আন্তর্জাতিক সংবাদশিরোনাম

ফ্লোরিডার সমকামী নাইটক্লাবে হামলায় ৫০ জন নিহত

যুক্তরাষ্ট্রের অরল্যান্ডো শহরে সমকামীদের একটি নাইট ক্লাবে বন্দুকধারী সন্ত্রাসীর হামলায় কমপক্ষে ৫০ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ৫৩ জন। নিহতের বিষয়টি পুলিশ নিশ্চিত করে জানিয়েছে, ওই হামলাকারীও নিহত হয়েছেন। পালস নামে ওই ক্লাবটিতে স্থানীয় সময় শনিবার রাতে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

শুক্রবার অরল্যান্ডোর এক কনসার্টে গুলিতে ২২ বছর বয়সী পপসঙ্গীত শিল্পী ক্রিস্টিনা গ্রিমি নিহত হওয়ার একদিন না পেরোতেই নৈশক্লাবে গুলিবর্ষণে প্রাণহানির ঘটনা ঘটল।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক ধারণায় এটিকে সন্ত্রাসী হামলায় মনে হচ্ছে। এটি স্থানীয় সন্ত্রাসী নাকি আন্তর্জাতিক কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী করেছে তারও তদন্ত শুরু হয়েছে। এফবিআই ধারণা করছে, এটি চরমপন্থীদের দ্বারা ঘটতে পারে।

শনিবার রাত ২টার দিকে ওরলান্ডোর পালস নাইটক্লাবে হামলা চালায় বন্দুকধারী। হামলার সময় সমকামীদের ওই ক্লাবটিতে ১০০ জনেরও বেশি মানুষ অবস্থান করছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এই ক্লাবটিই শহরে সমকামীদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় হিসেবে পরিচিত।

হামলার পরে ক্লাবটি থেকে বেশকিছু মানুষ দৌড়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও অনেকেই ভেতরে আটকা পড়েন। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, রাত ২টায় বন্দুকধারী ক্লাবে প্রবেশ করেই ছাদ ও ভিড়ের দিকে গুলি ছুড়তে শুরু করেন।

এক কর্মকর্তা তাকে প্রতিহতের চেষ্টা করেন। ক্লাবের বাইরে তার সঙ্গে গোলাগুলিতে লিপ্ত হন ওই কর্মকর্তা। এক পর্যায় দৌড়ে ওই ক্লাবে ঢুকে পড়েন বন্দুকধারী। এরপর ক্লাবের ভেতরে আটকে পড়াদের কাছ থেকে ফোন আসছিল। অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে একটি সাঁজোয়া যান দিয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর বন্দুকধারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

ওই ক্লাবে থাকা এক ব্যক্তি রিকার্ডো আলমোডোভার পালস ক্লাবের ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, স্থানীয় সময় রাত ২টার দিকে বন্দুকধারী গোলাগুলি শুরু করেন। তিনি লেখেন, ‘ওই সময় যারা নাচছিলেন এবং বারের কাছে যারা ছিলেন সবাই মাথা নিচু করে ফেলেন। আর আমরা যারা বারের পেছনের দরজার কাছে ছিলাম তারা কোনোমতে ক্লাব থেকে বের হয়ে দৌড় দেই।’

আরো একজন প্রত্যক্ষদর্শী অ্যানথনি টরেস তখন বলেন, তিনি মানুষকে চিৎকার করতে শুনেছেন, নাইটক্লাবের অনেকে হয়তো নিহত হয়েছেন। নাইট ক্লাবটিতে শতাধিক লোক আনন্দ করছিলেন এমন সময় ওই হামলাকারী হামলা চালায়।

প্রাথমিক খবরে জানা গেছে অন্তত ২০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গুলির পর বেশ কয়েকজনকে পণবন্দী করে রাখে হামলাকারী। আশঙ্কা করা হচ্ছিল, হামলাকারীর কাছে বোমা রয়েছে। এরপর পুলিশ ক্লাবটি ঘিরে রাখে ও আহতদের হাসপাতালে পাঠায়। ভোরে অভিযান চালিয়ে হামলাকারীকে হত্যা করে এবং আটকে পড়াদের মুক্ত করে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, পণবন্দীদের মুক্ত করতে অভিযানের সময় গুলিতে বন্দুকধারী নিহত হন। অভিযানের সময় বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটায় পুলিশ। রোববার সকালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ নিহতের সংখ্যা জানিয়েছে। আগে জানানো হয়েছিল হামলায় ২০ জন নিহত ও অপর ৪২ জন আহত হয়েছেন।

