহ সাইম, তাহমিনা আক্তারের ভাই তামিম হোসেন (২০)।
তাদের মধ্যে সবুজ হোসেনের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার এর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। বর্তমানে তাকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বিশ্রামের জন্য থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের আকরাইন বউ বাজার এলাকার আব্দুর রহমানের ভাড়া বাড়িতে থেকে মোঃ সবুজ হোসেন স্বনামধন্য বেসরকারী প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম লিমিটেডের আশুলিয়া থানার ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বেকার বড় ভাই জসিম হাওলাদারের অসহায়ত্ব দেখে গ্রাম থেকে সাভারে নিয়ে আসেন। সাভারে বড় ভাই, ভাবি অন্তরা আক্তার(২৬) ও দুই ভাতিজিকে এনে একই বাড়িতে বাসা ভাড়ার ব্যবস্থা করে বিরুলিয়ার অটবি গেট এলাকায় বাবার নামে মতিউর রহমান এন্টারপ্রাইজ নামকরণ করে নিজের অর্থায়নে একটি রড সিমেন্টের দোকান ধরিয়ে দেন। কথা ছিল ব্যাবসায়িক লভ্যাংশে বড় ভাই জসিম হাওলাদার ৬০ % নিয়ে বাকি ৪০ % ছোট ভাই মোঃ সবুজ হোসেনকে দিবেন। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে এই লভ্যাংশ দেওয়া বন্ধ করে দেন বড় ভাই জসিম হাওলাদার। এতে শনিবার সকালে ও বিকালে দফায় দফায় দুইবার কলহের সৃষ্টি হয়। পরে ‘৯৯৯ ‘ কল পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ। পরে দুই পক্ষকে শান্ত থাকতে বলা হয়।
এ ব্যাপারে মো: সবুজ হোসেন বলেন, বড় ভাইকে ব্যবসা ধরিয়ে দিয়ে এখন আমি নিজেই বিপদে। আমার অর্থে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়েছি। আমাকে ব্যবসার লভ্যাংশের একটি অংশ দেওয়ার কথা। এতদিন ঠিকঠাক থাকলেও গত কয়েক মাস ধরে সে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয়।
আমি এর কারণ জানতে চাইলে সমস্যায় আছি, দিব দিব করে কালক্ষেপণ করতে থাকে। শনিবার সকালে টাকা চাইলে আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সে নিজের দাবি করে। এর প্রতিবাদ করলে সে আমার পুরো পরিবারের উপর হামলা করে। এতে বাঁচার জন্য আমি জরুরী পরিষেবা ‘ ৯৯৯ ‘ এ কল করে পুলিশে খবর দেই। পুলিশ এসে আমাকে সাত দিনের ভিতরে বাসা ছেড়ে দিয়ে কর্মস্থল আশুলিয়া এলাকায় বাসা নেওয়ার পরামর্শ দেন।
সবুজ বলেন, পুলিশ চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ভাই ও ভাবি মিলে আমার স্ত্রীর কোলে থাকা শিশু আব্দুল্লাহ সাইমকে ছিনিয়ে ছুড়ে ফেলে দিয়ে স্ত্রী তাহমিনা আক্তারকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। এতে আমার স্ত্রীর ছোট ভাই তামিম হোসেন ও আমি ঠেকাতে গেলে আমাদেরকেও উপর্যপরি মারতে থাকে। আমাদের চিৎকার শুনে স্থানীয়রা আমাদের উদ্ধার করে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। আমার স্ত্রীর মাথা ফেটে যাওয়ায় বেশ কয়েকটা সেলাই লেগেছে এর আগে অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জসিম হাওলাদারের মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি এখন শ্বশুর বাড়ি গাজীপুরের কোনাবাড়ি যাচ্ছি। আমার ভাই মিথ্যা অভিযোগ করেছে । নিজে বাঁচার জন্য এখন নিজের বউয়ের মাথা নিজেই ফাটিয়ে দিয়ে আমি ও আমার স্ত্রীর উপর দোষ চাপাচ্ছে। আমি কোনাবাড়ী থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা করব।
এ ব্যাপারে তদন্তকারী কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক ও বিরুলিয়া ফাঁড়ির ইনচার্জ মো: আব্দুল কুদ্দুস বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে তারা ‘ ৯৯৯’ এ কল দিয়ে পুলিশে খবর দেয় । বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়ে দুই পক্ষকে সতর্ক করে শান্ত থাকতে বলেছি । কিন্তু আমরা চলে আসার পর তারা এই অঘটন ঘটিয়েছে।
এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button