
কামরুল ইসলাম, রাংগামাটি পতিনিধি: রাঙামাটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম: নানা ভাষা, সংস্কৃতি ও ধর্মের মানুষের ঐক্যে গড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্র রাঙামাটি আবারও প্রমাণ করলো যে, এটি সত্যিই সম্প্রীতির দুর্গ। সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক সভা থেকে জেলার রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সুশীল সমাজের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ একযোগে যে শান্তির বার্তা দিয়েছেন, তা আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কঠিন চীবর দান উৎসবকে সামনে রেখে মানুষের মনে নতুন করে আস্থার জন্ম দিয়েছে। জেলার সার্বিক নিরাপত্তা এবং সুদীর্ঘকালের এই সাম্প্রদায়িক বন্ধনকে অক্ষুণ্ণ রাখার বিষয়ে সভায় কঠোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।
জেলা প্রশাসক মো: হাবিব উল্লাহ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভাটি কেবল একটি প্রথাগত আইন-শৃঙ্খলা বৈঠক ছিল না; এটি ছিল একটি দৃঢ় সংকল্পের ঘোষণা। সাম্প্রতিক সময়ে পার্শ্ববর্তী খাগড়াছড়িতে ঘটে যাওয়া কিছু স্পর্শকাতর ঘটনার প্রেক্ষাপটে এই সভার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। সভায় উপস্থিত সকলে একবাক্যে স্বীকার করেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম সবসময়ই সংহতি ও সহাবস্থানের প্রতীক। তবে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গুজব ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে এখানকার শান্তি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চালায়। বক্তারা কঠোরভাবে বলেন, এসব অপচেষ্টার মূল লক্ষ্যই হলো দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করা।
সভায় নেতৃবৃন্দ দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করেন যে, এই অশুভ শক্তির মোকাবেলা করার জন্য কেবল প্রশাসনের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। প্রতিরোধ হতে হবে সম্মিলিত ও ঐক্যবদ্ধ। রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয় গুরু, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক এবং সাধারণ জনগণকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়। রাঙামাটিতে কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ড বা বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না—এমন কঠোর বার্তা দেওয়া হয় সভা থেকে। কেউ পরিস্থিতি সৃষ্টির দুঃসাহস দেখালে, সম্মিলিতভাবে তা প্রতিহত করার কঠোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন সকলে।
জেলা প্রশাসক মো: হাবিব উল্লাহ তাঁর বক্তব্যে এই সংহতির বার্তাকে আরও জোরদার করেন। তিনি বলেন, “রাঙামাটি সবসময় শান্তি ও সম্প্রীতির জেলা হিসেবে পরিচিত। আমরা চাই আগামী দিনগুলোতেও সব সম্প্রদায়ের মানুষ মিলেমিশে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদযাপন করবেন।” তিনি জানান যে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বদা প্রস্তুত।
তবে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে দেন যে, শুধু প্রশাসন নয়, সাধারণ মানুষের সহযোগিতাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।” তাঁর এই বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, স্থায়ী ও স্থিতিশীল শান্তি নিশ্চিত করতে হলে কেবল প্রশাসনিক কড়াকড়ি যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং সামাজিক সচেতনতা। গুজব বা বিভ্রান্তিকর তথ্য পেলে দ্রুত প্রশাসনের নজরে আনার এবং নিজেদের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানান তিনি।
আসন্ন দুর্গাপূজা ও কঠিন চীবর দান উৎসবের আগে এই ঐকমত্যের ঘোষণা রাঙামাটির মানুষের মাঝে এক নতুন আশার সঞ্চার করেছে। এটি পার্বত্য চট্টগ্রামে বহুধা-বৈচিত্র্যের মাঝে বিদ্যমান গভীর বন্ধন ও সংহতির প্রতিচ্ছবি। যেখানে ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে সবাই এক অভিন্ন লক্ষ্যের জন্য একত্রিত হন তা হলো শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা।
রাঙামাটিবাসী প্রত্যাশা করে যে, এই সংহতি ও সম্মিলিত সতর্কতা বজায় রেখে তারা আবারও প্রমাণ করবে যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম সত্যিই একটি শান্তির আলোকবর্তিকা। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে, উৎসবের আনন্দ কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা ছাড়াই নির্বিঘ্নে সকল মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে।