slider

ঠাকুরগাঁওয়ে সুজয়কে নিয়ে দিশেহারা পরিবার

মোঃ মজিবর রহমান শেখ, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : দুই বছর পাঁচ মাস আগে পৃথিবীর আলো দেখেছে সুজয় পাল। জন্মের পর থেকে আচরণের হওয়ায় আদর করে দাদী ডাকনাম রেখেছিলেন ঠান্ডি৷ দিন বাড়তে বাড়তে সকলের আদরের পাত্র হয়ে উঠে সে৷ তবে এক বছর যেতে না যেতেই সে আদরের রং বদলায়। প্রসাবে সমস্যা ও কিডনিতে সমস্যা দেখা দেয় সুজয় পালের৷ অভাবের সংসারে জন্ম তার। বাবার দিন আনে দিন খাওয়াতে চলে সংসারের ভরণপোষণ। তার মধ্যে স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা নিলেও কাজে আসছেন না তার৷ বাড়িতে থাকা গরু বিক্রি করে সুজয়কে নিয়ে যাওয়া হয় বিভাগীয় শহরে চিকিৎসকের কাছে। দীর্ঘ দিন চিকিৎসা করে খানিকটা সুস্থ হয়ে বাসায় নিয়ে আসা হয় সুজয়কে। কিছুদিন যেতে না যেতে আবার অসুস্থতা দেখা দেয় তার। ধারদেনা করে কোন মতো টাকা সংগ্রহ করে আবার নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসকের কাছে৷ সুস্থ হয়ে উঠছেনা সুজয় পাল। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। দেশে চিকিৎসা করাতে হিমশিম খেতে হয়েছে পরিবারকে৷ ক্রমশ প্রসাবের সাথে রক্ত ও শরীর শুকানোর সমস্যায় বাড়ছে জটিলতা। অপরদিকে অর্থ যোগাড় করে ছেলেকে বিদেশে নিয়ে যেতে দিশেহারা পরিবার৷ অর্থ যোগান দিতে ছুটছেন সরকারি দপ্তর, রাজনৈতিক নেতা সহ বিত্তবানদের দ্বারে দ্বারে৷

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের সুবাস পাল ও রুপালী রাণী দম্পতির ছোট সন্তান সুজয় পাল৷ পেশায় কাঠমিস্ত্রীর সহযোগী হিসেবে কাজ করেন সুবাস পাল। ছেলেকে সুস্থ করাতে চিকিৎসার অর্থের যোগান দিতে ছুটছেন৷ প্রতিনিয়ত মানুষের দ্বারে দ্বারে ছুটলেও পাচ্ছেন না তেমন অর্থ৷ তবে স্বপ্ন দেখছেন বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে সুস্থ হয়ে ফিরবে প্রিয় সন্তান সুজয় পাল৷ সুজয় পালের দাদা দ্বিজেন পাল বলেন, আমার নাতিটার মুখটা দেখলেই খুব খারাপ লাগছে৷ কি করব না করব কোন কিছু বুঝতে পারছি না৷ আমার ছেলের হাতটা ছাড়া কিছু নাই। সব শেষ করে ফেলছে৷ এখন নাকি বিদেশ নিয়ে যেতে হবে৷ যদি আপনারা সহযোগিতা করেন তাহলে আবার সুস্থ হবে নাতিটা৷ প্রতিবেশী সাবিত্রী পাল বলেন, সুজয়ের বাবা দিন আনে দিন খায়৷ দেশে চিকিৎসা করাতে গিয়ে তারা নিঃস্ব হয়ে গেছে৷ আমরা প্রতিবেশী হিসেবে যতটুকু পেরেছি সহযোগিতা করেছি৷ এখন সরকার যদি সহযোগিতা করে বা সমাজের যারা সামর্থ্যবান আছেন তারা সহযোগিতা করলে ছেলেটা সুস্থ হবে৷ সুজয়ের মা রুপালী রাণী বলেন, জন্মের এক বছর পর থেকে সমস্যা শুরু হয়। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার পর উনি বললেন এটা নাকি জন্মগত কিডনির সমস্যা। এখন আমাদের যা ছিল সবদিয়ে চিকিৎসা করলাম। বাচ্চাটা সুস্থ হচ্ছে না। দিন দিন আরো শুকায় যাচ্ছে৷ প্রসাবের রাস্তা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। ডাক্তার বিদেশে নিয়ে যেতে বলছে৷ আমাদের তো সামর্থ্য নাই। কেউ সহযোগিতা না করলে আমার কলিজার টুকরাটাকে সুস্থ করতে পারব না৷ আপনার আমার ছেলের পাশে দাড়ান। আবেগাপ্লুত হয়ে সুজয়ের বাবা সুবাস পাল বলেন, পাঁচ মাস ধরে চিকিৎসা করাচ্ছি৷ কোন ধরনের সমাধান পাচ্ছি না। দিন দিন কিডনির জটিলতা আরো বেড়ে যাচ্ছে। রংপুরে যে ডাক্তারকে দেখায় উনি আমার কোন ভিজিট নেননি। ঔষধ আর পরীক্ষা করাতে সব খরচ হয়ে গেছে। ডাক্তাররা বিভিন্ন ভাবে আমাকে সহযোগিতা করেছেন৷ উনারা সবাই মিলে বসেছিলেন আমার ছেলের সমস্যা নিয়ে৷ পরে আমাকে বলেছেন যাতে করে খুব দ্রুত ভারতে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করায়৷ প্রায় ৭-৮ লাখ টাকার মত খরচ হবে। আমি এত টাকা কোথা থেকে পাব৷ দিন আনে দিন খায়। যা জমা ছিল সব শেষ হয়ে গেছে৷ প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছি সহায়তার জন্য। তবুও জুটছেনা চিকিৎসার টাকা। যদি আপনারা আমার ছেলেটার সুস্থতার জন্য সহযোগিতা করেন তবেই আমার ছেলে পৃথিবীতে সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকতে পারবে৷ সকলে আমার ছেলের পাশে দাড়াবেন৷ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্ম্মন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব সহায়তা করা হয়েছে৷ আমরা আরো সহযোগিতা করার জন্য চেষ্টা করছি৷ আপনারাও এগিয়ে আসুন৷

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. শামসুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আসলে বেদনাদায়ক। সুজয়ের চিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব সহায়তা করা হবে৷ সকল বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান করছি৷

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button