হামলাকারী অ্যাসল্ট রাইফেল, হ্যান্ডগান ও একটি রহস্যজনক বস্তুসহ হামলা চালান। পুলিশ জানায়, ঘটনার প্রায় তিন ঘণ্টা পর তারা পালস ক্লাব নামে ওই নাইট ক্লাবটির ভেতরে ঢুকে আক্রমণকারীকে হত্যা করে। পুলিশ আরো জানায়, বন্দুকধারী লোকটির হাতে অ্যাসল্ট রাইফেল ও হ্যান্ডগান ছিল এবং সে নাইটক্লাবের ভেতরে অনেককে পণবন্দী করেছিল। নিহত হওয়ার আগে পুলিশের সাথে তার গুলিবিনিময় হয়। পুলিশ বলছে, বন্দুকধারী একা ছিল এবং সে স্থানীয় কেউ নয়। তারা জানেন না, হামলাকারী একা নাকি তার সঙ্গে কোনো গোষ্ঠী জড়িত আছে।

শনিবার অরল্যান্ডোতে লাইভ কনসার্টে গুলির রেশ কাটতে না কাটতেই এ হামলা চালানো হলো। একদিন আগেই ফ্লোরিডাতে এক গায়িকাকে গুলি করে হত্যা করে এক দুর্বৃত্ত। পরে সে নিজেও আত্মহত্যা করে। অরল্যান্ডোতে লাইভ কনসার্টের স্থান থেকে পালস নাইট ক্লাবের দূরত্ব চার মাইল।

পুলিশ বলছে, এটি ‘সন্ত্রাসী হামলা’ ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এই হামলায় অন্তত আরো ৫৩ জনের মতো আহত হয়েছেন। অরল্যান্ডোর পুলিশ প্রধান জন মিনা বলেন, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা তারা বলতে পারছেন না। পরে জানা যায়, কমপক্ষে ৫০ জন নিহত হয়েছেন। ৫৩ জনকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

পুলিশ হামলাকারীর পরিচয় প্রকাশ করেছে। তার নাম ওমর মতিন (২৭) এবং তার বাড়ি ঘটনাস্থল থেকে ১০০ মাইল দূরে ফ্লোরিডার সেইন্ট লুসিয়াতে। ওমর মতিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার পরিবার আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসে।

টুইটারে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে, ফ্লোরিডার অরল্যান্ডো শহরে অবস্থিত ওই ক্লাবটির বাইরে আহত ব্যক্তিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। জরুরি সেবা প্রদানের বিভিন্ন যানবাহন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছে।

নৈশক্লাবের ভেতর থেকে বেঁচে আসা ক্রিস্টোফার হ্যানসেন বলেন, ‘এটা মর্মান্তিক।’ তিনি বলেন, একের পর এক গুলির শব্দ শুনতে পান তিনি। সব খানে শুধু রক্তাক্ত দেহ পড়েছিল। পার্কিং লটে সেগুলোতে লাল, হলুদ ট্যাগ লাগানো হচ্ছিল, যাতে বোঝা যায় কার দ্রুত সহায়তা দরকার এবং কার অবস্থা ততটা খারাপ নয়। সব জায়গায় শুধু রক্ত আর রক্ত।’ ঘটনার সময় নিজেদের ফেসবুক পেজে ক্রেতাদের ‘বাইরে বেরোনোর’ এবং ‘দৌড়ে দূরে সরে যাওয়ার’ পরামর্শ দিয়েছিল নৈশক্লাবটি।

সেখানে রিকার্ডো আলমোদোভার নামের এক ব্যক্তি লেখেন, ‘নাচের ফ্লোরে ও বারে থাকা লোকজন মেঝেতে শুয়ে পড়েন। আমাদের মধ্যে যারা বারের কাছে ও পেছন দিকে ছিলাম এমন কয়েকজন পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে আসতে পেরেছি, তারপর দৌড় দিয়েছি।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে শেয়ার করা একটি ভিডিও ফুটেজে ঘটনাস্থলে জরুরি বিভাগের কয়েক ডজন গাড়ি এবং ফুটপাতে আহতদের চিকিৎসা দিতে দেখা যায়।

স্বজনদের খোঁজ জানতে স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে উদ্বেগ নিয়ে জড়ো হয়েছেন অনেকে। এক নারী বলেন, ক্লাবের ভেতর থেকে ফোন করার পাশাপাশি এসএমএস পাঠিয়েছিলেন তার মেয়ে, যার বাহুতে গুলি লেগেছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button