
প্রেস বিজ্ঞপ্তি: ঢাকা, আজ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন (BKF), এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (APMDD) এবং ওবিনিগ (UBINIG)-এর যৌথ উদ্যোগে ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস বনাম বিশ্ব খাদ্যহীন দিবস’ উপলক্ষে একটি সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশের মূল প্রতিপাদ্য ছিল- “খাদ্যের অধিকার, জলবায়ু ন্যায় ও সার্বভৌম কৃষির জন্য অন্যায় করব্যবস্থা, ঋণনির্ভর নীতি ও কর্পোরেট দখল বন্ধ করতে হবে।”
সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি কমরেড বদরুল আলম এবং পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক কমরেড জায়েদ ইকবাল খান। সমাবেশে বক্তৃতা করেন উবিনিগ এর উপদেষ্টা ড.এমএ সোবহান ও পরিচালক জনাব জাহাঙ্গীর আলম জনি, জাতীয় হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হোসাইন, নোয়াখালী গ্রাম উন্নয়ন সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক আবদুল আউয়াল, গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা আমানুর রহমান, ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশের নেতা ইকবাল ফারুক, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এ.এ.এম. ফয়েজ হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সভানেত্রী শামীম আরা, প্রগতিশীল কৃষক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ বিশ্বাস, রেডিমেড গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি লাভলী ইয়াসমীন, সম্মিলিত শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুল হাসান নয়ন, মাদারল্যান্ড গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন, বাংলাদেশ ন্যশনাল লেবার ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সরকার গ্লোবাল ল থিনকার সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক স্মিতা রাওম্যান, কসমসের সভাপতি মেহনাজ মালা, দলিত নারী উন্নয়ন সংস্থার সুনু রানী দাস, সিপিআরডি-র কর্মকর্তা আল-এমরান এবং বাংলাদেশ কিষাণী সভার নেত্রী আশা মণি প্রমুখ।
সমাবেশের সভাপতি কমরেড বদরুল আলম তাঁর বক্তব্যে বলেন,“আজকের বিশ্ব খাদ্য দিবস প্রকৃতপক্ষে ‘বিশ্ব খাদ্যহীনতার’ বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করছে। বাংলাদেশের কৃষক উৎপাদক হলেও খাদ্যের অধিকার থেকে বঞ্চিত। সরকার এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মিলিতভাবে কৃষি, জ্বালানি ও খাদ্য নীতিকে কর্পোরেট মুনাফার পথে ঠেলে দিচ্ছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের পরামর্শে সরকার তেল, গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে লোনের কিস্তি পরিশোধ করা যায়। এর ফলে সাধারণ শ্রমিক, কৃষক ও মেহনতি মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বেড়ে যাবে। রাষ্ট্রের বাজেট কৃষক ও প্রান্তিক মানুষের স্বার্থে নয়, বরং বহুজাতিক কর্পোরেটের স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলছি–এই অন্যায় ঋণনির্ভর ও কর্পোরেট-নির্ভর উন্নয়ন নীতি বন্ধ করতে হবে। খাদ্য উৎপাদন, বাজার ও জমির উপর জনগণের সার্বভৌম নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। করনীতি হতে হবে ন্যায়ভিত্তিক, যাতে ধনী ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাপ্য কর দেয় এবং কৃষক-শ্রমিকের উপর অন্যায় করের বোঝা চাপানো না হয়। একই সঙ্গে জলবায়ুর ন্যায় নিশ্চিত করতে হবে–যাতে ক্ষুদ্র কৃষকরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আমাদের লক্ষ্য একটি পরিবেশ-প্রতিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা, যেখানে রাসায়নিক সার ও বিষের পরিবর্তে স্থানীয় বীজ, জৈব সার ও টেকসই চাষাবাদ প্রচলিত হবে। খাদ্যকে পণ্য নয়, মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।”
সমাবেশে অনলাইনে বক্তব্য রাখেন এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (APMDD)-এর সমন্বয়ক লিডি ন্যাকপিল, যিনি বলেন,“আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক বিশ্বের ধনীতম দেশগুলোর জোট জি-৭-এর প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে–যারা জলবায়ু সংকট ও ঋণ বিপর্যয়কে আরও গভীর করছে। এখনই সময় এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণনির্ভর সমাধান প্রচার বন্ধ করার, বিশেষ করে ধনী দেশগুলোর কারণে সৃষ্ট জলবায়ু সংকটের মতো ইস্যুতে। তারা বেসরকারিকরণ ও বাণিজ্য উদারীকরণের মতো নবউদারনৈতিক নীতি ও শর্ত আরোপ করছে, যা জনগণের অধিকার লঙ্ঘন করে এবং জলবায়ু সংকটকে আরও তীব্র করে তুলছে, অথচ এতে বিপুল মুনাফা পাচ্ছে বহুজাতিক কর্পোরেট ব্যবসাগুলো।”
ওবিনিগ-এর পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জনি এবং কৃষি গবেষক এমএ সোবহান বীজ ও কৃষি স্বাধীনতা নিয়ে বলেন, “বীজ এখন বহুজাতিক কর্পোরেটের মালিকানাধীন। কৃষকরা প্রতিটি মৌসুমে বীজ কিনতে বাধ্য, যা তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্বাধীনতা হরণ করছে। আমাদের দাবি–বীজের স্বাধিকার কৃষকের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে। কৃষক যেন নিজের স্থানীয় বীজ, ঐতিহ্যভিত্তিক চাষাবাদ ও টেকসই চাষাবাদ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারে। পরিবেশ-সুরক্ষিত বীজ ব্যবহার করে, রাসায়নিক ও জিএমও বীজের পরিবর্তে টেকসই কৃষি চর্চা নিশ্চিত করা সম্ভব। এতে খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু ন্যায় ও সার্বভৌম কৃষি প্রতিষ্ঠা হবে।”
বক্তারা বলেন, খাদ্য সংকট শুধু উৎপাদনের নয়, এটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের ঋণনীতি, করবহুল বৈষম্যমূলক অর্থনীতি ও জলবায়ুবিনাশী উন্নয়ন মডেল এই সংকটের মূল কারণ। বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার পরিবর্তে খাদ্য সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে হবে–যেখানে কৃষক, নারী ও স্থানীয় সম্প্রদায় নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবে কীভাবে, কার জন্য এবং কোন পদ্ধতিতে খাদ্য উৎপাদিত হবে। বক্তারা আহ্বান জানান, খাদ্য সার্বভৌমত্ব, পরিবেশ-প্রতিবেশবান্ধব কৃষি, জলবায়ু ন্যায় ও ন্যায়সঙ্গত করনীতি নিশ্চিত করতে কৃষক, শ্রমিক ও নারী জনগণকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে অংশ নিতে হবে।