
শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) সংবাদদাতা: যান্ত্রিক যুগে হারিয়ে গেছে শত শত বছরের পুরানো লাঙ্গল ও বলদে চাষ পদ্ধতি। বর্তমানে যুগে লাঙ্গল ও বলদে জমি চাষের কথা যেন কাল্পনিক কথায় পরিণত হয়েছে। কারণ খুব সহজে মানুষ বিভিন্ন যন্ত্র দিয়ে চাষবাদের কাজ অল্প সময়ে করতে পারছে। তাই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোন পদ্ধতিতে কৃষকরা কোন ধরনের চাষ করতে চাই না। মনাকষা ইউনিয়নের ১১০ বছরের কৃষক আলহাজ ইসহাক আলি বলেন, যান্ত্রিক পদ্ধতিতে আগের মত চাষ ভাল হয় না। আগে আমরা মিস্ত্রী দিয়ে কাঠ দিয়ে লাঙ্গল তৈরী করে নিতাম এবং সে লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করতাম। ফাল্গুন ও চৈত্র মাস আসলেই আমরা শত শত কৃষক লাঙ্গল রিস, গাদা ও লিজানের জন্য তিন খানা কাঠ ও জোয়ালের তৈরীর জন্য এক টুকরা বাঁশ নিযে মিস্ত্রীর বাড়িতে ভিড় করতাম লাঙ্গল তৈরী করে নেয়ার জন্য। অনেক কৃষক নিজে নিজেই লাঙ্গল তৈরীর কিছু কিছু কাজ করতে পারতো। তিনি আরো জানান সে সময় একজন কৃষকের জন্য বড় সম্পদ ছিল একটি লাঙ্গল ও এক জোড়া বলদ। বৃহত্তর দিয়াড় এলাকায় বছরে দুই মৌসুমে ধান ও রবি শস্য উৎপাদন হতো। ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে কৃষকরা ভোররাতে জেগে উঠে বলদকে খাইয়ে অতি সকাল সকাল অনেক কৃষক সারিবদ্ধভাবে লাঙ্গল ও বলদ নিয়ে জমিতে গিয়ে চাষ শুরু করতো এবং প্রায় সারা দিন কৃষি কাজে ব্যস্ত থাকতো । এ সময় দিয়াড় এলাকার প্রায় শতভাগ কৃষকই আউশ ধান পাট, ভুট্টা, চিনা, কোদ্দা, শ্যামা, কাউয়ুন ইত্যাদি ফলস চাষ করতো। অন্যটি কার্তিক মাসের দিকে রবি শস্য চাষের জন্য সূর্য উঠার সাথে সাথে লাঙ্গল বলদ নিয়ে মাঠে গিয়ে জমি চাষ করতো। এ সময় কৃষকরা ঝাকে ঝাঁকে সরিষা,পিঁয়াজ রসুন, মটর, ছোলা, তিল, তিসি, সহ বিভিন্ন ধরনের ফসল বোপন ও রোপন করতো। ৭৫ বছরের কৃষক রাইসুদ্দিন জানান বর্তমানে কালের প্রবাহে আউশ ধানের চাষ প্রায় বিলুপ্তির পথে। আউশ ধানের স্থলে বর্তমানে ইরি ও বোরো ধান চাষ হচ্ছে। তবে পাটের চাষ এখনো আছে। রবি শস্য সবগুলো এখনো চাষ হচ্ছে। তবে লাঙ্গলের পরিবর্তে ট্রাক্টর ও ট্রলি দিয়ে চাষ করা হচ্ছে। কৃষক মিজানুর রহমান জানান, যান্ত্রিক যুগে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ অনেকটা সহজ হওয়ায় কৃষক সমাজ যন্ত্রের সাহায্যে সব ধরনের চাষাবাদ করছে। আগের যুগের লাঙ্গল ও বলদ দিযে জমি চাষ করার কথা আমরাও শুনেছি। কিন্তু এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। কৃষক ফজলুর রহমান বলেন,রবি শস্যের ক্ষেত্রে সবই আগের মত আছে। শুধু জমি চাষ করাটা লাঙ্গল ও বলদের পরিবর্তে ট্রাক্টর ও ট্রলি দিয়ে চাষ করা হচ্ছে। শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার নয়ন মিঞা বলেন, বর্তমানে যান্ত্রিক যুগে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে স্বল্প খরচে ও অল্প পরিশ্রমে অতিরিক্ত সহজ পদ্ধতিতে জমি চাষ করার সযোগ হওয়ায় কৃষক সমাজ আরা অগের মত লাঙ্গল ও বলদ দিয়ে চাষ করা হতে ধীরে ধীরে বিমুখ হচ্ছে। তবে আগের যুগের লাঙ্গল ও বলদ দিয়ে চাষ পদ্ধতি খারাপা ছিল না। তিনি আরো বলেন এখনো কোন কোন কৃষক স্মৃতি স্বরুপ লাঙ্গল ও বলদ দিযে কিছু কিছু জমি চাষ করছে।




